রাজশাহী বিভাগ

নওগাঁয় কার্ড থাকলেও ১০ টাকা কেজির চাল পান না সুবিধাভোগীরা

নওগাঁ প্রতিনিধি: নওগাঁ সদর উপজেলার কীর্ত্তিপুর ইউনিয়নের বুজরুক আতিথা (মধ্যপাড়া) গ্রামের আব্দুল জব্বার দেওয়ানের ছেলে ভ্যানচালক মাজেদুর রহমান দেওয়ান। সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ১০ টাকা কেজির চালের কার্ডের সুবিধাভোগী। কিন্তু ছয়বার চাল তোলার পর তার কার্ডটি হারিয়ে যায়। এরপর আর চাল পান না তিনি। শুধু মাজেদুর রহমানই না, তার মতো অনেক অসহায় ব্যক্তি আজ সরকারের সুবিধা থেকে বঞ্চিত। আবার কেউ খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতাভুক্ত না হয়েও ১০ টাকা কেজির চালের কার্ডের সুবিধাভোগ করছে। অনেকের নামে কার্ড থাকলেও সুবিধা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। স্থানীয় কীর্ত্তিপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, মেম্বার ও সংশ্লিষ্ট ডিলারদের যোগসাজসে এ অনিয়ম করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

ভুক্তভোগী মাজেদুর রহমান দেওয়ান বলেন, ২০১৬ সালে খাদ্য বান্ধব কর্মসূচীর আওতাভুক্ত হন তিনি। ছয়বার চাল উত্তোলনের পর এক সময় কার্ডটি হারিয়ে যায়। কার্ড হারানোর পর থেকে তিনি চাল পাওয়া থেকে বঞ্চিন হন। কিন্তু তার নামে চাল উত্তোলন কখনো বন্ধ হয়নি। চারজন সদস্যের ভরপোষনে সংসার চালাতে গিয়ে ভ্যান চালানো পাশপাশি কামলা খাঁটেন। কার্ড হারানোর পর চেয়ারম্যান ও মেম্বারের কাছে বহুবার ধর্না দিয়েছেন। কিন্তু কোন কাজ হয়নি। এরপর আশা ছেড়ে দিয়েছেন। শুনেছেন তার নামে চাল উত্তোলন করা হয়। কিন্তু তিনি পাননা।

দাশকান্দি শা পাড়া গ্রামের রংমিস্ত্রি রিপন বলেন, আমার নামে কার্ড (৬১৮) হয়েছে শুনেছি। কিন্তু গত তিন বছরেও কার্ড হাতে পাইনি বা চাল উত্তোলন করতে পারিনি। আমার নামে অন্য মানুষরা চাল তোলে। চেয়ারম্যান ও ডিলারকে বিষয়টি বার বার বলা হয়েছে। চেয়ারম্যান বলেন কার্ড ডিলারের কাছে। আবার ডিলার বলে কার্ডটি চেয়ারম্যানের কাছে। যেভাবে দীর্ঘদিন থেকে হয়রানি এবং অন্যায় করা হচ্ছে আমি দোষীদের শাস্তি ও ন্যায্য বিচার দাবী করছি প্রশাসনের কাছে।

শেরপুর গ্রামের সিদ্দিকের স্ত্রী হাফিজা বলেন, তিনি ১০ টাকা কেজি চালের কার্ডের জন্য গ্রামের নাসির উদ্দিন নামে এক ব্যক্তিকে এক হাজার টাকা দিয়েছেন। কিন্তু তিনি এখনো কোন কার্ড পাননি। চাল দেয়ার দিনে নাসির একটি স্লিপ হাতে ধরিয়ে দেন। স্লিপ দিয়ে কার্ড ছাড়াই এবছরে গত তিনবারে ৩০ কেজি করে চাল পেয়েছেন। একই কথা জানালেন মামুনের স্ত্রী শাপলা বিবি। তিনি কার্ডের জন্য দেড় হাজার টাকা দিয়েছেন। কার্ড না পেয়েও দুইবার চাল পেয়েছেন।

এ গ্রামের শাহারিয়ার বেগম, উসমান দেওয়ান, ফারুক হোসেন, রেহেনা বেগম, সিরাজুল ইসলাম, আশরাফুল মোরশেদ সহ কয়েকজন কার্ড করে দেয়ার নাম করে দালাল নাসির উদ্দিনকে এক হাজার ১০০ টাকা থেকে দেড় হাজার টাকা করে দিয়েছেন। কিন্তু তাদের কাউকে এখনো কার্ড দেয়া হয়নি। চেয়ারম্যান ও মেম্বার তাকে নিযুক্ত করেছেন বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা।
দাশকান্দি শা পাড়া গ্রামের সিরাজুল আলম সানু বলেন, কার্ডধারীদের কার্ড থাকলেও তারা চাল পাইনা। তবে তাদের নামে চাল ঠিকই উত্তোলন করা হয়। আর এ ধরনের দূর্নীতি নিরহ ব্যক্তিদের সাথে কেন করা হয়। বিষয়টি প্রশাসনকে ক্ষতিয়ে দেখার জন্য অনুরোধ করছি।

অভিযুক্ত নাসির উদ্দিন বলেন, কার্ড করে দেয়ার নামে আমি কারো কাছ থেকে টাকা নেয়নি। একজন চাল বিক্রি করে আরেকজন কিনে নেয়।

এ ইউনিয়নের ডিলার বেলাল হোসেন ও মাহাবুব হাসান বলেন, দুইজন ডিলাররের আওতায় ১ হাজার ৩১৬টি কার্ড রয়েছে। এই কার্ডের বিপরীতে খাদ্য গুদাম থেকে চাল উত্তোলন এবং বিতরণ করা হয়। তবে একই পরিবারে একাধিক ব্যক্তির নামে কার্ড থাকায় প্রত্যয়নের কারণে অন্য ব্যক্তিকে চাল দেয়া হয়। এখানে কোন অনিয়ম করা হয়না।
কীর্ত্তিপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আতোয়ার রহমান বলেন, কোন কার্ডধারী চাল পেল কি পেল না, এটা ডিলারের বিষয়। কার্ডগুলো আমি চেয়ারম্যান হওয়ার আগে ইস্যুকৃত। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। তবে ব্যাপক অনিয়ম আছে বলে মনে হয়না।

সদর উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা মোহাজের হাসান বলেন, এমন অভিযোগ বরদাস্ত করা যাবে না। ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। ট্যাগ অফিসারের মাধ্যমে তৃতীয় দফা সংসোধন হচ্ছে। স্বচ্ছতা করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
নওগাঁ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ওই ইউনিয়নে ইতোমধ্যে ২৩০ টা কার্ড সংশোধন করা হয়েছে। আপাতত কোন সমস্যা নাই। প্রয়োজনে আবারও সংশোধন করা হবে।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Back to top button