অর্থনীতি

ঢাকা-কুয়ালালামপুর দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে নতুন গতি

বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নতুন গতি পেয়েছে। অতীতে দু’দেশের মধ্যে শুধু বাংলাদেশের শ্রমবাজার কেন্দ্রীক সম্পর্ক ছিল। এখন ধীরে ধীরে তা থেকে বেরিয়ে এসে বহুমাত্রিক সম্পর্কে পরিণত হয়েছে। দু’দেশের মধ্যে বিগত কয়েক বছরে দ্বিপক্ষীয় সফর, ব্যবসা-বাণিজ্য, শ্রমবাজার প্রসার, পযর্টন ও দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা বেড়েছে।

দ্বিপক্ষীয় সফর:
বাংলাদেশ ও মালেশিয়ার মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সফর বেড়েছে। এসব সফরের মাধ্যমে দু’দেশের সম্পর্কে নতুন গতি এসেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৪ সালের দুই থেকে চার ডিসেম্বর মালয়েশিয়া সফরে গিয়েছিলেন। এর আগে ২০১৩ সালে মালয়েশিয়ার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক বাংলাদেশ সফর করেন। মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন আবদুল্লাহ চলতি বছরের ছয় থেকে আট জুলাই ঢাকা সফর করেন। আবার চলতি বছরের মে মাসে মালয়েশিয়ার উপ প্রতিরক্ষামন্ত্রী থুয়ান লিউ চিন থং ঢাকা সফর করেন। এছাড়া গত বছরের জুলাইয়ে মালয়েশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী থুয়ান মোহাম্মদ বিন সাবুও ঢাকা সফর করেন।

এদিকে, চলতি বছরের ২৯ থেকে ৩০ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা মেজর (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক মালয়েশিয়া সফর করেন। চলতি বছরের মে মাসে মালয়েশিয়া সফর করেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমেদও। এছাড়া চলতি বছরের এপ্রিলে মালয়েশিয়া সফর করেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।

দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা:
বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতাও বেড়েছে। দু’দেশের মধ্যে ২০১৭ সালের ১৫ মে ঢাকায় প্রথম দ্বিপক্ষীয় পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত হয়। আবার গত বছর কুয়ালালামপুরে দ্বিতীয়বারের মতো দ্বিপক্ষীয় পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত হয়। দু’দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা এসব বৈঠকে অংশ নেন। বৈঠকে দু’দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ, শিক্ষা, অভিবাসন ও পযর্টন সুবিধা প্রসার নিয়ে আলোচনা করা হয়।

মালয়েশিয়ায় শ্রমবাজার:
মালয়েশিয়া বাংলাদেশের অন্যতম শ্রমবাজার। যদিও গতবছরের সেপ্টেম্বর থেকে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের কর্মী পাঠানো বন্ধ রয়েছে। ১০টি রিক্রুটিং এজেন্সির প্রতারণা অভিযোগ ওঠার পর থেকে মালয়েশিয়া বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেওয়া বন্ধ করে দেয়। তবে এরপর থেকেই দুই দেশের নেতৃবৃন্দ ও কর্মকর্তাদের বিভিন্ন বৈঠকে আলোচনার ধারাবাহিকতায় মালয়েশিয়া বাংলাদেশ থেকে পুনরায় কর্মী নেওয়ার জন্য রাজি হয়েছে। এখনও মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর বিষয়ে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। খুব শিগগির মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খুলবে বলে আশা করা হচ্ছে। এদিকে, গতবছর প্রায় এক লাখ ৭৬ হাজার কর্মী মালয়েশিয়ায় গেছেন।

বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া বাণিজ্য:
বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ধীরে ধীরে বাড়ছে। দু’দেশের মধ্যে এখন দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ দুই দশমিক ৩৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এক বছরের ব্যবধানে দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্য বেড়েছে ৩৫ দশমিক ছয় শতাংশ। মালয়েশিয়া থেকে বাংলাদেশে রপ্তানি হয়েছে দুই দশমিক ১১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য। আর বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় রপ্তানি হয়েছে ২৬০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য। বাংলাদেশ থেকে রপ্তানির পরিমাণ কম হলেও মালয়েশিয়া থেকে রপ্তানি বেড়েছে।

বাংলাদেশি পর্যটক বেড়েছে:
মালয়েশিয়ায় প্রতি বছর বাংলাদেশি পর্যটক বাড়ছে। চলতি বছর বাংলাদেশ থেকে দেড় লাখেরও বেশি পযর্টক মালিয়েশিয়ায় যাবেন বলে প্রত্যাশা করছে দেশটি। এর আগে গত বছর দেড় লাখ বাংলাদেশি মালয়েশিয়া যান। এরও আগের বছর ২০১৭ সালে মালয়েশিয়া গেছেন এক লাখ ১১ হাজার ৮৩৬ জন।

রোহিঙ্গাদের জন্য সহায়তা:
বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য শুরু থেকেই মালয়েশিয়া সহায়তা দিয়ে আসছে। ২০১৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত চার দফায় মালয়েশিয়া রোহিঙ্গাদের জন্য ১০৭ টন খাদ্য, ওষুধ ও অন্যান্য সামগ্রী দিয়ে সহায়তা করেছে। এছাড়া রোহিঙ্গাদের চিকিৎসার জন্য মালয়েশিয়া সরকার কক্সবাজারে একটি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেছে।

দু’দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিষয়ে ঢাকায় নিযুক্ত মালয়েশিয়া হাইকমিশনের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার আমির ফরিদ বিন আবু হাসান বাংলানিউজকে বলেন, বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বহুদিনের। তবে অতীতের চেয়ে বর্তমানে এই সম্পর্ক আরও গতি পেয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য, উচ্চপযার্য়ের সফর বিনিময়, পর্যটনসহ নানাখাতে সহযোগিতা বেড়েছে বলে তিনি জানান।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button