রাজনীতিলিড নিউজ

কংগ্রেসে প্রার্থী হতে চান না যুবলীগ নেতারা : ক্যাসিনো জুজু

আওয়ামী লীগের অন্যতম অঙ্গ-সংগঠন আওয়ামী যুবলীগ। ক্ষমতাসীন দলটির ভ্যানগার্ডও বলা হয় যুবলীগকে। এই সংগঠনটি বিরোধী দলের আন্দোলন-সংগ্রাম মোকাবেলায় রাজপথে সাহসী ভূমিকা রেখে আসছে। এ কারণে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই সংগঠনটি বেশ সুনাম কুড়িয়েছে। ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে দু-একটি ব্যতিক্রম বাদে প্রায় প্রতিটি সম্মেলনে বলিষ্ঠ নেতৃত্ব পেয়েছে যুবলীগ। এ কারণে আওয়ামী লীগ সরকারে থাকলে বিরোধী দলের আন্দোলন-সংগ্রাম মোকাবেলায় এবং বিরোধী দলে (আওয়ামী লীগ) থাকলে বিক্ষোভে রাজপথ কাঁপিয়েছে যুবলীগ।

দেশের সব রাজনৈতিক দলের অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলোর মধ্যে যুবলীগ যে সবচেয়ে শক্তিশালী, সেটি রাজনীতি সচেতনরা এক বাক্যে মেনে নেবেন। দৃশ্যমান এই সত্যটি যারা মানতে চাইবেন না তারা শুধু তর্কের জন্যই এমনটি করবেন। সংগঠন হিসেবে যুবলীগের প্রশংসা যেমন আছে, তেমনি বদনামও কম নয়। সেটি নেতৃত্বের কারণেই। চলমান মাদক, সন্ত্রাস ও দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে যুবলীগের প্রভাবশালী নেতাদের নাম চলে আসছে। অনেকে গ্রেফতারও হয়েছেন।

অনেকে গ্রেফতারের অপেক্ষায়। প্রতিষ্ঠার পর এবারের মতো এতটা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি যুবলীগ কখনও পড়েছে কিনা সেটি তর্কসাপেক্ষ ব্যাপার। যুবলীগ নেতাদের টেন্ডারবাজি, ক্যাসিনো ব্যবসা ও চাঁদাবাজির অভিযোগে টানা তিনবার ক্ষমতায় আওয়ামী লীগের অর্জন ম্লান হতে বসেছে। ১৯৭২ সালের নভেম্বরে শেখ ফজুলল হক মণির হাত ধরে যুবলীগের পথচলা শুরু। এর পর থেকে যারাই যুবলীগের নেতৃত্বে এসেছেন প্রত্যেকেরই দীর্ঘ রাজনৈতিক ক্যারিয়ার সম্পন্ন ছিলেন।

তাদের মেধা, রাজনৈতিক দূরদর্শিতা ও সাংগঠনিক দক্ষতা ছিল আকাশচুম্বি। যুবলীগের নেতৃত্ব দিয়েছেন আমির হোসেন আমু, মোস্তাফা মহসীন মন্টু, ফজলুল করিম সেলিম, জাহাঙ্গীর কবির নানক, মির্জা আজমদের মতো দক্ষ সংগঠক। তাদের কোনো কমিটি নিয়েই এতটা সমালোচনা হয়নি, যতটা হচ্ছেন বর্তমান কমিটি নিয়ে। যুবলীগের খোদ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় সংগঠনের বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগের তীর উঠেছে।

তাদের কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ দুর্নীতির মাধ্যমে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা অর্জনের। কারও কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, মাদক ব্যবসার। এই যখন অবস্থা তখন এবার নতুন কংগ্রেসের সামনে দাঁড়িয়ে আছে আওয়ামী যুবলীগ। ক্ষমতাসীন দলের এই যুবসংগঠনের ৭ম কংগ্রেস আগামী ২৩ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠেয় এই কংগ্রেসে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

অনিয়ম-দুর্নীতিবিরোধী চলমান শুদ্ধি অভিযানে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের মধ্যে সবচেয়ে বড় ঝড় গেছে যুবলীগের ওপর দিয়ে। ক্যাসিনো কারবার, চাঁদাবাজি, টেন্ডারাজিসহ একাধিক অভিযোগ সংগঠনটির শীর্ষ নেতাদের নামে। যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে জেলা-উপজেলা এমনকি ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মীদের নামে এত এত অভিযোগ উঠেছে যে, পুরো সংগঠনই দূষিত হয়ে গেছে বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতারা। এ কারণে গোটা যুবলীগকেই ঢেলে সাজাতে চান আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল একাধিক সূত্রে জানা গেছে, এবারের সম্মেলনের মধ্য দিয়ে যুবলীগের দীর্ঘদিনের বলয় ভাঙতে চান শেখ হাসিনা। এর আগে আওয়ামী লীগের একজন সভাপতিমন্ডলীর সদস্য সরাসরি যুবলীগের অভিভাবক হিসেবে সংগঠনটির দেখভাল করতেন। কিন্তু এবার প্রধানমন্ত্রী নিজেই যুবলীগের কমিটির বিষয়টি দেখবেন। ইতোমধ্যে যুবলীগের কেন্দ্রীয় ও মহানগরের শীর্ষ নেতা নির্বাচনের বিষয়ে খোঁজখবর নিতে শুরু করেছেন তিনি।

কিছুদিন আগেও যে নেতা সংগঠনের নেতৃত্ব পেতে মুখিয়ে ছিলেন তিনিও আজ নীরব। শীর্ষ কয়েক নেতাও আছেন আতঙ্কে। নেতৃত্ব প্রত্যাশীরা ভেতরে ভেতরে কাজ করলেও প্রকাশ্যে আসতে নারাজ। যদি না ক্যাসিনোকাণ্ডে নাম এসে যায়! বেশিরভাগ নেতাই কংগ্রেসে প্রার্থী হবেন না বলে জানান গেছে। কারণ তাদের অনেকেই ক্যাসিনো কাণ্ডে জড়িত নেতাদের কাছ থেকে সুবিধাভোগী।

প্রার্থিতার বিষয়ে প্রশ্ন করলে সোজাসাপ্টা উত্তর- ‘নেত্রী (শেখ হাসিনা) দিলে আছি, না দিলে নাই।’ তবে প্রকাশ্যে তৎপরতা না থাকলেও সবাই তাকিয়ে আছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিকে। এবারের যুবলীগের কাউন্সিলে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে কমিটিতে, এটি নিশ্চিত। ক্যাসিনো ব্যবসায়ী, দুর্নীতি ও টেন্ডারবাজ, চাঁদাবাজ নেতারা বাদ পড়বেন। নেতৃত্বে আনা হবে ক্লিন ও স্বচ্ছ ভাবমূর্তির নেতাদের। আসতে পারে দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত ও বঙ্গবন্ধু পরিবারের কেউ।

ইতিমধ্যে নতুন নেতৃত্বের সন্ধান শুরু করেছেন খোদ আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এতে সার্বিক সহযোগিতা করছে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা। প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ নেতারা জানিয়েছেন, যুবলীগের নেতৃত্ব নির্বাচনের ক্ষেত্রে পরিচ্ছন্ন ইমেজকে প্রাধান্য দেবেন প্রধানমন্ত্রী। কারণ এই সংগঠনের বর্তমান ভাবমূর্তি তলানিতে এসে ঠেকেছে। এখন এমন নেতা প্রয়োজন, যারা ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার ও সেটা ধরে রাখবেন।

যুবলীগের কংগ্রেস ও নিজের প্রার্থিতার বিষয়ে জানতে চাইলে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ বৃহস্পতিবার বলেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকে যুবলীগে কখনও ভোট হয়নি। প্রার্থীও হন না কেউ। তবে আলোচনায় থাকার চেষ্টা করেন অনেকে। কংগ্রেসের ২য় অধিবেশনে আওয়ামী লীগ সভাপতি যুবলীগের নেতৃত্ব ঘোষণা করেন। আবারও সাধারণ সম্পাদক কিংবা চেয়ারম্যান পদে থাকতে চান কিনা জানতে চাইলে ৬৫ বছর বয়সী হারুনুর রশিদ বলেন, নেত্রী (শেখ হাসিনা) যাকে চাইবেন তার নেতৃত্বেই যুবলীগ চলবে। তবে নেতৃত্বের বিষয়ে বয়সের সঙ্গে অভিজ্ঞতাও দেখা উচিত।

ইতিমধ্যে দল ও সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষু্ণ্ণকারী নেতাদের বিষয় নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি ঘোষণা করেছেন। অপরাধী যেই হোক কোনো ছাড় দেয়া হবে না বলেও জানান তিনি। ইতিমধ্যে এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশনার পর চলমান অভিযানে অনেক নেতাকর্মী গ্রেফতার ও রিমান্ড আতঙ্কে আছেন। ফলে আসন্ন সম্মেলনে প্রার্থিতা হওয়া-না হওয়া নিয়েও দোলাচলে আছেন অনেকে।

যুবলীগের আসন্ন সম্মেলনে চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ বাদ পড়ার ঝুঁকিতে আছেন বলে যুবলীগ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। ইতিমধ্যে যুবলীগ চেয়ারম্যান আড়ালে চলে গেছেন। সবশেষ গত শুক্রবার দলটির প্রেসিডিয়াম সভায় অংশ নেননি ওমর ফারুক। তার বিরুদ্ধে ক্যাসিনো হোতাদের কাছ থেকে সুবিধাভোগ করার অভিযোগ রয়েছে।

জানা যায়, যুবলীগের সর্বশেষ কমিটি হয় ২০১২ সালের ১৪ জুলাই। চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান ওমর ফারুক চৌধুরী এবং সাধারণ সম্পাদক হন হারুন-অর-রশিদ। ১৪৯ সদস্যবিশিষ্ট এই কমিটিতে চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীর অনেকটাই একচ্ছত্র অধিপত্য ছিল। পরে আরও দুজনকে নিয়োগ দিয়ে ১৫১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি করা হয়। সংগঠনে ওমর ফারুকের কথাই ছিল শেষকথা। আওয়ামী লীগের একমাত্র সংগঠন, যেখানে কর্মীরা তাদের সংগঠনের প্রধানকে ‘স্যার’ বলে সম্বোধন করতে হয়।

এদিকে ২০১৬ সালে আওয়ামী লীগের সম্মেলনকে কেন্দ্র করে অন্য সহযোগী সংগঠনগুলোর কমিটি গঠন করা হলেও যুবলীগের আর সম্মেলন হয়নি। যুবলীগের দলীয় নেতাকর্মীরা বলছেন, দীর্ঘদিন একক অধিপত্য থাকা যুবলীগ চেয়ারম্যানের ইন্ধনেই বেপরোয়া হয়ে উঠে সম্রাট-খালেদরা। অভিযোগ রয়েছে, যুবলীগের চেয়ারম্যান হওয়ার পর কেন্দ্রীয় কমিটিতে নিজের অনুগতদের বসিয়েছেন যুবলীগ চেয়ারম্যান। ঢাকা মহানগর ও দেশব্যাপী জেলা কমিটিগুলোও হয়েছেন তার পকেটের লোক দিয়ে।

নিজেকে তরুণ ভাবাপন্ন ৭১ বছর বয়সী ওমর ফারুক চৌধুরী যুবলীগের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই একক ক্ষমতাবান হয়ে ওঠেন। শুরুতে সাবেক নেতাদের পরামর্শ ছাড়াই একটি ঢাউস কমিটি গঠন করেন তিনি। অভিযোগ আছে, মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে তিনি অনেক নেতাকে কমিটিতে স্থান দিয়েছেন। পদভেদে ১০ লাখ থেকে শুরু করে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত নিয়েছেন। ফ্রিডম পার্টি ও যুবদলের অনেকে টাকার বিনিময়ে ঠাঁই পেয়েছেন যুবলীগে বলেও অনেকে অভিযোগ করেন।

যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির একাধিক নেতা জানান, বিগত সাত বছরে তারা চেয়ারম্যানের ভয়ে তটস্থ ছিলেন। মুখ বুজে সব অপকর্ম সহ্য করেছেন। সংগঠনে সব সিদ্ধান্ত তিনি এককভাবে নিয়েছেন। আমাদের শুধু সম্মতি দিতে হয়েছে। তার সিদ্ধান্তের বিপক্ষে মত দিলেই তাৎক্ষণিক বহিষ্কার, অফিসে আসতে বারণ পর্যন্ত করা হয়েছে। তারা বলেন, তার সব অপকর্ম জায়েজ করার মেশিন ছিল যুব জাগরণ প্রকাশনা। এখান থেকে নানা বই ও প্রকাশনা বের করে সবার কাছে ভালো সাজার চেষ্টা করতেন। পুরো সাত বছরে যুবলীগ বলতে আমরা শুধু তাকেই বুঝতাম।

এমন অবস্থায় যুবলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংগঠন নিয়ে চরম হতাশা সৃষ্টি হয়। তবে শুদ্ধি অভিযানের পর দৃশ্য বদলাতে শুরু করেছে। ওমর ফারুক চৌধুরী গত কয়েকদিনে একবারও যাননি ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ যুবলীগের শীর্ষ নেতৃত্বেও আসছে বড় পরিবর্তন। কারণ দক্ষিণ যুবলীগের চার শীর্ষ নেতা সভাপতি ইসমাইল হোসেন সম্রাট, সহ-সভাপতি এনামুল হক আরমান, যুগ্ম সম্পাদক মমিনুল হক সাঈদ ও সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়্যা ক্যাসিনোকাণ্ডে ধরাশায়ী হয়েছেন। এদের তিনজনই গ্রেফতার ও দল থেকে বহিষ্কার হয়েছেন।

যুবলীগের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, কিছু দিন আগেও সংগঠনের প্রভাবশালী একাধিক প্রেসিডিয়াম সদস্য শীর্ষ পদের জন্য মুখিয়ে ছিলেন। আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের বাসায়-কার্যালয়ে দৌড়াঝাঁপ করেছেন। তাদের অনেকেই ক্যাসিনো ব্যবসায় যুক্ত বলে নাম এসেছে। অনেকের নাম সরাসরি গণমাধ্যমে না এলেও গোপনীয়তা রক্ষা করে চলছেন।

প্রার্থিতা প্রকাশ করলে শুদ্ধি অভিযানে নাম চলে আসার ভয় তাড়া করছে অনেককে। এছাড়া চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, দখলবাজি ও কমিটি বাণিজ্য করে টাকা কামানো নেতাদের আছে গোপন তথ্য ফাঁস হওয়ার ভয়। সম্মেলন ঘনিয়ে এলেও এদের অনেকেই সেলফোন, ফেসবুক আইডি বন্ধ রেখেছেন। নেতৃত্বের চেয়ে মানসম্মান নিয়ে বেঁচে থাকাকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন তারা।

প্রসঙ্গত ১৪ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির এক সভায় চাঁদা দাবির অভিযোগে ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও গোলাম রাব্বানীকে অপসারণের নির্দেশ দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাশাপাশি যুবলীগ নেতাদের বিষয়েও চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। বলেন, যুবলীগের এক নেতা অস্ত্র উঁচিয়ে চলে। আরেকজন প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি করে বেড়ায়।

এর পর গণমাধ্যমে যুবলীগ নেতাদের সংশ্লিষ্টতায় ঢাকার ৬০টি জায়গায় ক্যাসিনো পরিচালনার খবর প্রকাশ হয়। ১৮ নভেম্বর ফকিরাপুলের ইয়াংমেনস, ওয়ান্ডারার্স এবং গুলিস্তানে মুক্তিযোদ্ধা ক্রীড়া সংসদে অভিযান চালিয়ে ক্যাসিনোর সরঞ্জাম, বিপুল পরিমাণ মদ ও ৪০ লাখের বেশি টাকা উদ্ধার করে র্যা ব। ক্যাসিনো পরিচালনার অভিযোগে ওই দিনই যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে গ্রেফতার করা হয়, যিনি ইয়াংমেনস ক্লাবের সভাপতি ছিলেন।

পাশের ওয়ান্ডারার্স ক্লাব থেকেও জুয়ার সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। এ ক্লাব পরিচালনার নেতৃত্বে ছিলেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা মো. আবু কাওসার। এর পর ধানমণ্ডির কলাবাগান ক্রীড়াচক্রে অভিযান চালিয়েও ক্যাসিনো চালানোর প্রমাণ পায় র্যা ব। অস্ত্র-গুলি ও ইয়াবাসহ গ্রেফতার করা হয় ক্লাবের সভাপতি কৃষক লীগের সহসভাপতি শফিকুল আলম ফিরোজকে।

এর মধ্যে যুবলীগ নেতা পরিচয় দিয়ে ঠিকাদারি করা গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জিকে শামীমকে গ্রেফতার করা হয়। পরে গ্রেফতার করা হয় মোহামেডান ক্লাবের ডিরেক্টর ইনচার্জ ও বিসিবির পরিচালক লোকমান ভূঁইয়াকে।

দুবাই থেকে গ্রেফতার করা হয় শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানকে। পরে গ্রেফতার করা হয়েছে ক্যাসিনো সম্রাট যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটকে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চলমান অভিযানকে ‘শুদ্ধি অভিযান’ নাম দিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সন্ত্রাস, চাঁদবাজি, টেন্ডারবাজিসহ বিভিন্ন অনিয়মে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ক্যাসিনো ব্যবসায়ীদের ভাসানচরে পাঠানো হবে।

ক্যাসিনো ব্যবসায় যুবলীগ নেতাদের মদদ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীর বিরুদ্ধে। এরই মধ্যে তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। তলব করা হয়েছে ব্যাংক হিসাব।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button