কাদের মাথায় তুলে রাখছি আমরা!

পরীমনি যেদিন জামিন পেলেন (মানে গতকাল) সেদিন বাংলদেশের কৃতি বিজ্ঞানী ফেরদৌসী কাদরী এশিয়ার নোবেলখ্যাত ম্যাগসেসে পুরস্কার পেলেন। তারা দুজনই নারী।
আজ ফেসবুকে শুধুই পরীমনি- লেখায়, ছবিতে, প্রোফাইল পিকচারে, স্টোরিতে মেহেদী রাঙা হাত আর হুডখোলা গাড়িতে বিজয়ীর বেশে পরীমনি। অথচ ফেরদৌসী কাদরী ফেসবুকে প্রায় নেই বললেই চলে।
যিনি দেশের জন্য, নারী সমাজের জন্য এতো বড় কৃতিত্ব বয়ে আনলেন তাকে নিয়ে কোনো উচ্ছ্বাস নেই! বিজ্ঞানে কী তার অবদান, তার কাজ-ভাবনা দেশের তথা বিশ্বের মানুষের কল্যাণে কী ভূমিকা রাখবে তা নিয়ে কোনো আলোচনা নেই।
হাবভাব দেখে মনে হচ্ছে পরীমনি বিশ্বজয় করেছেন। কিন্তু একটু ভেবে দেখুন তো বিশ্বজয় আসলে কে করেছেন?
আজ সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে কারা পাদপ্রদীপের আলোয় আসছে তা ভেবে সত্যিই শঙ্কিত হতে হয়। একসময় পরিচিত হতে হলে, সেলিব্রিটি হতে হলে কতো সাধনা করতে হতো, শিল্প-সাহিত্যসহ সব অঙ্গনেই কতো গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখলেই শুধু দেশব্যাপী পরিচিতি পাওয়া যেতো।
আর আজ? আজ কারা পরিচিতি পাচ্ছে? কীভাবে পাচ্ছে?
আজ জাতির চর্চার বিষয় অনন্ত জলিল, হিরো আলম, সেফুদা, সাহেদ, আনভীর, ডেসটিনি, ইভ্যালি, পরীমনি, পিয়াসা, মৌ।
এই জাতির ডেসটিনি কী আসলে?
আর মিডিয়াগুলোও হয়েছে একেকটা! জনগণ যা খায় তাই খুব আচার-ঝাল-মরিচ মেখে জনগণের পাতে তুলে দিতে ব্যস্ত। জনতার রুচি তৈরিতে যাদের ভূমিকা রাখার কথা তারা এখন রিডারশিপ, ভিউ, হিট বাড়ানোর মাধ্যমে পুঁজি করার মতলবে জনতার রুচিতে খাবার পরিবেশনে ব্যস্ত, জনতার হাতের তালু চেটেই খাবারের স্বাদ নিতে ব্যস্ত বেশিরভাগ মিডিয়া। এদের গণমাধ্যম বলার সুযোগ কতটা?
এই দেশে কি ভবিষ্যতে কোনো ভালো বিজ্ঞানী, ভালো গবেষক, ভালো অর্থনীতিবিদ- এসব তৈরি হবে! নাকি তারা পরীমনি, সেফুদা, হিরো আলম, অনন্ত জলিল হতে চাইবে?
লেখক: অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।