সংস্কৃতি

বগুড়ায় ২০ হাজার শ্রমিকের হাতে তৈরী হচ্ছে প্রাচীন ঐতিহ্যের গহনা

অলঙ্কার নারীর সৌন্দর্য বাড়ায়। তবে কেবল নারীরা নয় পুরুষরাও অলঙ্কার ব্যবহার করেন। প্রাচীনকালে মানুষ পরিধান করতো মাটির তৈরী গহনা। এরপর সভ্যতার বিকাশের সাথে সাথে শুরু হয় লোহা, তামা, পিতল, রূপা ও সোনার গহনার ব্যবহার।
তবে এখন সোনার দাম আকাশ চুম্বি। তাই মানুষ আবার ফিরে যাচ্ছে প্রাচীন ঐতিহ্যের গহনার ব্যবহারে। তামা, পিতল ও দস্তার তৈরী প্রাচীন ঐতিহ্য ও নকশার গহনার ব্যবহারে মানুষ অনেকটাই ঝুঁকে পড়ছে। কারণ এগুলো দামে কম, দেখতে আকর্ষণীয় এবং বহণ করা নিরাপদ।
এমন প্রাচীন ঐতিহ্যকে দীর্ঘদিন ধরে লালন করে আসা অঞ্চল হচ্ছে বগুড়ার অ্যান্টিক পল্লী। যা গড়ে ওঠে প্রায় ৫০ বছর আগে জেলা শহরের উপকন্ঠে ধরমপুর ও বারপুরে। প্রায় ২০টি গ্রামে গড়ে উঠেছে অ্যান্টিক কারখানার কুটির শিল্প। ২০ হাজারেরও অধিক নারী-পুরুষ এখানে গহনা তৈরী করেন। এই ২০ গ্রাম থেকে প্রতিদিন প্রায় ১০ লাখ টাকার গহনা যায় দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে। মাসে প্রায় ৩ কোটি টাকার অ্যান্টিক গহনা পাইকারি বিক্রি হয়ে থাকে।
করোনার শুরুতে মুখ থুবড়ে পড়লেও আবার ঘুরে দাঁড়াচ্ছে অ্যান্টিক পল্লী। প্রায় ২০ হাজার নারী-পুরুষ ব্যাস্ত সময় পার করছেন। অ্যান্টিকে কাজ করে তাদের জীবন মান পাল্টে গেছে। সকালে গহনার বানানোর ছোট-ছোট হাতুড়ি খুট-খাট শব্দ ও গ্যাস পটের সড়-সড় শব্দে গ্রামর মানুষের ঘুম ভেঙ্গে যায়। আগে সোনার গহনা তৈরীর জন্য কয়লার আগুনে পিতলের নল দিয়ে গহনার জোড়া লাগানো হতো। এখন প্রযুক্তির ছোঁয়ায় পাল্টে গেছে কাজের ধরণ। গহনা জোড়া লাগাতে ব্যবহার হয় গ্যাসের হট গান।
সরেজমিনে দেখা যায় মোমের ছাঁচে জোড়া দিয়ে তৈরী করা হচ্ছে নানা ডিজাইনের গহনা। এ গহনা তৈরী হয় তামা, পিতল ও দস্তার সংমিশ্রণে। অপূর্ব হতের কারুকাজে তৈরী হচ্ছে চোখ ধাঁধানো গহনা। এগুলো সোনা নাকি অন্য কোন মূল্যবান পদার্থের তা পরীক্ষা না করে বুঝার কোন উপায় নেই।

কথা হয় অ্যান্টিক পল্লীর বিদ্যুৎ মিয়ার সাথে। বিদ্যুৎ মিয়া আগে গহনা তৈরীর কারখানায় কাজ করেতো। এখন তিনি নিজেই কারখানার মালিক। তিনি জানান, এই ২০ গ্রামে বেকার যুবকের সংখ্যা নেই বললেই চলে, অ্যান্টিক পল্লীর মাধ্যমেই তারা নিজেদের কর্ম সংস্থানের ব্যবস্থা করে নিয়েছেন।
ধরমপুর বাজার দোকান মালিক সমিতি সাধারণ সম্পাদক মো. জাকির হোসেন বলেন, সোনার দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় অ্যান্টিকের গহনা চাহিদা বেড়েছে। এখানকার অনেকে যারা রিক্সা চালাতো, দিন মজুর ছিল, বা অন্যান্য পেশা নিয়োজিত ছিল। তাদের অধিকাংশই পরে অ্যান্টিক কারখানার শ্রমিক ছিল। এখন তারা নিজেরাই এক একজন অ্যান্টিক শিল্পের মালিক বনে গেছে। এই অঞ্চলে তেমন বেকার নেই।
জাকির জানান, গহনার কাঁচা মাল আসে ভারত থেকে। কারন সেখানে তামা, ব্রোঞ্জ, দস্তা ও পিতলের খনি আছে।
সহজ শর্তে বিসিকের ঋণ সহায়তা পেলে তারা এই গহনা বিদেশে রফতানি করতে পারবে বলে আশাবাদ ব্যাক্ত করেছেন তিনি।
অ্যান্টিক পল্লীর মানুষ গহনা তৈরীর কাজে ব্যাস্ত থাকে। এমন কোন ডিজাইনের গহনা নেই যে তারা তৈরী করতে পারেন না। তাদের হাত দক্ষ ও সুনিপুণ।
মিথিলা অ্যান্টিক কারখানার মালিক সাইফুল ইসলাম। তিনি জানান, প্রথম দুইমাস একটি অ্যান্টিক কারখানায় কাজ করে এখন নিজেই কারখানা দিয়েছেন। প্রতিমাসে প্রায় আড়াই লাখ টাকার অ্যান্টিক গহনা সরবরাহ করে থাকেন।
রাবেয়া নামে এক গহনা শিল্পী জানান, তিনিসহ তার পরিবারের ৪ জন সদস্য এ কাজ করছেন। আগে তাদের অনেক অভাব অনটনের মধ্যে দিন যাপন করতে হয়েছে। এই কাজ করে তাদের পরিবারের স্বচ্ছলতা ফিরে এসেছে।
ধরমপুর ও বারপুরের অ্যান্টিকে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সহায়তার প্রশ্নের সহায়তা প্রসঙ্গে বগুড়া বিসিকের ডিজিএম জাহেদুল ইসলাম জানান, তাদের তরফ থেকে সহায়তার জন্য কেউ আসেনি। এলে নিশ্চয়ই সহায়তা প্রদান করা হবে। তিনে বলেন, এটি একটি সম্ভাবনাময় খাত। অবশ্যই তাদের সহায়তায় বিসিক এগিয়ে আসবে।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button