আন্তর্জাতিক

আমাজন পোড়ানো এজেন্ডা নিয়েই ক্ষমতায় বলসোনারো

আগুনে পুড়ে ছাড়খার হয়ে যাচ্ছে পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ চিরহরিৎ বন (রেইন ফরেস্ট) আমাজন। ছোট-বড় মিলিয়ে ৪০ হাজার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা একটু একটু করে শেষ করে দিচ্ছে। সোনা-রুপা-হীরা ছাড়া তেল-গ্যাস প্রভৃতি মূল্যবান খনিজ পদার্থের ভাণ্ডার এ বন। এসব খনিজ পদার্থ অন্বেষণের জন্য গাছপালা কেটে ও আগুন দিয়ে বন পুড়িয়ে সাফ করা হয়।

পরিবেশবিদ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আমাজন পোড়ানোর এজেন্ডা বাস্তবায়নের লক্ষ্যেই ক্ষমতায় এসেছেন বলসোনারো। শুক্রবার দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

বলসোনারোর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণার সময়েই আমাজন নিধনের ইঙ্গিত পাওয়া যায়। সভা-সমাবেশে দেয়া বেশিরভাগ বক্তব্যই ছিল আমাজনকে ঘিরে এবং সেগুলো অবশ্যই ‘বন উন্নয়নের’ মোড়কে।

পৃথিবী যে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে রয়েছে তা পুরোই অস্বীকার করেন তিনি। জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত ২০১৫ সালের ঐতিহাসিক প্যারিস চুক্তি থেকে ব্রাজিলকে প্রত্যাহারের প্রতিশ্রুতিও দেন। আমাজন বনাঞ্চলে সক্রিয় পরিবেশবাদী বিভিন্ন সংগঠন-সংস্থা বিতাড়িত করার শপথ নেন।

প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেয়ার সময়ও আমাজনের উন্নয়নে জোর দেবেন বলে জানান তিনি। পরিবেশ ও জলবায়ু বিরোধীদেরকেই নিজের প্রশাসন ও মন্ত্রণালয়ে নিয়োগ দিয়েছেন। পরিবেশমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হয়েছেন দুই পরিবেশবিরোধী আইনপ্রণেতা। বলসোনারোর এসব কর্মকাণ্ডে আগে থেকেই সতর্ক করে আসছেন পরিবেশবাদীরা।

দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন নদের তীরের ১০টি দেশের প্রায় ৫৫ লাখ বর্গ কিলোমিটারজুড়ে গড়ে উঠেছে আমাজন। বিশে আয়তনে যুক্তরাষ্ট্রের আয়তনের প্রায় অর্ধেক। পৃথিবীর ২০ শতাংশ অক্সিজেনের আমদানি হয় ওই বৃষ্টি-অরণ্য থেকে। নানা নাম না জানা উপজাতির বাসস্থান আমাজন জঙ্গলে রয়েছে ১৬ হাজার প্রজাতির গাছগাছালি।

গবেষকদের মতে, এ বন প্রতিবছর ২০০ কোটি টন কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষণ করে। সে কারণে একে ডাকা হয়ে থাকে ‘পৃথিবীর ফুসফুস’ নামে। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির হারকে ধীর করতে আমাজনের ভূমিকাকে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়। কিন্তু আগুনের লেলিহান শিখা ক্রমশ গ্রাস করছে ওই চিরহরিৎ বনভূমিকে।

ব্রাজিলের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট ফর স্পেস রিসার্স (আইএনপিই) বলছে, দাবানলে প্রতি মিনিটে আমাজনের প্রায় ১০,০০০ বর্গমিটার এলাকা পুড়ে যাচ্ছে, যা একটি ফুটবল মাঠের প্রায় দ্বিগুণ আয়তনের সমান (একটি ফুটবল মাঠের আয়তন প্রায় ৫ হাজার ৩৫১ বর্গমিটার)।

সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান মতে, চলতি বছর এ পর্যন্ত ছোট-বড় প্রায় ৭৫ হাজার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। ২০১৮ সালের জুনের চেয়ে চলতি বছরের জুনে বন নিধন ৮৮ শতাংশ বেড়েছে। গত বছর পুরো জুলাইজুড়ে যতটুকু বন পুড়েছিল এ বছর জুলাই মাসের প্রথম ১৫ দিনেই তার চেয়ে ৬৮ গুণ বেশি পুড়েছে।

পৃথিবীর পরিবেশ ও জলবায়ুর জন্য এটা নিশ্চিতভাবেই শঙ্কার খবর। এভাবে চলতে থাকলে ‘কার্বন ছাকনি’ বা ‘পৃথিবীর ফুসফুস’ হিসেবে পরিচিত চিরসবুজ এ বন তার কার্বন শোষণ ক্ষমতা হারাবে। ‘পরিবেশগত বিপর্যয়’ ঘনিয়ে আসছে বলেও মনে করছেন কেউ কেউ। ফলে বনের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন পুরো বিশ্ব। পরিবেশবাদী সংগঠন ও গবেষকরা বলছেন, ব্রাজিলের রেইনফরেস্টে সৃষ্ট দাবানলের কারণ পশু পালক ও কাঠুরেরা। জমি ব্যবহার করতে তারা বনাঞ্চল পরিষ্কার করতে এসব দাবানল তৈরি করছে। আর এতে সমর্থন দিচ্ছেন দেশটির বাণিজ্যপন্থী প্রেসিডেন্ট।

আমাজনে ভয়াবহ এ পরিস্থিতির জন্য বলসোনারোর পরিবেশবিরোধী নীতিকে দায়ী করছেন তারা। কিন্তু বিশ্ব পরিসংখ্যানের এসব উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা স্বীকার করার পরিবর্তে উড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে বলসোনারোর সরকার।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button