বিনোদন

‘জীবনটা ছোট, কিন্তু অনেক সুন্দর’

তারকা হয়ে গেলে যাপিত জীবনে পরিবর্তন আসে বেশ। আট-দশজন সাধারণ মানুষের মতো চলা যায় না। হুট করেই কোনো জায়গায় যাওয়া যায় না। বলা যায়, সব কিছুতেই চলে আসে অদৃশ্য এক বাউন্ডারি। যা পেরোনো কঠিন। বিশেষ করে শোবিজ তারকারা খ্যাতির বিড়ম্বনায় পড়েন বেশি। আর সিনেমার মানুষ হলে তো কোনো কথাই নেই। সাধারণ মানুষ থেকে যখন সিনেমার তারকা হয়ে ওঠেন, তখন শুরু হয় খ্যাতির বিড়ম্বনা। ত্যাগ করতে হয় নিজের শখ আহদ্মাদ। এই শখ আহদ্মাদ যে পূরণ করতে ইচ্ছে হয় না, তা কিন্তু নয়। তাদের ইচ্ছে হয় বন্ধুদের সঙ্গে খোলা আকাশের নিচে আড্ডা দিতে, ইচ্ছে হয় প্রিয় মানুষের সঙ্গে খোলা জায়গায় ফুচকার প্লেট হাতে নিয়ে খেতে। পারে না তারা। খ্যাতি তাদের এমনটি করতে অদৃশ্য দেয়াল তুলে দিয়েছে। ঢাকাই ছবির চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহিও জনপ্রিয়তার চাপে এমনটি ভোগেন। তারকা হয়ে কিছুটা বিড়ম্বনায় পড়েন তিনিও। কিন্তু শখ আহদ্মাদকে চেপে রাখা মেয়েও নন তিনি।

মাহির সুন্দর জীবন: মাহির স্কুলজীবনের বন্ধুরাই যেন প্রাণ। অবসর পেলেই বন্ধুদের নিয়ে মেতে ওঠেন এই তারকা। ঢাকার বাইরে দূরের রাস্তায় নিজেই গাড়ি চালিয়ে বেরিয়ে পড়েন। কখনও সিলেট, কখনও বান্দরবানের পাহাড়ঘেরা অরণ্যে ঘুরতে চলে যান। কখনও কখনও গাড়ি রেখে বান্দরবানের পাহাড়ি রাস্তায় যাত্রীবাহী বাসের ছাদে দলবল মিলে ওঠে পড়েন। মাহি জানান, বন্ধুরা মিলে দূরে কোথাও ঘুরতে গেলে নিজেকে আর অভিনেত্রী ভাবেন না। হয়ে ওঠেন সাধারণ একজন মেয়ে। ভাবেন, জীবনটা ছোট, কিন্তু অনেক সুন্দর!

ফেলে আসা অতীত: ২০১২ সালে ‘ভালোবাসার রঙ’ ছবির মাধ্যমে যাত্রা শুরু মাহির। এখনকার মাহি বেশ পরিণত। অভিনয়, কথায়, আচরণে এসেছে পরিপকস্ফতা। অভিজ্ঞ এই মাহির কাছে প্রথম ক্যামেরায় দাঁড়ানোর অভিজ্ঞতা ও তারকা হয়ে ওঠার শুরুর দিনের কথা জানতে চাওয়া হয়। অকপটে বলে চলেন, ‘প্রথম সিনেমার কাজ যখন শেষ করি, তখন কোনো ধারণাই ছিল না। কারণ, জীবনে প্রথম ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েছিলাম। ছবিটি মুক্তির আগের দিন বলেছিল, কাল থেকে সবাই তোমাকে চিনবে, জানবে। কীভাবে সবাই আমাকে চিনবে, বুঝতাম না। সেই সময় শাকিব খান, অপু বিশ্বাস আছে। আমরা নতুন দুটি ছেলেমেয়ে কাজ করেছি। কেন দেখবে আমাদের ছবি? যখন সিনেমাটি মুক্তি পেল, তখন হলে গিয়ে দেখি শুধু মানুষের মাথা দেখা যায়। অনেক হিট করেছিল সিনেমাটি। এটি আমার ভাবনায় ছিল না। মাহির ছবিতে দেখতে এত এত মানুষ? নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিল না। যাদের সিনেমা দেখে তারকা হওয়ার শখ জেগেছে, সেই শাবনূরদের সময়ের দর্শক এসেছেন।’ দর্শক আসার কারণ কী ছিল তাহলে? ‘সেই সময়ে সত্যিই এত মানুষ দেখে অবাক হয়ে গেছি। নিজেকে নিজে প্রশ্ন করছিলাম- এরা কি বুঝে নাকি না বুঝে আসছে? একটা জিনিস আমি সব সময় বলেছি, আমার মধ্যে তেমন কিছুই নেই। ভাগ্যটা খুব ভালো। ভাগ্যে খুব বিশ্বাস করি। আমার মনে হয়, উপরওয়ালা নিজ হাতে এসব দিয়ে দিয়েছেন মানুষের কাছে এত পরিচিতি পাব। এ ছাড়া এত অল্প সময়ে এত পরিচিতি পাওয়ার কোনো নির্দিষ্ট কারণ খুঁজে পাই না।

হিট আর ফ্লপের গল্প: ‘দবির সাহেবের সংসার’ দিয়ে প্রথম ধাক্কাটা খান মাহি। ততদিনে একের পর এক হিট ছবির নায়িকার তকমা লেগে যাচ্ছে। তখন হুট করে ‘দবির সাহেবের সংসার’ ফ্লপ করল। যদিও এই ছবির ফ্লপের আগে হিট আর ফ্লপের হিসাব তেমন একটা বুঝতেন না মাহি। তার ভাষ্যে ‘আমার পরপর সব ছবিই হিট। ‘দবির সাহেবের সংসার’ ব্যবসা ভালো না করলে বুঝলাম ফ্লপ ছবি কাকে বলে। ‘ভালোবাসার রঙ’, ‘পোড়ামন’, ‘অগ্নি’, ‘অগ্নি-২’, ‘রোমিও জুলিয়েট’ সব সুপার-ডুপার হিট। পরপর এতগুলো হিট ছবির পর দবির সাহেবের সংসার মুক্তি পেল। আমি প্রথম কোনো ফ্লপ ছবির স্বাদ পেলাম। তখনই বুঝলাম সব ছবিই দর্শক একইভাবে গ্রহণ করেন না।

পছন্দের চরিত্র: গল্পের প্রয়োজনে কত চরিত্রে অভিনয় করতে হয় অভিনয়শিল্পীদের। এসব চরিত্রের কোনোটি ভালো লাগে। দাগ কেটে যায় হৃদয়ে। কোনো কোনো চরিত্র তো কালজয়ী হয়ে ওঠে। সেই চরিত্রের মধ্যে অভিনেতা বেঁচে থাকে যুগ যুগ। নিজের এমন পছন্দের কোনো চরিত্র কি আছে মাহির? সোজা করে জানিয়ে দিলেন, ‘অ্যাকশন ও রোমান্টিক দুই ধরনের চরিত্রই আমার পছন্দের। পোড়া মন ছবি দেখে সবাই আমাকে পরি ডেকেছে। আর এখন ডাকছে ‘অগ্নিকন্যা’। আমার ভালো লাগছে এই ভেবে যে, আমি হয়তো সব ধরনের চরিত্রেই ডুবে যেতে পারি।

ব্যস্ততা ও পরিকল্পনা: ‘সবাই জানেন চলচ্চিত্রের সংকট চলছে এখন। হলে দেশি ছবি না থাকায় বাইরে থেকে আমদানি করেও ছবি আনা হচ্ছে। এমন সময়ও প্রচুর নতুন ছবির প্রস্তাব আসছে আমার কাছে। করছি না। অনুরোধ রক্ষা করতে গিয়ে বেশকিছু মানহীন প্রজেক্ট করেছিলাম। আর নয়। এখন চিন্তা করছি বছরে একটা সিনেমাও করব না, যদি ভালোমানের ছবি হাতে না আসে। মোটকথা শুধু ভালো ছবিই করব।’ বলছিলেন মাহিয়া মাহি। আগামীকাল মুক্তি পাচ্ছে তার অভিনীত ছবি ‘অবতার’। ছবিটি নিয়ে বেশ আশাবাদী তিনি। অন্যদিকে স্বপ্নবাজি নামের একটি ছবির শুটিং করেছেন এ নায়িকা। অভিনয় নিয়ে পরিকল্পনার কথা জানতে চাইলে মাহি জানান, পরিকল্পনা করে কোনো কাজ হয় না আমার। হুট করেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি। যদি কোনো সকালে ঘুম থেকে উঠে মনে হয় আমার আর অভিনয় করা উচিত নয়, তাহলে আর করব না। মনে হয় না এমন কোনো সকাল আসবে। কারণ, অভিনয়কে উপভোগ করি।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button