স্বাস্থ্য

স্মৃতিশক্তিহীনতা কমাবে হিয়ারিং এইড

কানে কম শুনতে পেলেই শুধু হিয়ারিং এইড বা কানে শোনার যন্ত্র ব্যবহার করা হয়? হিয়ারিং এইডের কাজ কি কেবল এতোটুকুই? সম্প্রতি এক গবেষণায় উঠে এসেছে যে, হিয়ারিং এইড শারীরিক স্বাস্থ্যের সাথে সাথে মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও অনেক বেশি উপকারী।

যুক্তরাষ্ট্রের এক গবেষণা অনুসারে, ৬৫-৭৪ বছর বয়সী মানুষের মধ্য থেকে প্রতি চারজনের একজনই সেখানে শোনার সমস্যায় ভুগে থাকেন। তবে তাদের প্রত্যেকেই হিয়ারিং এইড পরেন না। এক্ষেত্রে দেখা যায় যে, হিয়ারিং এইড যারা পরিধান করেন তারা যারা এই এইড পরিধান করেন না তাদের চাইতে কিছুক্ষেত্রে সুবিধা ভোগ করেন।

স্মৃতিহীনতা, উদ্বিগ্নতা, হতাশা, চলতে না পারা ইত্যাদি নানারকম সমস্যা থেকে এই মানুষেরা অন্যদের থেকে বেশি দূরে থাকতে পারেন। কানে ঠিক করে না শুনতে পারলে একটা সময় নানারকম সমস্যায় ভুগে থাকেন মানুষ, এটা প্রমাণিত।

তবে, এই সমস্যাগুলো বাদেও অন্যান্য আরও অনেক সমস্যা থেকে মানুষকে দূরে থাকতে পারে হিয়ারিং এইড, সেটার প্রমাণও সম্প্রতি পাওয়া গিয়েছে। যদিও উপরে উল্লিখিত সমস্যাগুলোকে হিয়ারিং এইড প্রতিরোধ করতে পারে না। তবে এই সমস্যাগুলোকে কিছুটা হলেও বিলম্বিত করতে পারে ছোট্ট এই যন্ত্রটি।

ইউনিভার্সিটি অফ মিশিগান ইন্সটিটিউট ফর হেলথকেয়ারে করা একটি গবেষণায় মোট ১১৫,০০০ জন মানুষের উপরে পরীক্ষা চালানো হয়। এদের প্রত্যেকেই কানে কম শুনতে পান এবং তাদের বয়স ছিল ৬৬ বছরের বেশি। এই অংশগ্রহনকারীদেরকে টানা তিন বছর পর্যবেক্ষণ করা হয়। এসময় দেখা হয় যে, হিয়ারিং এইড ব্যবহারের ফলে তাদের স্মৃতিশক্তি লোপ পাওয়া, আঘাত পাওয়া, মানসিকভাবে অসুস্থ থাকা, উদ্বিগ্নতা ইত্যাদি সমস্যাগুলো কম হচ্ছে কিনা। এক্ষেত্রে ফলাফল ইতিবাচক দেখা দেয়।

দেখা যায় যে, হিয়ারিং এইড পরিধান করার ফলে-

১। আলঝেইমার বা স্মৃতিশক্তি লোপ পাওয়ার সমস্যা ১৮% কমে এসেছে
২। হতাশা এবং উদ্বিগ্নতার দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার পরিমাণ ১১% কমে এসেছে
৩। আঘাত পাওয়া বা পড়ে যাওয়ার পরিমাণ ১৩% কমে এসেছে

এক্ষেত্রে কারণ হিসেবে গবেষকেরা ভেবেছেন সমাজ থেকে বিচ্ছিন্নতা তৈরি হওয়াকে। কানে কম শুনতে পেলে মানুষ একটু একটু কর সমাজের সবার কাছ থেকে, প্রতিদিনের স্বাভাবিক কাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। ফলে, তৈরি হয় উদ্বিগ্নতা ও হতাশা। মানসিক গঠন পরিবর্তিত হয় এবং এতে করে একটা সময় স্মৃতিশক্তিহীনতা দেখা দেয়।

মানসিক নানা সমস্যাও তৈরি হয় এর কারণে। অন্যদিকে, হিয়ারিং এইড পরিধান করার ফলে এই সমস্ত সমস্যাগুলোতে রোগীকে পড়তে হয় না। ফলে স্বাভাবিক আর দশটা মানুষের মতোই সুস্থ থাকেন তিনি। যদি বয়সের সাথে সাথে নানারকম মানসিক ও শারীরিক সমস্যা তৈরি হয়, তাহলে সেটাও বিলম্বিত হয়।

তবে, এক্ষেত্রে চিন্তার ব্যাপার হলো, হিয়ারিং এইড ব্যবহার করা সম্পর্কে অনেকেই এখনো সচেতন নয়। গবেষণায় দেখা যায় যে, কানে কম শুনতে পান এমন মানুষের মধ্যে মাত্র ১২% মানুষ হিয়ারিং এইড ব্যবহার করেন। যেটি কিনা আমাদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য মোটেও ভালো নয়।

বয়সের সাথে সাথে তৈরি হওয়া সমস্যাগুলোতে এক্ষেত্রে মানুষ অনেক বেশি ভুগে থাকেন। ফুড এন্ড ড্রাগ এডমিনিস্ট্রেশন থেকে প্রচারিত একটি ঘোষণা অনুসারে, বর্তমানে হিয়ারিং এইড ব্যাপকভাবে বিক্রি করার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

হতেই পারে যে, আপনি কিছুটা কম শুনতে পান। কানে কম শোনা মানে এই নয় যে, একেবারেই কিছু না শোনা। তাই, কানে যদি কিছুটা হলেও কম শোনেন সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের সাথে কথা বলুন এবং হিয়ারিং এইড ব্যবহার করুন। তাতে করে আপনি মানসিক ও শারীরিক- দুটো দিক দিয়েই সুস্থ থাকবেন।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button