আন্তর্জাতিক

অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যারের উদ্ভাবক জন ম্যাকাফির আত্মহত্যা

আত্মহত্যা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ও অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যারের স্রষ্টা জন ম্যাকাফি (৭৫)।  বুধবার স্পেনের কাতালোনিয়া প্রদেশের রাজধানী বার্সেলোনার একটি কারাগার থেকে তাকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।

বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে এ তথ্য জানিয়ে তার আইনজীবী জাভিয়ের ভিলালভা বলেন, কারাকক্ষের ভেতরে ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যা করেছেন ম্যাকাফি। হতাশা থেকেই তিনি এমন করেছেন বলে জানিয়েছেন ভিলালভা।

এক বিবৃতিতে এ সম্পর্কে কাতালোনিয়ার বিচার বিভাগ জানিয়েছে, তার মৃত্যুর ধরনে এটি স্পষ্ট যে তিনি নিজেকে স্বেচ্ছায় মৃত্যুর হাতে সমর্পণ করেছেন।  কারাগারের মেডিকেল টিম তাকে বাঁচনোর যাবতীয় চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে।

প্রযুক্তির জগতে জন ম্যাকাফির প্রধান পরিচয়- তিনি অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যারের উদ্ভাবক।  ১৯৮৭ সালে প্রথম এই সফটও্যায়ার বিশ্ব প্রযুক্তির বাজারে নিয়ে আসেন তিনি, যা তাকে দ্রুত বিলিওনিয়ারে পরিণত করে।  এর আগে নাসা, জেরক্স ও লকহিড মার্টিনের মতো প্রতিষ্ঠানে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে তার।

আশির দশকে তিনি নিজের নাম অনুসারে প্রতিষ্ঠা করেন কম্পিউটার সফটওয়্যার উৎপাদনকারী কোম্পানি ম্যাকফি।  ২০১১ সালে সফটওয়্যার জায়ান্ট ইনটেলের কাছে তা বিক্রিও করে দেন। তার পর আর ব্যবসায় জড়াননি জন ম্যাকফি।

ম্যাকাফি নামে প্রথম যে অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার বাজারে এনেছিলেন তিনি, তা এখনও সেই নামেই রয়েছে এবং বিশ্ব জুড়ে অন্তত ৫০ কোটি মানুষ এটি ব্যাবহার করছেন।

এক প্রতিবেদনে বিবিসি জানিয়েছে, উদ্যোক্তা হিসেবে বিশ্ব প্রযুক্তির বাজারে প্রথম সারিতে থাকলেও একজন কোটিপতি প্রযুক্তি উদ্যোক্তার জীবনযাপন যেমন নিয়মানুবর্তী হওয়া উচিত, ব্যক্তিগত জীবনে মোটেও তেমন ছিলেন না জন ম্যাকাফি।
বরং খানিকটা খামখেয়ালী স্বভাবের ম্যাকাফি ছিলেন বরাবরই দুর্বিনীত ও হঠকারী। ফলে বিতর্ক কখনও তার পিছু ছাড়েনি।

২০১৯ সালে নিজের টুইটার অ্যাকাউন্টে ম্যাকাফি জানান, গত আট বছর ধরে তিনি কর দেননি; কারণ কর আদায়কে তিনি অবৈধ মনে করেন। একই বছর অবৈধ অস্ত্র রাখার অভিযোগে ক্যারিবীয় অঞ্চলের দেশ ডমিনিকান রিপাবলিকে গ্রেফতার হন তিনি।

এর আগে প্রতিবেশীকে হত্যার অভিযোগে ২০১২ সালে গুয়েতেমালাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন ম্যাকাফি। তবে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা প্রমণিত না হওয়ায় ছাড়া পান।

সর্বশেষ ২০২০ সালে স্পেন থেকে তুরস্কে যাওয়ার বিমানে ওঠার আগে গ্রেফতার হন ম্যাকফি। এবার তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল করফাঁকি এবং ক্রিপ্টোকারেন্সি বিষয়ক প্রতারণার।

কর পরিশোধ না করার অভিযোগে ম্যাকাফির বিরুদ্ধে মামলা করেছিল যুক্তরাষ্ট্রের টেনেসি অঙ্গরাজ্যের কর ব্যবস্থাপনা বিভাগ। অন্যদিকে, তার বিরুদ্ধে ক্রিপ্টো কারেন্সি প্রতারণার অভিযোগ এনেছিল নিউ ইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের অর্থনীতি বিষয়ক গোয়েন্দা সংস্থা।

বিচার থেকে বাঁচতে যুক্তরাষ্ট্র ছেড়েছিলেন ম্যাকাফি এবং একটি বিলাসবহুল তরীতেই জীবন-যাপন করছিলেন। তার সঙ্গে থাকতেন স্ত্রী জেনিস ম্যাকাফি, দুজন নিরাপত্তা প্রহরী, সাতজন কর্মী ও তার চারটি কুকুর।

গত বছরের অক্টোবরে স্পেনের বার্সেলোনা বিমানবন্দরে ম্যাকাফি গ্রেপ্তার করা হয় এবং তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।  এরপর তার বিচার চলছিল স্পেনের আদালতে। বুধবার দেশটির হাইকোর্টে জানান, তাকে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দেওয়া হবে।

ম্যাকাফির আইনজীবী জাভিয়ার ভিল্লালবা বলেন, ম্যাক্যাফিকে কারাগারে আটকে রাখার কোনো কারণ ছিল না।  স্পেনের নিষ্ঠুর ব্যবস্থার শিকার হয়েছেন তিনি।

এর আগে গত মাসে স্পেনে আদালতে শুনানিতে অংশ নিয়েছিলেন ম্যাকাফি।  ওই সময় তিনি আদালতকে বলেন, তিনি যদি যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে দোষী প্রমাণিত হন তবে তাঁকে বাকি জীবন কারাগারেই থাকতে হবে।

শুনানিতে ম্যাকাফি বলেছিলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে অবিচার হচ্ছে। আমি আশা করছি, স্পেনের আদালত এটা দেখবেন।  যুক্তরাষ্ট্র আমাকে ব্যবহার করে একটি উদাহরণ তৈরি করতে চায়।’ সূত্র: বিবিসি, রয়টার্স

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button