আন্তর্জাতিকবিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

এবার বাতাসে ছুটবে নেট!

প্রযুক্তির উৎকর্ষে ইন্টারনেট জগতে বাজিমাত করে দেবে বেলুন! বাতাসে ভেসেই ছড়িয়ে দেবে ইন্টারনেট সিগন্যাল। বিরাট এলাকা জুড়ে তৈরি হবে ইন্টারনেট সিগন্যালের বলয়। ছুটবে ৪জি স্পিডে। প্রত্যন্ত এলাকা যেখানে টাওয়ার বসানো প্রায় অসম্ভব, সেখানে বাতাসে ভাসতে ভাসতেই ইন্টারনেট পৌঁছে দেবে হিলিয়াম গ্যাসে ভরা এই বেলুন।

এমন উন্নত প্রযুক্তিই এনেছে গুগলের নিয়ন্ত্রণাধীন লুন এলএলসি। গুগলেরই মূল সংস্থা অ্যালফাবেটের অধীনস্থ লুন ইন্টারনেট অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রত্যন্ত ও দুর্গম এলাকাগুলোতে ইন্টারনেট পৌঁছে দেওয়ার কাজ করে। বায়ুমণ্ডলের দ্বিতীয় স্তর অর্থাৎ স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে বেলুন উড়িয়ে ইন্টারনেট সিগন্যালের বলয় তৈরি করার এই প্রকল্পের নাম ‘লুন ইন্টারনেট প্রজেক্ট’। নিউজিল্যান্ড, আমেরিকা, দক্ষিণ আফ্রিকার পরে এবারে এই প্রজেক্ট কেনিয়াতে।

৪জি ইন্টারনেট বেলুনের টেস্টিং শুরু হয়ে গেছে কেনিয়ার প্রত্যন্ত এলাকাগুলোতে। প্রায় ৫০ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ইন্টারনেট সিগন্যালের বলয় তৈরি করবে এই বেলুনগুলো। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২০ কিলোমিটার বা ১২.৪ মাইল উচ্চতায় ভেসে বেড়াবে। এখনো পর্যন্ত ৩৫ হাজার গ্রাহক এই ইন্টারনেট বেলুনের সুবিধা পেয়েছেন।

লুনের চিফ একজিকিউটিভ অ্যালাস্টার ওয়েস্টগ্রাথ বলেছেন, ৪জি স্পিডে কাজ করবে এই ইন্টারনেট। ভয়েস কল থেকে ভিডিও কল সবই করা যাবে। ফাইল ডাউনলোড, ইমেল, স্ট্রিম ভিডিও, নেট সার্ফিং সবই করা যাবে কোনো রকম বাফারিং ছাড়াই। এখনো পর্যন্ত কেনিয়ার নানা এলাকায় বেলুন থেকে ভেসে আসা ইন্টারনেটের ডাউনলোড স্পিড পরীক্ষা করা হয়েছে ১৮.৯ এমবিপিএস (মেগাবাইট প্রতি সেকেন্ডে)। আপলোডের স্পিড প্রায় ৪.৭ এমবিপিএস।

ইন্টারনেট বেলুন কীভাবে কাজ করে?
বাতাসে বেলুন ভাসিয়ে গোটা পৃথিবীতেই ইন্টারনেট সিগন্যালের বলয় তৈরি করার চেষ্টা গুগলের দীর্ঘদিনের। ২০০৮ সাল থেকেই এই ইন্টারনেট বেলুনের প্রকল্প শুরু হয়ে গেছে। হিলিয়াম গ্যাসে ভরা বেলুন যা চলবে সৌরশক্তিতে। ট্রোপোস্ফিয়ারে যেহেতু বাতাসের গতি বেশি, ঝড়-বৃষ্টি, বিদ্যুতের চমক এই স্তরেই দেখা যায়, তাই এর ওপরের অপেক্ষাকৃত শান্ত স্তর স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারকেই বেছে নেওয়া হয়েছে বেলুন ভাসানোর জন্য। ১৮ থেকে ২৫ কিলোমিটার উচ্চতায় এই বেলুন ওয়ারলেস নেটওয়ার্কের মতো কাজ করবে। যেখানে বেলুন ভাসবে তার নীচে অন্তত ৪০ কিলোমিটার ব্যাসের পরিধি জুড়ে ইন্টারনেটের সিগন্যাল পাওয়া যাবে। যতবেশি বেলুন বেশি জায়গায় জুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া হবে, ততবেশি ওয়ারলেস নেটওয়ার্ক পরস্পরের সঙ্গে জুড়ে গিয়ে ইন্টারনেট সিগন্যালের বড় বলয় তৈরি করবে। বিস্তৃত এলাকা জুড়ে ইন্টারনেট পরিসেবা মিলবে নিরবচ্ছিন্নভাবে।

ইন্টারনেট পেতে গেলে স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের যে জায়গায় বেলুন ভাসানো হবে সেখানকার বাতাসের মতিগতি বুঝতে হবে। অর্থাৎ বাতাসের বেগ এবং তার অভিমুখ জানতে হবে। সেই ডেটা লুনকে সরবরাহ করবে ন্যাশনাল ওসেনিক অ্যান্ড অ্যাটমস্ফিয়ারিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এনওএএ)। যে গ্রাহকরা বেলুন ইন্টারনেটের সুবিধা নেবেন তাদের বাড়িতে ইন্টারনেট অ্যান্টেনা লাগানো থাকবে। সিগন্যাল বেলুন নেটওয়ার্কের মাধ্যমে পৌঁছে যাবে গ্রাউন্ড স্টেশনে। এখানে থাকবে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (আইএসপি) যা সিগন্যাল পৌঁছে দেবে ঘরে ঘরে।

২০১৩ সালে নিউজিল্যান্ডে প্রথম পরীক্ষামূলকভাবে এই ইন্টারনেট বেলুনের পরিষেবা চালু করেছিল গুগল। পরের বছর ব্রাজিলে এই ইন্টারনেট বেলুনের টেস্টিং হয়। শ্রীলঙ্কাতে ২০১৫ সাল থেকেই ইন্টারনেট বেলুন পরিষেবা চালু করেছেন গুগলের লুন। নিউজিল্যান্ডের পরে শ্রীলঙ্কাই দ্বিতীয় দেশ যেখানে এখনো ইন্টারনেট বেলুনের মাধ্যমে নেট পরিষেবা দেওয়া হয় বিভিন্ন প্রত্যন্ত এলাকায়।

সূত্র : দ্য ওয়াল।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Back to top button