অর্থনীতি

দীর্ঘ হচ্ছে অভাবী মানুষের লাইন

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) থেকে স্বল্পমূল্যে মানসম্মত পণ্য কিনতে দীর্ঘ হচ্ছে মানুষের লাইন। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে ভোর থেকে মানুষ লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকছেন পণ্য কিনতে। সকাল ১০টায় পণ্য বিক্রি শুরু করে বেলা আড়াইটা বাজলেও শেষ হয় না মানুষের লাইন।

নিম্নবিত্তের পাশাপাশি মধ্যবিত্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে টিসিবির লাইনে। অধিকাংশ মানুষ টিসিবি থেকে কিনছেন সয়াবিন তেল ও পিঁয়াজ। চাল, ডাল, তেল, চিনি, পিঁয়াজসহ প্রায় সব নিত্যপণ্যের বাজার চড়া। রাজধানীর ১৫০টি স্পটে ট্রাকে সাশ্রয়ী মূল্যে খাদ্যপণ্য বিক্রি শুরু করেছে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। এ দফায় বিক্রয় কার্যক্রম ৬ মার্চ শুরু হয়ে ২৪ মার্চ পর্যন্ত চলবে। পরে ২৭ মার্চ থেকে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত ফের পণ্য বিক্রি করা হবে। শুক্রবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন বিক্রি হবে টিসিবির পণ্য।

রাজধানীর বাঁশতলায় টিসিবির পণ্য কিনেত সকাল ৭টায় লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন খাদিজা বেগম (৫৫)। সকাল ১০টায় বিক্রি শুরু হলেও ভোর থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকেন মানুষ। দুপুর ১২টা বাজলেও সিরিয়াল আসে নি খাদিজা বেগমের। রোদে-গরমে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকায় অজ্ঞান হয়ে পড়েন তিনি। আশপাশের লোকজন পানি খাইয়ে।

টিসিবির ট্রাক থেকে একজন ক্রেতা দিনে ৫৫ টাকা কেজি দরে সর্বোচ্চ ২ কেজি চিনি, ৬৫ টাকা কেজি দরে ২ কেজি মসুর ডাল, ১১০ টাকা দরে ২ লিটার সয়াবিন তেল ও ৩০ টাকা দরে আড়াই কেজি পিঁয়াজ কিনতে পারবেন। দেশব্যাপী ৪০০-৪৫০ জন ডিলারের ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে এ বিক্রি কার্যক্রম চলবে।

রাজধানীতে টিসিবির বিভিন্ন পয়েন্টে ক্রেতার উপচে পড়া ভিড় দেখা যাচ্ছে। শেষ মুহূর্তে টিসিবির ট্রাক থেকে পণ্য কিনতে আসা অনেকেই ফিরছেন খালি হাতে। রামপুরা ব্রিজ এলাকায় টিসিবির পণ্য নিতে এসেছেন তসলিম হোসেন (৬২)। দীর্ঘ ৩ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে ২ কেজি ডাল, ২ কেজি চিনি আর ২ লিটার তেল কিনেছেন।

তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে অফিস সহকারী হিসেবে কাজ করে। ঢাকা শহরে বাসা ভাড়া দিয়ে দুই ছেলেকে পড়াশোনার খরচ জুগিয়ে ছয়জনের সংসারে ভীষণ টানাপোড়েন। এর মধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম হুহু করে বাড়ছে। কোনো উপায় না পেয়ে ছেলেকে না জানিয়ে টিসিবির লাইনে দাঁড়িয়েছি। ছেলে সকাল ৯টায় অফিসে চলে গেলে এসে লাইনে দাঁড়িয়েছি। বেলা ২টা বাজে এখন পণ্য কিনতে পারলাম।’ তসলিম হোসেনের ভাগ্যে পণ্য জুটলেও সায়েদা বেগমের জোটেনি। দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে টিসিবির পণ্য কিনতে এসে খালি হাতে ফেরত গেছেন তিনি। সায়েদা বেগম বলেন, ‘আমরা সকাল ১১টার সময় আইসা দাঁড়াইছি কিন্তু পাই নাই। এহন শেষ হইয়া গেছে।

অনেক মানুষ লাইনে দাঁড়ানো তাই পাওয়া যায় না।’ সায়েদার মতো আনোয়ারা বেগমও লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে পণ্য না নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। তিনি বলেন, ‘সকালে আসছিলাম, এখন বলছে সব পণ্য শেষ। গত সপ্তাহে ট্রাকেপণ্য বিক্রি বন্ধ ছিল। কয়েকদিন খোলাবাজার থেকে ২০-৩০ টাকা করে পলিথিনে তেল কিনে রান্না করেছি।’

এ ব্যাপারে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন  বলেন, ‘রমজান এলেই পণ্যের দাম বাড়ানোর প্রতিযোগিতায় নামেন ব্যবসায়ীরা। আমরা কাস্টমস, পাইকারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলেছি। পর্যাপ্ত মজুদ থাকলেও কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়াচ্ছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা।

সরকার ভোগ্যপণ্যের বাজার ব্যবসায়ীদের হাতে ছেড়ে দেওয়ায় এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘কখনো তেলের ব্যবসায়ী দাম বাড়ান, কখনো পিঁয়াজ ব্যবসায়ী। কেউ কারও চেয়ে কম না। বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে তিনটি পর্যায়ে কাজ করতে হবে। আমদানিকারক, ডিলার ও খুচরা- এ তিন পর্যায়ে নজর দিতে হবে। টিসিবির কার্যক্রম খুবই প্রশসংনীয়। এর প্রভাব বাজারে কিছুটা হলেও পড়বে।’

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button