অর্থনীতি

বাংলাদেশে সোনার বাজারে অস্থিরতা, দায়ী চীন-আমেরিকাও

বিশ্ববাজারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাংলাদেশে বেড়েই চলেছে সোনার দাম। গত দেড় মাসে দেশে সোনার দাম বেড়েছে ৫ দফা। সবশেষ সোমবার ভালো মানের (২২ ক্যারেট) সোনার দাম ভরিতে ১ হাজার ১৬৭ টাকা বেড়েছে। বর্তমানে প্রতি ভরি সোনার দাম ৫৬ হাজার ৮৬২ টাকা।

যুক্তরাষ্ট্রের স্পট মার্কেটে ১৩ আগস্ট প্রতি আউন্স সোনার দাম এক হাজার ৫২৫ ডলার ৯৯ সেন্ট উঠে। যা ৬ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। একই দিনে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ভবিষ্যৎ সরবরাহ চুক্তিতে প্রতি আউন্স সোনা ১ হাজার ৫৩৭ ডলারে বেচা-কেনা হয়।

হঠাৎ হু হু করে সোনার দাম বাড়ার ছয়টি কারণ চিহ্নিত করেছেন আন্তর্জাতিক বাজার বিশ্লেষকরা।

এক. মার্কিন-চীন বাণিজ্যযুদ্ধের ফলে অনিশ্চয়তা।
দুই. বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কা।
তিন. কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর সোনা কেনার হিড়িক।
চার. ডলারের দাম পড়ে যাওয়া।
পাঁচ. বিশ্বজুড়ে শেয়ারবাজারে অস্থিরতা ও হংকংয়ে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা।

এই ছয় কারণে বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ ক্ষেত্র মনে করে সোনা কিনছেন। এতে চাহিদায় বাড়তি চাপ পড়ায় ধাতুটির দাম বাড়ছে।

বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি-বাজুস দেশে সোনার দাম বৃদ্ধির ঘোষণা দেয়। বাজুসের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার আগরওয়ালা বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই দেশের বাজারে আমাদেরও দাম বৃদ্ধি করতে হচ্ছে।

দিলীপ বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে বছরের শুরু থেকেই আউন্স প্রতি দাম বেড়েছে আড়াইশ ডলার। বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ২১ হাজার টাকা। প্রতিতে বেড়েছে ৮ হাজার টাকা। তবে আমরা একবারে বাড়াচ্ছি না, ধীরে ধীরে বাড়াচ্ছি।

দেশের বাজারে দেড় মাসে পাঁচবার সোনার দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মধ্যে চলতি মাসেই বেড়েছে ৩ দফা। ৭ আগস্ট বাজুস সোনার দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয়।

নতুন করে দাম বাড়ায় ২২ ক্যারেটের ১ ভরি সোনা ৫৫ হাজার ৬৯৫ টাকা, ২১ ক্যারেটের ভরি ৫৩ হাজার ৩৬২, ১৮ ক্যারেটের ভরি ৪৮ হাজার ৩৪৭, সনাতন পদ্ধতির ভরি ২৭ হাজার ৯৯৩ ও ২১ ক্যারেটের ১ ভরি রুপা ১ হাজার ১৬৬ নির্ধারণ করা হয়।

এর আগে ৫ আগস্ট আরেক দফা দাম বাড়ানো হয়। সে সময় ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনা ৫৪ হাজার ৫২৯ টাকা, ২১ ক্যারেট ৫২ হাজার ১৯৬ এবং ১৮ ক্যারেট ৪৭ হাজার ১৮০ টাকা নির্ধারণ করা হয়।

এছাড়া সনাতন পদ্ধতিতে সোনার দাম ২৭ হাজার ৯৯৩ টাকা এবং ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি রুপার দাম ৯৩৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। সর্বশেষ ১৯ আগস্ট দাম বাড়ানো হয়। তখন থেকে ভরি প্রতি ২২ ক্যারেট সোনা বিক্রি হচ্ছে ৫৬ হাজার ৮৬২ টাকায়।

জুলাই মাসে সোনার দাম দুই দফা বাড়ানো হয়। জানুয়ারি মাসেও দু-দফায় দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছিল বাজুস। ওই মাসে ২২ ক্যারেটের সোনার দাম ভরি প্রতি ৪৮ হাজার ৯৮৮ টাকা ছিল। বর্তমানে ভরিতে প্রায় সাত হাজার টাকা বেড়েছে।

বাজুসের সাধারণ সম্পাদক জানান, চীন-যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য যুদ্ধের প্রভাব পড়েছে আন্তর্জাতিক স্বর্ণের বাজারে। চীনের নানা ধরনের পণ্যের ওপর ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করল, তখন চীন ডলার ছেড়ে দিয়ে সোনার রিজার্ভ বাড়িয়ে দেয়।

এর ফলে ডলারের দরপতন হয়। চীন সোনা কেনায় আন্তর্জাতিক বাজারে এই ধাতুটির সঙ্কট তৈরি হয়ে দাম বাড়তে থাকে। সোনার দাম সামনে কমার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না বলে তিনি জানান।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে সোনা আমদানি শুরু না হলেও যারা লাগেজে করে সোনা আনেন, তারাও তো আন্তর্জাতিক বাজারের দরেই কিনে আনেন। যারা রিসাইকেল করা সোনা কিনছেন তারাও ওই আন্তর্জাতিক বাজারের দাম অনুসরণ করেন।

ব্লুমবার্গের তথ্য অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক বাজারে (স্পট মার্কেট) ২০১৩ সালের এপ্রিলে সোনার দাম আউন্স প্রতি সর্বোচ্চ ১ হাজার ৫৩৪ ডলার ৩১ সেন্টে উঠেছিল।

২০১৪ সালে সর্বোচ্চ দাম ছিল আউন্স প্রতি ১ হাজার ৩৭১ ডলার, ২০১৫ সালে ১ হাজার ২৯৪ ডলার, ২০১৬ সালে ১ হাজার ৩৮৯ ডলার, ২০১৭ সালে ১ হাজার ৩৩৩ ডলার এবং ২০১৮ সালে ১ হাজার ৩৫৫ ডলার। আশঙ্কা করা হচ্ছে, চলতি বছর সোনার দাম আউন্স প্রতি ১ হাজার ৬০০ ডলারে ঠেকতে পারে।

লন্ডনভিত্তিক সংস্থা সিএমসি মার্কেটের প্রধান বাজার বিশ্লেষক মাইকেল ম্যাকার্থি রয়টার্সকে বলেন, অর্থনৈতিক মন্দার ফলে বিশ্বব্যাপী উদ্বেগ বাড়ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো তাদের উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। এ অবস্থায় বিনিয়োগকারীদের কাছে বিনিয়োগের নিরাপদ ক্ষেত্র হিসেবে সোনার চাহিদা বেড়ে যাচ্ছে।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button