শিক্ষাঙ্গন

রাবিতে মাস্টার্সের ফলাফল মূল্যায়ণে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ

রাবি প্রতিনিধি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক (আইআর) বিভাগের সভাপতি ড. আবদুল্লাহ আল মামুন চৌধুরীর বিরুদ্ধে পরীক্ষার ফল বিপর্যয়, সেচ্ছাচারিতা, ক্ষমতার অপব্যবহার ও পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ করেছেন বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের মাস্টার্সের শিক্ষার্থীরা। ওই শিক্ষকের লেখা বই না কিনলে ভর্তি বা ফরম ফিলাপের ফর্মে স্বাক্ষর করতেন না বলেও অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীরা।

বুধবার দুপুরে (০৯ ডিসেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বরাবর এটির তদন্তপূর্বক ফলাফল পরিবর্তনের আবেদন জানিয়েছেন তারা।

শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, আমরা এই বিভাগে ভর্তি হবার পর এম.এস.এস সব বর্ষে প্রায় সকলেই ভালো ফল অর্জন করি। এরমধ্যে একজন সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদে প্রথম স্থান অধিকার করে স্বর্ণপদক ও আরেকজন ইউজিসির বৃত্তিও লাভ করে। আমাদের এই অর্জনে পূর্ববর্তী সভাপতি ও শিক্ষকগণ অনুপ্রেরণা দিয়েছেন।

তারা বলেন, কিন্তু বর্তমান সভাপতি দায়িত্ব গ্রহণের পর বিভাগের সকল শিক্ষার্থীর জীবনে দুঃসময় নেমে আসে। সভাপতির স্বেচ্ছাচারিতা, ক্ষমতার অপব্যবহার, শিক্ষার্থীদের ভয় ভীতি প্রদর্শন, পক্ষপাতিত্ব, ক্লাস ও পরীক্ষা গ্রহণে দায়িত্বে অবহেলা, অনৈতিক কার্যকলাপে বিভাগে ফলাফল খারাপ হয় বলে দাবি করেন তারা।

তাছাড়া, তথাকথিত ‘সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন’ নামক সংগঠনের কাজে প্রায়শই সকল শিক্ষার্থীদেরকে যোগদান করতে বাধ্য করতেন বলে তারা আবেদন পত্রে উল্লেখ করেন। তারা বলেন, তিনি অপ্রয়োজনীয় হলেও তার লেখা “A Brief History of Bangladesh” বইটি সবাইকে ৩৫০ টাকা করে কিনতে বাধ্য করেন এবং উক্ত বই না কিনলে ভর্তি বা ফরম ফিলাপের ফর্মে স্বাক্ষর করতেন না। তার এসব অপকর্মে আমরা মৃদু বিরোধিতা করলে আমাদেরকে পরীক্ষায় দেখে নিবেন বলে বিভিন্ন সময় হুমকি দেন।

এমনকি থিসিসের কাজের জন্য আমরা কক্সবাজার গেলে তিনি আমাদের সাথে তার স্ত্রী, সন্তান, শ্যালক-শালিকাদের নিয়ে যান এবং তাদের থাকা, খাওয়া ও যাতায়াতের খরচ প্রদানে আমাদের বাধ্য করেন এবং  এব্যয় আমাদের কারো কারো পক্ষে এ ব্যয় বহন করা সাধ্যাতীত ছিল বলেও শিক্ষার্থীরা আবেদন পত্রে  উল্লেখ করেন ।

এ সময় শিক্ষার্থীরা এসব অভিযোগ করে আরও বলেন, ২০১৯ সালের এম.এস.এস. পরীক্ষায় আমাদের ফল বিপর্যয়ের জন্য বিভাগের ও পরীক্ষা কমিটির সভাপতি ড. সৈয়দ মো: আব্দুল্লাহ আল মামুন চৌধুরী স্যারের নৈতিকস্খলনই দায়ী। তাই বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে আমাদের পরীক্ষার সকল উত্তরপত্র ও থিসিসের পূণর্মূল্যায়ন এবং ইনকোর্সের নম্বর যথাযথভাবে প্রদান করে পুনরায় ফলাফল তৈরী করে প্রকাশের দাবি জানাই। সেই সাথে ফলাফল বিপর্যয়ের জন্য দায়ী পরীক্ষা কমিটির সভাপতি ড. সৈয়দ মো: আব্দুল্লাহ আল মামুন চৌধুরীর বিরুদ্ধে শাস্তিমুলক ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানান তারা ।

এবিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সভাপতি ড. সৈয়দ মো: আব্দুল্লাহ আল মামুনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি মাস্টার্সের ফলাফল নির্ধারণে কোনরূপ পদ্ধতিগত ত্রুটি হয়নি বলে দাবি করেন।

তিনি বলেন, এটা ঠিক যে কিছু শিক্ষার্থীর ফলাফল আশানুরূপ হয়নি। তবে পূর্বে ভালো ফলাফল করা শিক্ষার্থীর ফল ভালো হয়নি বলেই যে সেখানে অনিয়ম হয়েছে এমনটি তো নয়। যে শিক্ষার্থী ভালো পড়েছে, তার ফলাফল ভালো হয়েছে। আর পরীক্ষার ফলাফল তো একজন শিক্ষকের হাতেও থাকে না যে তিনি অনিয়ম করবেন।

তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জায়গায় পরীক্ষার ফলাফলে অনিয়ম করারও কোন সুযোগ নেই। এখানে প্রতিটি উত্তরপত্র দুজন শিক্ষক মূল্যায়ণ করেন। তাদের দেয়া নম্বরের মধ্যে ২০ পারসেন্ট পার্থক্য থাকলে তৃতীয় একজন পরীক্ষক উত্তরপত্রটি পুনর্মূল্যায়ণ করেন।

সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করার বিষয়ে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে কো কারুকুলাম একটিভিটিস এর অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীরা সতস্ফূতভাবে এ সংগঠনে যুক্ত হয়ে থাকে। এতে বাধ্যবাধকতার কিছু নেই। তাছাড়া দেশের ৬৪ জেলায় এর শাখা রয়েছে।

আপনার লেখা বই ক্রয়ে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করেছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক মামুন বলেন, মাস্টার্সে আমার ৩০ জন শিক্ষার্থী তাদের বই কিনতে বাধ্যবাধকতার কোন কারন নেই। আর এ বইটি বিভাগের সিলেবাসের তালিকাভুক্ত। আমার লেখা কয়েকটি বইয়ের হাজার হাজার কপি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়  এবং মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা ক্রয় করে পড়ছেন। সুতরাং ৩০ টি বই বিক্রির জন্য চাপ প্রয়োগের কোন যুক্তি নেই। শিক্ষকদের দলাদলিতে এসব শিক্ষার্থীদের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছেন বলেও দাবি করেন তিনি।

তিনি আরো বলেন, আমি চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বপালনকালে বিভাগের প্রতিটি বিষয় বিভাগ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মানুযায়ী হয়েছে। আমি এটি নিশ্চয়তা দিতে পারি এ সময়টাতে বিভাগে কোন অনিয়ম হয়নি। শিক্ষার্থীরা আমার বিষয়ে যেহেতু অভিযোগ দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সেগুলো তদন্ত করে সিদ্ধান্ত নেবেন।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Back to top button