রাজশাহী বিভাগসারাদেশ

পেশা ছাড়ছেন পত্রিকা বিতরণকারী শ্রমিকরা

সংবাদপত্র বিতরণকারী শ্রমিক, এক কথায় যাদের আমরা ‘হকার’ বলেই চিনি। কাক ডাকা ভোর থেকে শুরু হয় এই মানুষগুলোর পরিশ্রম। তাদের পরিশ্রমেই পাঠক ঘুম থেকে ওঠার আগেই বাড়িতে পৌছে দেয়া হয় পত্রিকা। অনলাইনের এই যুগে সেই কদরে ভাটা পড়ছে, করোনা মাহমারির বিরূপ প্রভাবে পত্রিকা বিক্রি ৬০ শতাংশ কমে গেছে। যার বিরূপ প্রভাব সরাসরি এসে পড়েছে হকারদের আয়ে। এর মাঝে করোনা মাহামারির থাবা। নতুন করে এই পেশায় কেউ আসছে না। যারা আছেন তারাও পেশা ছেড়ে অন্য কোনো কাজের কথা ভবছেন।
একজন হকারের মাসিক কোন বেতন থাকে না। থাকে না বোনাস বা উৎসব ভাতা। পত্রিকা বিক্রি করে সেই পত্রিকার কমিশনের টাকা দিয়েই চলে তাদের সংসার। পত্রিকা অফিস ভেদে ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ কমিশন দেয়া হয় হকারদের। অর্থাত একটি পত্রিকার মূল্য যদি ১০ টাকা হয়, তা বিক্রি করে ৩ টাকা থেকে ৫ টাকা পেয়ে থাকেন একজন হকার। তবে এখন পাঠকদের মাঝে ৫ টাক মূল্যের পত্রিকার চাহিদা বেশি, আর তাই পাঠকের কথা মাথায় রেখে নতুন প্রকাশিত পত্রিকাগুলো কম মূল্যের পত্রিকাই বেশি বের করছে। একেতো পত্রিকা বিক্রি কম তার ওপর পত্রিকার মূল্য কমে যাওয়ায়, তাদের কমিশনেও মারাত্মক ভাটা পড়েছে। উৎসবের দিনগুলোতে সংবাদপত্র বিতরণকারী এই শ্রমিকদের আয় আরও কমে আসে। কারণ সেসময় অফিস-আদালত বন্ধ থাকে, অনেকে পত্রিকা নেয়া বন্ধ করে দেয়।
করোনা মাহামারির আগে তাড়াশে হকারদের দুইটি সংগঠনে ২০০ জনের বেশি পত্রিকা বিতরণ শ্রমিক কাজ করতেন। তবে করোনার মধ্যে পত্রিকার বিক্রি কমে আসায়, সেই সংখ্যা এখন ১৫০ জনে দাঁড়িয়েছে। অর্ধশত হকার এই পেশা বদলে অন্য কোথাও দিনমজুর, রাজমিস্ত্রী নয়তো কৃষি শ্রমিকের কাজ করছেন।
তাড়াশ উপজেলার স্থানীয় হকারদের মধ্যে জয়নাল, এনতাজ,হোসেন অন্যতম। তাদের দেয়া তথ্য মতে, এখন গড়ে ১৫০ পিস পত্রিকা বিক্রি করে এক জন হকার। তবে করোনার পূর্বে তারা ৩০০পিসের মতো পত্রিকা বিক্রি করতেন।
তাড়াশ পত্রিকা বিতরণকারী এজেন্সির মধ্যে তাড়াশ উপজেলার মো. জয়নাল এজেন্সি অন্যতম। প্রতিষ্টানটির মালিক জানান, যখন যে দল সরকারে থাকে তাদের দলের নেতা, মন্ত্রী, মেয়র বা জনপ্রতিনিধিসহ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সরকারি আমলা ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সমালোচনা বা তাদের দুর্নীতি প্রকাশের মতো সংবাদের প্রতি পত্রিকার পাঠকদের আগ্রহ বেশি। তথ্য প্রযুক্তির বদৌলতে সংবাদ এখন সাধারণ মানুষের হাতের মুঠোয় চলে এসেছে। সেই সাথে করোনা মহামারি। করোনার মধ্যে দেশের মানুষের মাঝে ইন্টারনেটের ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব বিষয় পত্রিকা বিক্রির ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে।
তাড়াশ উপজেলার চলন বিল বার্তার সভাপ্রতি আঃ রাজ্জাক রাজু জানান, করোনা মাহামারি ও অনলাইনে গণমাধ্যমের দ্রুত বিকাশের ফলে বচর্তমানে ৬০ শতাংশ পত্রিকা বিক্রি বন্ধ হয়ে গেছে। সংবাদপত্র বিতরণ শ্রকিদের বেতন ও বোনাস নাই। উৎসবের দিনগুলোতে সংবাদ বিতরণকারী শ্রমিকদের আয় আরও কমে আসে। এসব এজেন্টদের মূল মালিকরা প্রতিষ্ঠানে বসেন না দীর্ঘ ৫ থেকে ৬ বছর। এতে করে দূরত্ব বাড়ছে পত্রিকা বিতরণকারী শ্রমিক ও এজেন্টদের মধ্যে।
সংবাদপত্র বিতরণ শ্রমিকদের এই নেতা আরও জানান, বাজারে ১২ পাতার পত্রিকা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে পত্রিকার মূল্য কমে এসেছে। পাঠকচাহিদা ৫ টাকার পত্রিকার প্রতি বেশি। এতে শ্রমিকদের কমিশন কমে আসছে।
নতুন কোন পত্রিকা বের হলে পত্রিকা অফিসগুলো পত্রিকা বিতরণ শ্রমিকদের সাথে যোগাযোগ করে না উল্লেখ করে তিনি জানান, এতে উভয়ের ক্ষতি। পত্রিকা বিতরণ শ্রমিকদের সংগঠনের দাবি, জাতীয় পত্রিকাগুলোর অনলাইন ভার্শনে ই-পেপার কিছু দিনের জন্য বন্ধ রাখলে হয়তো পত্রিকা বিক্রি বৃদ্ধি পাবে। পত্রিকা বিতরণ শ্রমিকদের ৫০ শতাংশ কমিশন দেয়া হোক। পত্রিকা বিতরণ শ্রমিকদের সন্তানদের শিক্ষা চালু রাখতে প্রতিটি পত্রিকা থেকে অন্তত ২ লাখ টাকা করে ইউনিয়নগুলোকে প্রদানের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। যেখাটে পেটে ভাত নেই সেখানে সন্তানদের শিক্ষা চালিয়ে যেতে শ্রমিকদের হিমশিক খেতে হচ্ছে, অনেকের সন্তান শিক্ষা গ্রহণ থেকে সরে গেছে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে তারা আবেদন জানিয়েছেন, সদস্যদের সন্তানদের শিক্ষার সুব্যবস্থা ও নিশ্চয়তা করে দেয়া হোক।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button