স্বাস্থ্য

মস্তিষ্কের ব্যবহার কমান দীর্ঘজীবন পেতে

বয়সের সাথে সাথে একজন মানুষের মস্তিষ্ক কম কাজ করা শুরু করে। যে কারণে মস্তিষ্ককে আগের মতো সচল রাখতে নানাবিধ কার্যক্রম চালানোর পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। বলা হয়, মস্তিষ্কের ওপরে বয়সের ছাপ কমাতে। মস্তিষ্ককে আগের মতোই প্রখর রাখতে চিন্তা ও বুদ্ধিমত্তার প্রয়োজন পড়ে এমন সব কাজ করা উচিত। কিন্তু আসলেই কি তাই?

সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা যায় যে, মস্তিষ্কের ওপরে কম চাপ দিলে মানুষ অনেক বেশিদিন বাঁচেন। মেডিকেল জার্নাল ‘নেচার’ এ প্রকাশিত এই গবেষণায় দেখানো হয় যে, ৬০-১০০ বছর বয়সী মানুষের মস্তিষ্কের ওপরে পরীক্ষা চালিয়ে তারা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন।

এই পরীক্ষায় উক্ত বয়সী কয়েকজন মানুষের দান করা মস্তিষ্কের টিস্যুর ওপরে গবেষণা চালানো হয়। আর তাতে দেখা যায় যে, যারা বেশিদিন বেঁচেছেন তাদের মস্তিষ্কে স্নায়ুর কার্যক্রম অনেক কম। এ ক্ষেত্রে আরইএসটি বা রেস্ট নামক একটি প্রোটিন বড় ভূমিকা রাখে বলেও জানান তারা।

এই প্রোটিন একজন মানুষের স্নায়বিক কার্যক্রমকে কমিয়ে আনে, যেটি একজন মানুষ কতদিন বাঁচবেন তার ওপরে প্রভাব রাখে। ভিন্ন ভিন্ন প্রাণীদের শরীরে রেস্ট প্রোটিনের পরিমাণ বাড়িয়ে এই একই ফলাফল পাওয়া যায়।

অন্যদিকে এই প্রোটিনের পরিমাণ কমিয়ে আনলে সেটি প্রাণীদের মধ্যে মস্তিষ্কের কার্যক্রম কমিয়ে আনা এবং মৃত্যুর সময় আগিয়ে আনার মতো প্রভাবগুলো তৈরি করতে সাহায্য করেছে। এই একই কারণে যোগব্যায়াম বা অন্যান্য মস্তিষ্ককে ধীর ও শান্ত করে দেওয়ার মতো কাজগুলো করলে সেটি আমাদেরকে সুস্থ থাকতে এবং অনেকদিন বাঁচতে সাহায্য করে।

নিউ ইয়র্কের নর্থওয়েল হেলথের নিউরোলজিস্ট গায়ত্রী দেবীর মতে, আমাদের শরীরের সবচাইতে বেশি শক্তি খরচ করা অঙ্গটি হচ্ছে মস্তিষ্ক। আর তাই যতটা সম্ভব বেশি পরিমাণ বিশ্রাম নেওয়া এবং শান্ত থাকাই আমাদের মস্তিষ্কের জন্য ভালো। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, মস্তিষ্ককে শান্ত করবেন কীভাবে? দেখে নিন কার্যকর কিছু পদ্ধতি-

শরীরের দিকে নজর দিন-

মন এবং মস্তিষ্ক কেমন থাকে তার অনেকটা নির্ভর করে একজন মানুষের শরীরের ওপরে। তাই, আপনার কোনো শারীরিক সমস্যা থাকলে সেটার সমাধান করুন। শরীরের যত্ন নিন। যোগব্যায়াম করুন। কেন আপনার শরীর ও মস্তিষ্ক কোনো সমস্যায় ভুগছে সেটা খুঁজে বের করুন। শারীরিক সুস্থতা থাকলে মস্তিষ্ক এমনিতেই শান্ত হয়ে যাবে।

শোনার অভ্যাস গড়ে তুলুন-

আমরা সবসময় নিজেদের কথা বলার জন্য ব্যস্ত থাকি। একটু স্থির হয়ে অন্যের কথাগুলো শুনুন। নিজের সময় আসলে তারপর কথা বলুন। এতে করে আপনার মস্তিষ্ক শান্ত থাকবে।

বিশ্রাম নিন-

আমরা হয়তো ভাবি যে, কমর্ক্ষেত্র থেকে বেরিয়ে গেলেই আমরা নির্ভেজাল এবং নিজের সময় কাটাই। ব্যাপারটি কিন্তু তা নয়। কোনো না কোনো কাজে আমরা ব্যস্ত থাকি সবসময়। তাই, একটু ফাঁকা সময় রাখুন নিজের জন্য, যখন কোনো কাজ থাকবে না। এই সময়ে চোখ বন্ধ করে ভাবুন। দেখবেন, ভালো লাগবে।

খাবার নিয়ে ভাবুন-

আপনি কোন খাবারটি খাবেন সেটি কিন্তু আপনার ইচ্ছের ওপরে নির্ভর করে। তাই, খাওয়ার সময় পুরোটা উপভোগ করুন। এমন যেন না হয় যে, যা খুশি একটা তাড়াহুড়ো করে খেয়ে নিলেন। খাবার সময় এবং উপাদান নিয়ে ভাবুন।

আর নিজের দিকে অবশ্যই খেয়াল রাখুন। সাধারণত, আমরা আমাদের মস্তিষ্কের ওপরে অতিরিক্ত চাপ দিয়ে ফেলি এবং বার্ন আউট হওয়ার আগ পর্যন্ত বুঝতে পারে না। আর বুঝলেও থামি না। চেষ্টা করুন নিজেকে সময় দেওয়ার এবং আপনার শরীর ও মনের ওপরে অতিরিক্ত চাপ না দেওয়ার। এতে করে আপনার মস্তিষ্ক সুস্থ থাকবে, শান্ত থাকবে। দীর্ঘজীবী হবেন আপনি।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Back to top button