সারাদেশ

খানসামায় ভালো ফলনেও কলা নিয়ে বিপাকে চাষিরা

খানসামা (দিনাজপুর) প্রতিনিধিঃ দিনাজপুরের খানসামায় করোনায় লকডাউন থাকায় উৎপাদিত কলা নিয়ে চড়ম বিপাকে পড়েছেন চাষিরা। বিক্রয়ের সময় পেরিয়ে গেলেও মিলছে না ক্রেতা কিংবা পাইকার। এ অবস্থায় উৎপাদন খরচ তো দূরের কথা জমির আগাছা পরিস্কারের অর্থ জুটবে কী না তা নিয়েও ভীষণ দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে কলাচাষিদের।

এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, চলতি বছর উপজেলার সহজপুর, খামার বিষ্ণুগঞ্জ, গোবিন্দপুর, জোয়ার, কায়েমপুর, খামারপাড়ার নিতাই বাজার এলাকাসহ বেশ কিছু গ্রামে ৮৫ হেক্টর জমিতে কলা চাষ হচ্ছে। এসব বাগানের ১০ হেক্টর সবুরী জাতের এবং ৭৫ হেক্টর সাগর জাতের কলা রয়েছে। যার মধ্যে চলতি রমজানে বাজার ধরতে গত ১১ মাস পূর্বে লাগানো ৫০ একর জমির সাগর জাতের কলা বিক্রয়ের উপযুক্ত হয়ে রয়েছে। কিন্তু খানসামায় চলমান লকডাউনে ক্রেতাহীন হয়ে পড়েছে কলার পাইকারী বাজার। এতে করে, চড়ম বিপাকে পড়েছে রমজানে বাজার ধরতে প্রস্তুতি নেয়া কলাচাষিরা।

উপজেলার গোবিন্দপুর মেধ্যাপাড়ার কলাচাষী লুৎফর রহমান বলেন, আমি ৭৫ শতক জমিতে সাগর জাতের ৮শ কলা গাছ লাগিয়েছি। বাগানে এক বছরে খরচ হয়েছে, চারা কেনা থেকে খুঁটি লাগানোসহ সব মিলে খরচ হয়েছে প্রায় এক লাখ চব্বিশ হাজার টাকা। এখন কলা বিক্রির উপযুক্ত হয়েছে। রমজানে বাজার ধরতে প্রায় এক বছর ধরে চাষ করছি। আমি ১০ বছর ধরে কলা চাষ করি। তিন মাস আগে কলা ধরার সময় প্রতিটা গাছ তিনশ ৫০ টাকা করে দাম করেছিল। আর কয়েক দিন আগে একজন দাম করেছিল একশ ৫০ টাকা করে। কিন্তু বর্তমানে সেই ক্রেতা-পাইকার কেউ নাই। এখন জমি পরিস্কারতে ১৫ হতে ২০ হাজার টাকা লাগবে। করোনার কারণে সব কিছু উলটপালট হয়ে গেছে।

স্বাভাবিক বাজার হলে প্রতিটি ছড়ির দাম কত হত জানতে চাইলে তিনি বলেন, গত বছরের মত স্বাভাবিক হলে রমজানের সময় প্রতি গাছের কলা ৪শ টাকা করে পাইকারী বিক্রি হত। তাতে ৮শ গাছ বিক্রি হত ৩ লাখ ২০ হাজার টাকার মত। আর এখন একশ ৫০ টাকা করে হলে দাম হয় ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। তাও মনে মনে কলার খাওয়ার মত হিসেব।

অপরদিকে, খামারপাড়া গ্রামের বল্লাম বাজার এলাকার কালচাষী সত্যেন্দ্র নাথ বলেন, আমি বাড়ির চারা দিয়ে প্রায় ৩৮শতক জমিতে ৭শ ৩০টি গাছের বাগান করেছি। খরচ হয়েছে প্রায় ৭০ হাজার টাকা। এখন দুইশ ১০ করে এক পাইকার দর করেছে। তিনি ৫শ ছড়ি কলা কেনা বাবদ ৩ হাজার টাকা দিয়েছেন। সেই টাকা সারের দোকানে দিয়েছি। দোকানে ৩০ হাজার টাকা বাকি আছে। এখনও কলা কাটেনি। কী হবে বুঝতে পারছি না।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসার আফজাল হোসেন জানান, করোনা পরিস্থিতিতে বিশেষ করে চাষিরা সাময়িক অসুবিধায় পড়েছেন। তবে চাষী কিংবা পাইকারদের কেউ কৃষিপণ্য বাজারজাত করতে পরিবহণের ক্ষেত্রে সাহায্য চাইলে, আমরা প্রশাসনের সহায়তায় সেটি করতে পারব। এ সমস্যা কেটে উঠলে চাষিরা তাদের পণ্যের ন্যায্য মূল্য পাবেন বলে আশা রাখি।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Back to top button