স্বাস্থ্য

শিশুর গ্লুকোমা রোগ

রক্তনালীতে যেমন রক্তচাপ থাকে, চোখেও অনুরূপ চাপ থাকে। আসলে চোখ একটি গোলকসদৃশ অঙ্গ, যার বাইরে সাদা এক ধরনের শক্ত আবরণ বা খোলস থাকে। এর ভেতরে বেশির ভাগ অংশই তরলজাতীয় পদার্থে ভর্তি থাকে। এই তরল পদার্থ চোখের ভেতরে যে চাপের সৃষ্টি করে তাকে বলা যায় চোখের চাপ বা ইন্ট্রা অকুলার প্রেসার (IOP)। এর স্বাভাবিক মাত্রা মোটামুটিভাবে ধরা হয় ২১ মি.মি. মারকারি। (IOP) বা ইন্ট্রা অকুলার প্রেসার যখন স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যায় তখন একে বলা হয় গ্লুকোমা।

(IOP) কেন বাড়ে?
(IOP) নির্ধারণী তরলটিকে বলা হয় একুয়াস বা একুয়াস হিউমার, এটি চোখের ভেতরে পেছনের অংশে একটি বিশেষ স্থান (সিলিয়ারি প্রসেস) থেকে উৎপন্ন হয় এবং সামনের দিকে প্রবাহিত হয় এবং সর্বশেষ সাদা ও কালো অংশের সংযোগস্থলে অবস্থিত এক ধরনের অতি সূক্ষ্ম নালী সমষ্টির মাধ্যমে চোখের বাইরের অংশে আসে এবং রক্তনালীতে ঢুকে রক্তের সাথে মিশে যায়। একে বলে একুয়াস ফ্লো। এই তরল প্রবাহ বা একুয়াস ফ্লো কোনো কারণে বাধাগ্রস্ত হলে বা কোনো কারণে একুয়াস উৎপাদন স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি উৎপন্ন হয়ে অনুরূপ দ্রুততায় চোখ থেকে নির্গত হতে না পারলে চোখের প্রেসার বেড়ে যায়। চোখের প্রেসার বেড়ে যাওয়ার এ অবস্থাটিকে বলা হয় গ্লুকোমা।

গ্লুকোমার ভয়াবহতা
চোখের ভেতরে পেছনের অংশে থাকে সবচেয়ে সংবেদনশীল পর্দা, যাকে বলা হয় রেটিনা। এই রেটিনা একটি নার্ভের মাধ্যমে মস্তিষ্কের সাথে সংযোগ রক্ষা করে। আলো প্রথমে চোখের ভেতরে রেটিনায় পড়ে। ফলে রেটিনাতে এক ধরনের স্নায়ু তরঙ্গের সৃষ্টি হয়, যা মস্তিষ্কে পৌঁছে দেখার অনুভূতি সৃষ্টি করে এবং আমরা দেখতে পাই। চোখের প্রেসার বৃদ্ধির ফলে রেটিনার স্নায়ুগুলো নষ্ট হয়ে যায়। ফলে একটি নির্দিষ্ট সময় পরে স্থায়ী অন্ধত্বের সৃষ্টি হয়।

গ্লুকোমা কাদের হয়?
এটি বয়স্কদের (চল্লিশোর্ধ্ব) যেমন হয় তেমনি শিশুদেরও হতে পারে। এমনকি শিশু গ্লুকোমা নিয়ে জন্ম নিতে পারে। এটিকে বলা হয় কনজেনিটাল গ্লুকোমা। এটি মেয়েশিশুর চেয়ে ছেলেশিশুদের মধ্যে বেশি পরিলক্ষিত হয়। এটি গর্ভকালীন মায়ের বিশেষ কোনো অসুখ যেমন রুবেলার জন্য হতে পারে। অথবা বাবা-মা কেউ গ্লুকোমা আক্রান্ত থাকলে সেখান থেকে শিশুদের মধ্যে রোগটি দেখা দিতে পারে। অন্যান্য কারণেও শিশুদের মধ্যে গ্লুকোমা দেখা দিতে পারে।

উপসর্গ
শিশুদের চোখের আকৃতি স্বাভাবিকের চেয়ে বড় হতে পারে।
চোখের কালো মণি ধূসর বর্ণ ধারণ করতে পারে।
চোখে পানি ঝরতে পারে।
আলোর দিকে শিশু তাকাতে পারে না।
বারবার হাত দিয়ে চোখ রগড়ায়।
কম দেখা এবং পরবর্তীকালে চোখ সব সময় কাঁপে যাকে বলে নিস্টাগমাস।

চিকিৎসা
চোখের প্রেসার কমানোর জন্য চোখে ওষুধ (ড্রপ) দেয়া যেতে পারে অথবা অপারেশনের ব্যবস্থা নিতে হবে। তবে একজন চক্ষুবিশেষজ্ঞ পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরই সঠিক ব্যবস্থাপত্র দিতে সক্ষম হবেন।
মনে রাখতে হবে, স্থায়ী অন্ধত্বের অন্যতম কারণ হলো এই গ্লুকোমা। এ ব্যাপারে সর্বোচ্চ সাবধানতা অবলম্বন করাই বুদ্ধিমানের কাজ। এ সমস্যাটিকে কোনো মতেই হালকাভাবে নেয়া উচিত নয়

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button