লাইফ-স্টাইলস্বাস্থ্য

স্কিন ক্যান্সার :কারণ ও প্রতিকার

একটু সতর্ক থাকলে আপনি খুব সহজেই নিজেকে রক্ষা করতে পারবেন ক্ষতিকর স্কিন ক্যান্সারের হাত থেকে। সূর্যের কড়া রোদে বের হওয়ার আগে আপনার ত্বকের দাগগুলো পরীক্ষা করুন।

মেলানোমা-এর সঙ্গে স্কিন ক্যান্সার জড়িত। গত দুই দশক ধরে এর হার ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমেরিকান মেলানোমা ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, এটা ১৯৯২ সাল থেকে প্রতি বছর নির্দিষ্টভাবে গড়ে ৩.৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। সানস্ক্রিনের বিক্রয়ও প্রায় একইভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে (প্রতি বছর প্রায় ৪.২ শতাংশ গতিতে বৃদ্ধি)। কিন্তু সানস্ক্রিনের ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ার পরেও স্কিন ক্যান্সার হওয়ার পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। অর্থাৎ এখনও কিছু ব্যাপার আছে যেগুলোর প্রতি আমাদের সাবধান হতে হবে। এখানে স্কিন ক্যান্সার হওয়ার তিনটি ঝুঁকি বা কারণ সম্পর্কে বলা হলো যা আমরা সহজেই বুঝতে পারব এবং স্কিন ক্যান্সারের হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারব!

স্কিন ক্যান্সারের কারণ ও প্রতিকারসমূহ জলবায়ুর পরিবর্তন

হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গবেষকরা আবিষ্কার করেছেন যে, আমাদের ওজোন স্তর পাতলা হয়ে যাওয়ার পেছনে গ্রহেরও ক্রমাগত উষ্ণ কিছু অবদান আছে। যখন স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার (Stratosphere)-এর কিছু অংশ ভারি হয়ে ওঠে, তখন অতি বেগুনি রশ্মি (Ultraviolet ray) সৃষ্টি হয়, যা স্কিন ক্যান্সারের জন্য সবচেয়ে দায়ী। জলবায়ুর পরিবর্তনে বায়ুম লে জলীয় বাষ্প সৃষ্টি হয় এবং শক্তিশালী ঝড়-বৃষ্টি শুরু হয়। এই জলীয় বাষ্প বাতাসের বিভিন্ন উপাদানের সঙ্গে বিক্রিয়ার মাধ্যমে ক্লোরিন উৎপাদন করে। যার রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলাফল হলো ক্যান্সার। লিন্ডা মার্সা বলেছেন– ‘ক্লোরিনের এক পরমাণু এক লাখের বেশি ওজোন অণু ধ্বংস করে দিতে পারে’। তিনি আরও বলেছেন যে, আমাদের ওজোন স্তর যেভাবে পাতলা হচ্ছে, তাতে আরও ক্ষতিকর আল্ট্রা ভায়োলেট রশ্মি আমাদের ত্বকে এসে পৌঁছবে। এর ফলে শুধু ত্বকের ক্যান্সারের হার বৃদ্ধি পাবে না, ছানিও দেখা দিবে।

কমপ্যাক্ট ফ্লুরোসেন্ট লাইট বাল্ব (Compact fluorescent light bulb) স্কিন ক্যান্সারের জন্য শুধু সূর্য দায়ী নয়! নিউইয়র্ক স্টেট ইউনিভার্সিটি (State University) এবং স্টনি ব্রুক ইউনিভার্সিটি (Stony Brook University)-এর বিজ্ঞানীদের মতে কমপ্যাক্ট বাল্ব থেকে সূর্যের আলোর মতো একইভাবে অতি বেগুনি রশ্মি (Ultra-violet radiation) ছড়ায়। যা আমাদের ত্বকের কোষের ক্ষতি করতে পারে এবং কোন কোন ক্ষেত্রে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।

সঠিক সানস্ক্রিনের অভাব

ত্বকের সুস্থতার জন্য যেসব লোশন ব্যবহার করছেন, তা উল্টো স্কিন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে যদি আপনি সাবধান না হন। গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, ভিটামিন-এ (vit-A)-কে ফটোকার্সিনোজেনিক (photocarcinogenic) বলা হয়েছে। অর্থাৎ সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মির উপস্থিতিতে ভিটামিন-এ প্রয়োগের মাধ্যমে ত্বকের নিচে এক ধরনের বায়োক্যামিকেল (biochemical) পরিবর্তন হয়, যা পরে ক্যান্সারে রূপান্তরিত হতে পারে। ২০০৯ সালের একটি গবেষণায় দেখা যায় যে, সূর্যালোকের উপস্থিতিতে ভিটামিন-এ প্রয়োগ করলে তা টিউমার এবং বিভিন্ন ক্ষত তৈরি করতে পারে অথবা এগুলোর আকার বাড়িয়ে দেয় এবং খারাপ পরিস্থিতির দিকে যায়। Food and Drug Administration (FDA)-এর ভিটামিন-এ বিষয়ক একটি গবেষণায়ও একই কথা বলা হয়। আবার কোন কোন ক্ষেত্রে বলা হয়েছে যে ভিটামিন-এ যে স্কিন ক্যান্সারের জন্য দায়ী এটা এখনও ঠিকমতো জানা যায়নি। তারপরেও সাবধানে থাকার জন্য এমন সানস্ক্রিন ব্যবহার করা উচিত যেগুলোতে বেশি পরিমাণে ভিটামিন-এ নেই।

নিজেকে কিভাবে সুরক্ষিত রাখবেন?

১) আপনার ত্বক ঢেকে রাখুন! সব সময় বড় হাতার পোশাক, প্যান্ট এবং এমন পোশাক পরিধান করুন যা আপনাকে সূর্যের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করবে।

২) গ্রীষ্মকালে সূর্যের ইউভি(UV)-রশ্মির ক্ষতি থেকে আপনার চোখ রক্ষা করার জন্য সবসময় সানগ্লাস ব্যবহার করুন।

৩) সিএফএল (CFL) বাল্ব সব সময় হাতের কাছ থেকে বেশ দুরে রাখুন। এমনকি এক ফুট পরিমাণ কাছাকাছি কোন বাল্বের নিচে বসা উচিত নয়।

৪) কাঁচের ল্যাম্পশেড (lampshade) ব্যবহার করুন, যা কাপড় বা প্লাস্টিকের চেয়েও অনেক বেশি রেডিয়েশন ফিল্টার করতে পারে।

৫) প্রাকৃতিক আলো ব্যবহার করুন।

৬) ভিটামিন-এ যুক্ত পণ্য সাবধানতার সঙ্গে ব্যবহার করুন এবং কেনার আগে অবশ্যই লেবেল-এ লেখা দিক-নির্দেশনা (instruction) ভালভাবে পড়ে দেখুন। অবশ্যই ভিটামিন-এ গ্রহণ করার আগে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলুন। কারণ অত্যধিক পরিমাণ ভিটামিন-এ শরীরের জন্য বিষাক্ত হতে পারে।

স্কিন ক্যান্সারের কারণ জেনে নিজেদের একটু সতর্ক জীবনে বাঁধলেই এই ভয়াবহ রোগ থেকে দূরে থাকা যায়। আপনিও সতর্ক হোন থাকুন সুস্থ জীবন-যাপনে!

 

 

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button