সম্পাদকীয়

শিক্ষার্থীদের মনস্তত্বের ওপর করোনার প্রভাব

করোনা ভাইরাস মহামারির কারণে এক বছরের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে।স্কুল বন্ধ থাকার কারণে চার দেয়ালের মাঝে বন্দি হয়ে পড়েছে শিক্ষার্থীরা; বিশেষ করে নগর ও শহরাঞ্চলের শিশুরা। গত বছর ১৭ মার্চ দেশে প্রথম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা আসে। সরকার বেশ কয়েক দফায় স্কুল-কলেজ- বিশ্ববিদ্যালয় খোলার বিষয়ে বিবেচনা করলেও দেশে মহামারি পরিস্থিতির কারণে সেটা আর সম্ভব হয়নি। বরং দফায় দফায় বন্ধ থাকার মেয়াদ বেড়েছে। দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকায় শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বন্দি এ সময়ে শিশুরা মোবাইল ও ইন্টারনেটে আসক্ত হয়ে পড়েছে। মোবাইল বা টিভি নিয়ে হয় তারা ঘরের এককোণে পড়ে থাকছে। আর সেগুলো না পেলে ঘরের ভেতর এতটাই দুরন্তপনা করছে যে, তাদের শান্ত রাখতে অভিভাবকরা বাধ্য হয়ে হাতে ডিভাইস তুলে দিচ্ছেন।বিভিন্ন পার্ক এবং বিনোদন কেন্দ্রগুলো মহামারিতে বন্ধ থাকায় অভিভাবকরা শিশুদের সেখানেও নিয়ে যেতে পারছেন না।স্কুল একটি শিশুকে শুধু লেখাপড়াই শেখায় না, বরং তাকে সামাজিক হতেও শেখায়। দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকার কারণে শিশুরা বাড়ি থেকে বের হওয়ার বা অন্যদের সঙ্গে মেশার সুযোগ একদমই পাচ্ছে না। দিন দিন অসামাজিক হয়ে উঠছে।বিশ্ব জুড়ে করোনাভাইরাস মহামারি ছড়িয়ে পড়ার পর সংক্রমণের বিস্তার নিয়ন্ত্রণে বেশিরভাগ দেশই প্রথম যে কাজটি করেছে, সেটি হলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া।২০২০ সালের শুরুর দিকে ইউরোপের দেশগুলোতে করোনা সংক্রমণ বেড়ে গেলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। ‍মাঝে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে এলে স্বাস্থ্যবিধি মানার নানা দিকনির্দেশনা দিয়ে স্কুল খুলে দেওয়া হয়। তারপরও দেখা যায়, সংক্রমণ বাড়ছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা ভাইরাসে সংক্রমতি হচ্ছেন। ফলে দেশগুলো পুনরায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে। স্কুল খোলার কারণেই সংক্রমণ বেড়েছে কিনা তার কোনো গবেষণা-ভিত্তি এখনো পাওয়া যায়নি।ভাইরাস সংক্রমণ কমে যাওয়ায় এ বছর ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার বিষয়ে তোড়জোড় শুরু করেছিল।

কিন্তু মার্চে পুনরায় সংক্রমণ বাড়তে থাকায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আর খোলা হয়নি। তাতে কি সংক্রমণ বিস্তারের ঊর্ধ্বগতি থামানো গেছে? মহামারি নিয়ন্ত্রণে এই যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা, তাতে সংক্রমণের বিস্তার হয়ত খানিকটা নিয়ন্ত্রণে রাখা যাচ্ছে, কিন্তু শিশুদের উপর দীর্ঘ মেয়াদে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। হাট-বাজার, অফিস-আদালত সবই খুলে দেওয়া হয়েছে। রাস্তা-ঘাট কিংবা গণপরিবহন, সবই আগের মতো। বিয়েসহ নানা ধরনের অনুষ্ঠানও হচ্ছে। কিন্তু, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখনো বন্ধ। যদিও বলা হচ্ছে, দূরশিক্ষণ কার্যক্রমের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু, সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীই দূরশিক্ষণ কার্যক্রমে অংশ নেয়নি।বর্তমানে পরিস্থিতিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কেন এখনো বন্ধ? সরকার বলছে, করোনার সংক্রমণ-ঝুঁকির কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। কিন্তু, এই একটাই ব্যবস্থা? আর কোনো বিকল্প নেই? শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার প্রভাবটা কতটা মারাত্মক? বর্তমানে করণীয় কী?বিভিন্ন গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে যে, স্টেক হোল্ডাররা চাচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হোক। আমরা এ পর্যন্ত যতটুকু আভাস পেয়েছি,এবং সরকারও তাই চাচ্ছে। কিন্তু, একটা কথা বলা হচ্ছে, পরিবেশ-পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে। এখন সেই সময়টা কখন হবে, সেই প্রশ্ন আমাদের সবারই। তাই বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ হচ্ছে যে, যেখানে যেখানে সংক্রমণের হার কম, সেখানে সেখানে আগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হোক। সেই তথ্য তো সরকারের হাতে আছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে তো একটা ম্যাপিং থাকার কথা। সেটা বিবেচনা করে করোনা বিষয়ক কারিগরি কমিটি সরকারকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার পরামর্শ দিতে পারে যে, যেখানে সংক্রমণের হার কম, সেখানে পরীক্ষামূলকভাবে ধাপে ধাপে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা যেতে পারে। দুই সপ্তাহ চালালেই অবস্থা বোঝা যাবে। পরে সেখান থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা এগোতে পারি। কিন্তু তাও তো হচ্ছে না। গবেষণার বরাত দিয়ে বলা যায়, প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিশুরা দূরশিক্ষণের সব ধরনের কার্যক্রম থেকে বেশি বঞ্চিত হচ্ছে।

সবকিছুই যেখানে স্বাভাবিক, সেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখনো কেন বন্ধ? একই প্রশ্ন গোটা জনমনে। অন্যান্য যেসব দেশে করোনা পরিস্থিতি আমাদের চেয়ে ভয়াবহ, সেখানেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা। পরিস্থিতি অতিরিক্ত খারাপ হলে কিংবা লকডাউন থাকা ছাড়া সেসব দেশের সংশ্লিষ্টদের সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকে কীভাবে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা চালিয়ে রাখা যায়। কিন্তু, আমাদের দেশে করোনা পরিস্থিতি তেমন খারাপ না হওয়া সত্ত্বেও সেরকম চেষ্টা পরিলক্ষিত হয়নি। সরকারের পক্ষ থেকে যা বলা হচ্ছে, সেই অনুযায়ী তো আমাদের পরিস্থিতি তেমন খারাপ না। পথে-ঘাটে বের হলেও তাই মনে হয়। তাহলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার কোনো প্রচেষ্টা কেন দেখছি না? এই বয়সেই ছোট ছোট ছেলে- মেয়েদের সামাজিকতা শেখার কথা। কিন্তু, দীর্ঘ প্রায় এক বছর ঘরে বসে থেকে তাদের যে মেন্টাল ট্রমা তৈরি হয়েছে, তারা যে ইন্টারনেটে আসক্ত হয়ে যাচ্ছে, এই ক্ষতি অপূরণীয়। ভবিষ্যতে কীভাবে এই ক্ষতি পূরণ করবে? শিক্ষার্থীদের নিয়ে যে সরকার সেভাবে ভাবছে, সেই ভাবনাটাই তাদের মধ্যে পরিলক্ষিত হচ্ছে না। সরকার নিরাপদে থাকছে। ভাবছে, যদি সংক্রমণ বেড়ে যায়, তাহলে বিপদে পড়তে হবে। তারচেয়ে বন্ধ করে রাখাই উত্তম। কিন্তু, এভাবে বালুর মধ্যে মাথা ঢুকিয়ে দিয়ে আমরা ভালো আছি ভাবা,এটা তো খুবই দুঃখজনক।শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ক্ষেত্রে ধাপে ধাপে এগোনোর কথাও বলেছেন বিশেষজ্ঞ মহল।শুরুতে যদি সপ্তাহে দুই বা তিন দিন স্কুল খোলা রাখা হয়; দুই বা তিন শিফটে ক্লাস হয়, যাতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা যায়; কিংবা ক্লাসের সময় কমানো হয়, তাহলে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা কেউই আপত্তি করবেন না। এখন সবাই এটাই চাচ্ছে। আমার মনে হয় তাৎক্ষণিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া উচিত। দিয়ে দেখা যে, পরিস্থিতি কেমন হয়। শিক্ষার্থীরা তো এখনো বের হচ্ছে। যারা বাজারে যাওয়ার, যাচ্ছে। আড্ডা দেওয়ার, দিচ্ছে। এটা কি মঙ্গলজনক?

কিংবা যারা সারাদিন বাসায় থেকে গেমস খেলছে, ইন্টারনেটে আসক্ত হয়ে পড়ছে, হয়তো অনেকে পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত হয়ে পড়ছে, এটা কি মঙ্গলজনক?ইংল্যান্ডের অবস্থা এত খারাপ, অথচ সেখানে কিছুদিন আগেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা ছিল। সেসব দেশে চিন্তা করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সবার শেষে বন্ধ করার কথা। কারণ, এই ক্ষতির ভয়াবহতা অনেক বেশি। এর প্রভাব যে কী পরিমাণ, সেটা তো করোনার চেয়েও বেশি ক্ষতিকর। এ নিয়ে তো কেউ কথা বলছে না। শুধু বন্ধ করে রাখলাম,ঝুঁকি নিলাম না।কিন্তু মাঝেমধ্যে ঝুঁকিও নিতে হবে।ক্যালকুলেটেড ওয়েতে ঝুঁকি নিতে হয়। অন্যদিকে
অনেকে অনলাইনে ক্লাস পছন্দ করে না, অনেক শিক্ষকও এতে অভ্যস্ত না কিংবা কোনো না কোনো কারণে অনেকে দূরশিক্ষণের কার্যক্রম থেকে বাইরে থাকে। ফলে অনলাইন ক্লাস কখনই বিকল্প হতে পারে না। শিশুদের যে সামাজিকীকরণ, সেটা তো অনলাইনে হয় না। অল্প বয়সের শিশুদের জন্য এটা খুবই প্রয়োজন। তা ছাড়া, তাদের মানসিক স্বাস্থ্যও ব্যাহত হয়। তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের যে ক্ষতিটা হচ্ছে, সেটা তো অপূরণীয়।সবশেষে সরকারের প্রতি আহ্বান, তাৎক্ষণিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে আমরা সরকারের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা দেখতে চাই। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, বিক্রি করে দিতে হচ্ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার যে প্রভাব, সেটা মারাত্মক ক্ষতিকর। সবমিলিয়ে আমার আহ্বান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার যে আপ্রাণ চেষ্টা, সেটা সরকারের মাঝে দেখতে চাই। সেটা থাকলে অবশ্যই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা সম্ভব। বলা হয়, আমাদের করোনা পরিস্থিতি অনেক ভালো। তাহলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কেন বন্ধ থাকবে? এটা হলো গা বাঁচিয়ে চলা। এভাবে চলা একটা সরকারের উচিত না। এতে কোটি কোটি ছেলে-মেয়ের ভবিষ্যৎ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।করোনার সংক্রমণ-ঝুঁকির কথা বিবেচনা করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু, এই যুক্তিটা টেকসই না। যদি অন্য সবকিছুই খোলা থাকে, তাহলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কেন খোলা রাখা যাবে না?

অনলাইনে ক্লাস হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু বেশিরভাগ শিক্ষার্থীরই ডিভাইস নেই। অনেকের ইন্টারনেট কেনার মতো সামর্থ্য নেই। এখানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হয়তো এগিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পিছিয়ে যাচ্ছে। কারণ, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে প্রান্তিক পরিবারের ছেলে-মেয়েরাই বেশি পড়ে। টেকনোলজিক্যাল ডিভাইডের কারণে আগে থেকেই পৃথিবীতে এক দল এগিয়ে, আরেক দল পিছিয়ে ছিল। এর মধ্যে পিছিয়ে থাকারা বর্তমান পরিস্থিতিতে আরও পিছিয়ে গিয়েছে ও যাচ্ছে বলে মনে হয়।শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার নীতি কোনোভাবেই সমর্থন করা যায় না। অবিলম্বে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া উচিত। ভারত থেকে শুরু করে অনেক জায়গায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা। আমাদের এখানে কেন বন্ধ, এর পেছনে কোনো যুক্তি আমি খুঁজে পাই না।ইতোমধ্যে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে, বাল্যবিয়ে বেড়েছে, সব মিলিয়ে ভালো কোনো কিছু হচ্ছে না। গবেষণায় বলা হয়, যদিও ৯৫ শতাংশ অভিভাবক তাদের সন্তানকে স্কুলে পুনরায় পাঠাতে আগ্রহী; তবুও অর্থনৈতিক অবস্থাটি এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। ২০২০ সালের জুন থেকে ২০২১ সালের মার্চ অবধি শিক্ষা খরচ বেড়েছে ১২ গুণ। ফলে শিক্ষার সুযোগপ্রাপ্তিতে সংকট তৈরি হয়েছে। স্কুলগামী ছেলেশিশুদের ৮ ও মেয়েশিশুদের ৩ শতাংশ কোনো না কোনো উপার্জন প্রক্রিয়ায় জড়িয়ে পড়েছে। গ্রামীণ অঞ্চলে যেখানে শহরের তুলনায় মানুষের আয় পুনরুদ্ধারের ও কাজের ভালো সুযোগ রয়েছে, সেখানেও এই হার বেশি।বাড়ছে আত্মহত্যা এবং আত্মহত্যা-প্রবণতা গত একবছরে বাংলাদেশে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ছাত্রছাত্রীদের মনস্তত্বের ওপর করোনার প্রভাব নিয়ে বেশ কিছু গবেষণা হয়েছে। অনলাইনভিত্তিক সেসব গবেষণায় সীমাবদ্ধতা থাকলেও, প্রায় সকল জরিপেই উঠে এসেছে এদেশের ছাত্র-ছাত্রীরা বিষণ্নতা, উদ্বেগ আর মানসিক চাপে ভুগছে। প্রায় এক তৃতীয়াংশ অংশগ্রহণকারী এরকম মানসিক অসুবিধায় ভুগছে বলে উল্লেখ করেছে।

এছাড়াও আত্মহত্যা এবং আত্মহত্যা-প্রবণতার মতো জটিল মানসিক ব্যাধিও লক্ষ করা গেছে। দেশব্যাপী ৩৯৯৭ ছাত্রছাত্রীর মধ্যে চালানো এক গবেষণায় উঠে এসেছে শতকরা ৫২.৮৭ ভাগের মধ্যে বিষণ্ণতার উপসর্গ এবং শতকরা ৪০.৯১ ভাগের মধ্যে দূর্ঘটনা পরবর্তী মানসিক বৈকল্যের উপসর্গ ছিল। আঠার থেকে ২৮ বছর বয়সি ৩৩৩১ শিক্ষার্থীর মধ্যে চালানো আরেক জরিপে দেখা গেছে, শতকরা ১২.৮ ভাগের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা রয়েছে।বিষণ্নতা, উদ্বেগ আর মানসিক চাপ ছাড়াও স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে অতিরাগ, জেদ এবং একাকীত্ববোধে ভোগার মতো মানসিক অসুবিধা দেখা যাচ্ছে।বিষণ্নতা, উদ্বেগ আর মানসিক চাপ ছাড়াও স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে অতিরাগ, জেদ এবং একাকীত্ববোধে ভোগার মতো মানসিক অসুবিধা দেখা যাচ্ছে। বন্ধ স্কুল আর লকডাউনের মতো কর্মসূচির ফলে তাদের সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়াও ব্যপকভাবে বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। শিশুর সুস্থ মানসিক ও শারীরিক বিকাশে পরিবার এবং স্কুল উভয়ের গুরুত্বপূর্ণ অবদান থাকে। যেহেতু স্কুল বন্ধ রয়েছে, তাই পরিবারের কাঁধে পুরো দায়িত্ব এসে পড়েছে। কিন্তু শিশুর বিকাশের জন্য কোনো পরিবারই আদর্শ নয়। প্রায় সকল পরিবারে কোনো না কোনো সীমাবদ্ধতা আছে।কোভিড-১৯ মহামারি এখন আর তিন মাস, ছয় মাস বা এক বছরের ব্যাপার নয়। টিকা আবিষ্কারের পর এই মহামারি বিদায় নেওয়ার যে আশা করা হয়েছিল, সেটাও এখন আর খুব জোর দিয়ে বলা যাচ্ছে না। বরং টিকা গ্রহণের পরও অনেকে এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। তাই করোনাভাইরাস যে সহজে বিদায় নিচ্ছে না, তা মোটামুটি অনুমেয়।জাতিসংঘও বলছে, মৌসুমি রোগ হিসেবে এটি পৃথিবীতে থেকে যেতে পারে। সেটা হলে বাংলাদেশেও অল্পবিস্তর করোনা রোগী সব সময় থাকবে। কিন্তু বছরের পর বছর তো আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা সম্ভব না।আধুনিক সভ্যতার প্রধান ভিত্তির অন্যতম প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা। এজন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়াটা জরুরি।

লেখক: গবেষক ও কলামিস্ট
[email protected]

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button