বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিলিড নিউজ

প্রস্তাবিত ডিজিটাল, সোশ্যাল মিডিয়া ও ওটিটি বিধি

বাইরের ৪৫ সংগঠনের আহ্বানকে অমূলক মনে করছে বিটিআরসি

প্রস্তাবিত ডিজিটাল, সোশ্যাল মিডিয়া ও ওটিটি প্ল্যাটফর্ম প্রবিধানমালার খসড়া বাতিল ও পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছে অধিকার সুরক্ষা বিষয়ক ৪৫টি আন্তর্জাতিক সংগঠনের জোট। তবে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) কর্তৃপক্ষ বলছে, এখানে বাইরের কারো কিছুর বলার থাকতে পারে না; আদালতের নির্দেশেই সব হচ্ছে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ থেকেও বলা হচ্ছে এ খসড়া প্রবিধানমালায় যদি কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকে তা আদালত দেখবেন। কারণ আদালতের নির্দেশেই সকল অংশীজনের মতামত বিশ্লেষণ করে এটি চূড়ান্ত করার কাজ চলছে।

গত সোমবার আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ওয়েবসাইটে আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলোর জোটের ওই আহ্বান সংবলিত একটি চিঠি প্রকাশ করা হয়। বিটিআরসির উদ্দেশে লেখা চিঠিতে বলা হয়, ডিজিটাল, সোশ্যাল মিডিয়া এবং ওটিটি প্ল্যাটফর্মের জন্য বিটিআরসির প্রবিধানমালার খসড়া গত ৩ ফেব্রুয়ারি অনলাইনে প্রকাশিত হয়েছে। এ প্রবিধানমালা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কাঠামোর সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। এটি মানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং গোপনীয়তার অধিকারকে ক্ষুণ্ন করে। এ নীতিমালা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের এনক্রিপশন ও অনলাইন নিরাপত্তাকে দুর্বল করে। এ আইন প্রয়োগ করা হলে তা মানবাধিকারের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে এবং সাংবাদিক, ভিন্নমত পোষণকারী, অ্যাক্টিভিস্টদের আরো বেশি ঝুঁকিতে ফেলবে।

২০২০ সালে করা একটি রিটের পর ২০২১ সালের ১৮ জানুয়ারি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ওটিটিকে (ওভার দ্য টপ) অশ্লীলতা থেকে রক্ষা, রাজস্ব আদায় এবং এসব প্ল্যাটফর্ম নিয়ন্ত্রণে খসড়া প্রবিধানমালা  প্রণয়নের জন্য বিটিআরসিকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এরপর চলতি বছরের গত ১৮ জানুয়ারি এই প্রবিধানমালা চূড়ান্তের জন্য কী কী পদক্ষপে নেওয়া হয়েছে তার অগ্রগতি প্রতিবেদন আগামী ২৬ মে দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। হাইকোর্টের বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি ফাতেমা নজীবের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এসব আদেশ দেন।

গণমত সংগ্রহের জন্য গত ৩ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত বিটিআরসির খসড়া প্রবিধানমালায় বলা হয়েছে, দেশের ঐক্য, অখণ্ডতা, নিরাপত্তা বা সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকি হতে পারে এমন কোনো মন্তব্য এবং খবর প্রচার বা ফেসবুক এবং ইউটিউবসহ সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এ ছাড়া ধর্মীয় অনভূতি, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, জাতির পিতা, জাতীয় পতাকা, জাতীয় সংগিত―এসবের বিরুদ্ধে মন্তব্য এবং খবর প্রচার বা পোস্ট করাও অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। ওটিটি সেবা দেওয়ার জন্য নিবন্ধন নিতে হবে। আইন ভঙ্গ করলে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ আইনের ৬৪ ধারা অনুসারে এমনকি সংশ্লিষ্ট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানকেও মোটা অঙ্কের জরিমানার বিধান এতে রাখা হয়েছে।

আন্তর্জাতিক অধিকার সংগঠনগুলোর চিঠির বিষয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার গত বুধবার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘প্রবিধানমালা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। বিটিআরসির হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে একটি খসড়া প্রবিধানমালা করেছে। কিছু কিছু সংস্থার মানসিকতা এ রকম যে, দুনিয়ার সব গণতন্ত্র, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সব পশ্চিমা দেশগুলোতেই থাকে। অন্য কোথাও থাকে না। আমাদের রাষ্ট্র ও নাগরিকদের নিরাপত্তার বিষয়টি জরুরি, এটাও বুঝতে হবে। নিরাপত্তা বিধান করার জন্য রাষ্ট্র থেকে প্রয়োজনীয় যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়, সেটা হবে। এটা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। সে ক্ষেত্র খসড়া প্রবিধানমালায় যদি কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকে সেটি সর্বোচ্চ আদালত দেখেবেন। এটা তো এখনো চূড়ান্ত হয়নি। খসড়াটি এখনো মতামতের পর্যায়েই আছে। ’

বিটিআরসি চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার বলেন, ‘খসড়াটি হাইকোর্টের নির্দেশ অনুসারে করা হয়েছে এবং এটি উন্মুক্ত করা আছে। আমরা সকল অংশীজন এবং দেশের সব নাগরিকের কাছে এ বিষয়ে মতামত আহ্বান করেছি। যে মতামত এসেছে সেগুলো নিয়ে আমাদের একটি কমিটি কাজ করছে। কমিটি মতামতগুলো বিশ্লেষণ করে দেখবে কতটা গ্রহণ করা যায়। এরপর খসড়া চূড়ান্ত করে হাইকোর্টে পাঠানো হবে এবং হাইকোর্ট অনুমোদন করলে প্রবিধানমালা চূড়ান্ত হবে। হাইকোর্ট আমাদের মে মাস পর্যন্ত সময় দিয়েছে এবং ওই সময়ের মধ্যে এটি পাঠানো হবে। ’

তিনি আরো বলেন, ‘আন্তর্জাতিক অনেক সংগঠন অনেক কিছুই বলবে; কিন্তু আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে তাদের মতামত দেওয়া কতটা সঠিক সে প্রশ্নও রয়েছে। তারা খসড়াটি পুরোপুরি প্রত্যাহার করতে বলেছে; কিন্তু তা সম্ভব নয়। কারণ আমরা ইচ্ছাকৃতভাবে এটি করিনি। আন্তর্জাতিক এসব সংগঠনের দাবি প্রকারান্তরে আমাদের আদালতকে অসম্মান করছে। ’

এ বিষয়ে মোবাইল ফোন অপারেটরদের সংগঠন ‘এমটব’ মহাসচিব ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম ফরহাদ (অব.) বলেন, ‘বিটিআরসির ওটিটি গাইডলাইন নিয়ে যে কলসালটেশন চলছে তাতে এমটব মতামত দিয়েছে। এ ব্যাপারে আরো আলোচনা হবে বলে আমরা প্রত্যাশ করি। ’

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button