জাতীয়

সাবেক সেনা কর্মকর্তা নিহতের ঘটনায় তদন্ত কমিটির কাজ আজ শুরু

কক্সবাজারের টেকনাফে মেরিন ড্রাইভ রোডে পুলিশের গুলিতে  অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান নিহত হওয়ার ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির কাজ আজ মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হচ্ছে।

তদন্ত কমিটির প্রধান চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মিজানুর রহমান আজ সকালে কক্সবাজারে এসে পৌঁছেছেন। আজ দুপুরে কমিটির অন্য সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করবেন বলে জানিয়েছেন।  তিনি জানান, এ ঘটনার একটি নিরপেক্ষ এবং স্বচ্ছ তদন্ত করা হবে। তবে তিনি তদন্ত কমিটির কাজের বিস্তারিত জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন।

চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মোহাম্মদ মিজানুর রহমানকে আহ্বায়ক করে পুনর্গঠিত এই তদন্ত কমিটিকে সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ।

এই কমিটিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের একজন প্রতিনিধি সদস্য হিসেবে থাকবেন, যাকে মনোনীত করবেন ১০ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ও কক্সবাজারের এরিয়া কমান্ডার।

পুলিশ বিভাগের পক্ষ থেকে এই কমিটিতে সদস্য হিসেবে থাকবেন চট্টগ্রাম রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শকের (ডিআইজি) মনোনীত অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ জাকির হোসেন। এ ছাড়া কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহা. শাজাহান আলী এই তদন্ত কমিটিতে সদস্য হিসেবে থাকবেন, যাকে শুরুতে এই কমিটির নেতৃত্বে রাখা হয়েছিল।

এ কমিটি সরেজমিনে তদন্ত করে ঘটনার কারণ ও উৎস অনুসন্ধান করবে এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে করণীয় সম্পর্কে মতামত দেবে।

গত শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। এ ঘটনায় টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের দায়িত্বরত পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ সবাইকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। গত রোববার দুপুরে তাঁদের প্রত্যাহার করে কক্সবাজার জেলা পুলিশ লাইনে নিয়ে আসা হয়েছে। কিন্তু এখনো বহাল তবিয়তে আছেন টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাস।

সিনহা রাশেদ খান ২০১৮ সালে সেনাবাহিনী থেকে স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করেন। সেনাবাহিনীতে থাকার সময় তিনি স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সেও (এসএসএফ) দায়িত্ব পালন করেন। এসএসএফের সদস্য হিসেবে তিনি প্রয়াত রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরাপত্তায়ও দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি মুক্তিযোদ্ধা ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রাক্তন উপসচিব প্রয়াত মো. এরশাদ খানের ছেলে। তিনি রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ থেকে ২০০১ সালে এইচএসসি পাস করেন। তিনি গত ৩ জুলাই ঢাকা থেকে স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া বিভাগের তিনজন ছাত্রছাত্রীসহ ইউটিউব চ্যানেলের জন্য একটি ট্রাভেল ভিডিও তৈরি করতে কক্সবাজার আসেন। প্রায় এক মাস তাঁরা কক্সবাজারের বিভিন্ন স্থানে শুটিং করেন।

তাঁর মৃত্যুর ব্যাপারে গত রোববার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল রাজধানীর ধানমণ্ডিতে সাংবাদিকদের বলেন, ‘কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কে পুলিশের গুলিতে সেনাবাহিনীর একজন অবসরপ্রাপ্ত মেজর নিহতের ঘটনায় দুর্ঘটনা হোক বা যা-ই বলেন, ঘটনা তো একটা ঘটেছে। এটা অস্বীকারের কিছু নেই। সরকার এর সঠিক কারণ খুঁজে সামনে এনে দোষীকে শাস্তি দিতে বদ্ধপরিকর।’

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সাবেক সেনা কর্মকর্তা নিহতের ঘটনায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তিন সদস্যের একটি নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি (গতকাল ওই কমিটি পুনর্গঠন করে চার সদস্যের করা হয়) গঠন করা হয়েছে। যেখানে কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে একজন প্রতিনিধি, পুলিশ বাহিনীর পক্ষ থেকে একজন প্রতিনিধি এবং সামরিক বাহিনীর একজন প্রতিনিধি রয়েছেন। তাঁদের সময় নির্ধারণ করে দিয়েছি আমরা। তাঁরা বস্তুনিষ্ঠ তদন্ত প্রকাশের পরই এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানানো যাবে। এর আগে এ বিষয়ে মন্তব্য করলে তা তদন্তের ওপর প্রভাব ফেলবে। তাই এখনই এ বিষয়ে কিছু বলতে চাই না।’

আসাদুজ্জামান খাঁন আরো বলেন, ‘দুর্ঘটনা হোক বা যা-ই বলেন, ঘটনা তো একটা ঘটেছে। এটা অস্বীকারের কিছু নেই। সরকার এর সঠিক কারণ খুঁজে সামনে এনে দোষীকে শাস্তি দিতে বদ্ধপরিকর। আপনারা সাংবাদিকরা যতদূর শুনেছেন, তা আপনাদের মধ্যে থাক। আমি যা শুনেছি, তা আমার মধ্যেই থাকুক। তদন্তের আগে এ নিয়ে একটি কথাও বলতে চাচ্ছি না।’

অভিযুক্ত সেই পুলিশ সদস্যকে বরখাস্ত করা হয়েছে কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমি যতদূর জানি, এখনো তাকে বরখাস্ত করা হয়নি। তবে এ নিয়ে আলোচনা চলছে। এ বিষয়টিও তদন্ত কমিটির ওপর নির্ভর। বস্তুনিষ্ঠ তদন্তের পর যা বেরিয়ে আসবে, তার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সে কতখানি সঠিক বা ভুল করেছে, তা তদন্তের পর জানা যাবে।’ এরপর দেশের নিরাপত্তা বাহিনীর প্রশংসা করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

মন্ত্রী বলেন, ‘দেশের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা যেভাবে কাজ করে যাচ্ছেন, তা অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে। তাঁরা কাজ করছেন বলেই দেশ স্বাভাবিক অবস্থায় আছে। আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত।’

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Back to top button