জাতীয়

শেখ হাসিনা সোলার পার্ক প্রকল্প কাল ফের একনেকে উঠছে

তিন বছর আগে বাগেরহাটে ১০০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ পার্ক করার অনুমোদন দেওয়া হলেও এখন স্থান পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে জামালপুরের মাদারগঞ্জে। তিন বছর আগে এটি বাগেরহাটে করার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়। এখন তিন বছর পর প্রকল্পটির স্থান পরিবর্তন করা হচ্ছে। ফলে ফের নতুন করে অনুমোদন নিতে হচ্ছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ভারতের (এলওসি) ঋণ নিতে হচ্ছে। ঋণের শর্ত হলো ৭৫ শতাংশ মালামাল ও সেবা প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে সংগ্রহ করতে হবে। কাল মঙ্গলবার একনেকে প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য কার্যতালিকায় রাখা হয়েছে। এ সৌরবিদ্যুৎ পার্কের নাম হবে শেখ হাসিনা সোলার পার্ক।
প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, সরকার দেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনের পরিকল্পনা করেছে। এ লক্ষ্যে রুরাল পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (আরপিসিএল) জামালপুর জেলার মাদারগঞ্জ উপজেলার জোড়খালী ইউনিয়নের কাইজরচর মৌজায় ১০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। এটি ভারতীয় নমনীয় ঋণের আওতায় বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পের মোট ব্যয় ১ হাজার ৪৯৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে ভারতীয় ঋণ ১ হাজার ১১২ কোটি ৫০ লাখ টাকা। বাকি অর্থ সরকারি উৎস থেকে মেটানো হবে। প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি সভায় অনুমোদনের পর ডিসেম্বর ২০২৩ মেয়াদে বাস্তবায়নের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
আরপিসিএল সূত্র জানায়, বিভিন্ন কারণে অবশেষে এই প্রকল্পে বড় অঙ্কের ভারতীয় ঋণ আসছে। ভারতীয় ঋণের আওতায় বাগেরহাট জেলার মোল্লারহাটে ১০০ মেগাওয়াট সোলার পাওয়ার প্লান্ট স্থাপনের লক্ষ্যে আরপিসিএল ইতোমধ্যেই ২০১৮ সালে একনেক সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন করেছিল। কিন্তু প্রকল্প এলাকায় জলাশয় থাকায় তা ভরাট করা হলে পরিবেশ ও বাস্তুগত ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে জলাশয় ভরাট না করে ফিশারিজসহ অনান্য কৃষিজাত পণ্য উৎপাদনের সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়। একটি বিস্তারিত স্ট্যাভির ভিত্তিতে সোলার প্যানেল পাওয়ার প্লান্ট স্থাপন প্রকল্প নতুনভাবে ডিজাইন করার জন্য সিদ্ধান্ত হয়।
একনেক সভার নির্দেশনা অনুসারে প্রকল্প এলাকার জলাশয়ে ফিশারিজসহ অন্যান্য কৃষিজাত পণ্য উৎপাদনের সুবিধা রাখার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সোলার পাওয়ার প্লান্ট স্থাপনের সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়। কিন্তু আর্থিক ও কারিগরি দিক থেকে এ দুটি পদ্ধতিতে মোল্লারহাট প্লান্ট স্থাপনের উপযোগিতায় নেই। এর ফলে ২০১৪ সালে বিদ্যুৎ বিভাগে অনুষ্ঠিত প্রকল্প যাচাই কমিটির সভায় বিদ্যুৎকেন্দ্রটি মোল্লারহাটের পরিবর্তে জামালপুরের মাদারগঞ্জে নির্মাণের সুপারিশ করা হয়।
আরপিসিএল জানায়, যমুনার পাড়ে ‘শেখ হাসিনা সোলার পার্ক’ স্থাপনের জন্য সরকারি অনুমোদন রয়েছে। সোলার পার্কে আরপিসিএলের প্রস্তাবিত ১০০ মেগাওয়াট গ্রিড টাইপ সোলার বিদ্যুৎকেন্দ্র ছাড়াও আরও একটি ১০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
রুরাল পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড এই প্রকল্পের জন্য মাদারগঞ্জ উপজেলার জোড়খালী ইউনিয়নের কাইজারচর মৌজায় যমুনা নদীর নিকটবর্তী এলাকায় সরকারি খাস জমি নির্বাচন করা হয়েছে। ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে ২০২০ সালে ৩২৫ দশমিক ৬৫ একর জমির দীর্ঘমেয়াদি বন্দোবস্ত করা হয়েছে। যমুনা নদী প্রকল্প এলাকা থেকে ১ দশমিক ৫ কিমি দূরে অবস্থিত বিধায় সে এলাকার ভূমি তুলনামূলক স্থিতিশীল। এ ছাড়া সম্ভাব্যতা সমীক্ষায় সে এলাকায় বন্যা ও নদীভাঙনের ঝুঁকি কম রয়েছে। এ কারণে প্রকল্পের জন্য নদীর পাড়ে কোনো বাঁধ নির্মাণের প্রয়োজন হবে না। সৌর প্যানেলসমূহের সুরক্ষার জন্য প্রকল্প এলাকার চারপাশে ৬ দশমিক ৫ কিমি বাঁধ নির্মাণ করা হবে। এ ছাড়া সম্ভাব্যতা সমীক্ষার পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী প্রকল্প এলাকা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১২ মিটার উঁচু হলেও বন্যা থেকে রক্ষার জন্য ভূমি উন্নয়ন করে অতিরিক্ত ০২ মিটার উচ্চতায় (সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৪ মিটার) লেভেলিং করা হবে।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) জানায়, প্রকল্পটির জন্য ভারতীয় নমনীয় ঋণের অর্থ সংস্থান রয়েছে। তবে প্রকল্পটির অনুকূলে ঋণের পরিমাণ চূড়ান্ত করার জন্য প্রকল্পের পুনর্গঠিত ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা) দ্রুত ইআরডিতে পাঠানোর জন্য বিদ্যুৎ বিভাগকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। ভারতীয় নমনীয় ঋণের শর্ত অনুসারে প্রকল্প সহায়তার আওতায় সংগ্রহতব্য মালামাল ও সেবা ৭৫ শতাংশ ভারত থেকে সংগ্রহ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
এ বিষয়ে আরপিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. আবদুস সবুর সময়ের আলোকে বলেন, নতুন করে জামালপুরের মাদারগঞ্জে যমুনার পাড়ে দেশের সবচেয়ে বড় সোলার কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। এর ফলে দেশের বিদ্যুতের চাহিদা অনেকাংশে পূরণ হবে। যমুনার পাড়ে খাস জমিতে এটা হচ্ছে। এই জমি তেমন উর্বর নয়। তারপরও প্রকল্প এলাকায় সবজিসহ হাঁস-মুরগি পালনের ব্যবস্থা করা হবে।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button