সারাদেশ

ঘোগাদহে বাল্য বিয়ের ধাক্কা সামলিয়ে এখন ‘আসমানী’রআকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন!

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি: কুড়িগ্রামে চরম নির্যাতনের শিকার পিতৃহীন কিশোরী আসমানী এখন ঘুড়ে দাঁড়াতে চায়। বাঁচতে চায় নতুন করে। একটা কালো মেঘ তার জীবনকে তছনছ করে দিলেও প্রাথমিক ধাক্কাসামলিয়ে এখন সে স্বপ্ন দেখছে আকাশ ছোঁয়ার। তার এই স্বপ্ন দেখাতে হাত বাড়িয়েছেন কিছু হৃদয়বান মানুষ।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ঘোগাদহ ইউনিয়নের কাজলদহ গ্রাম। এই গ্রামের দিনমজুর আমজাদ হোসেন ও নাজমা বেগমের দুই কিশোরী সন্তানের মধ্যে আসমানী ছোট। দুই বোন আর মা কে নিয়ে দিন মজুর বাবা তাদেরকে অনেক কষ্টে মানুষ করছিলেন। সামান্য জমানো টাকায় বড় মেয়েকে পাশর্^বর্তী রাজার হাট উপজেলায় বাল্য বিয়ে দেয়া হয়। পড়াশুনার শখ থাকায় আসমানীকে ভর্তি করানো হয় মাদ্রাসায়। এভাবেই চলছিল তাদের ডাল-ভাতেরসংসার। আসমানী যখন ৭ম শ্রেণিতে ওঠে তখন হঠাৎ করে মারা যান বাবা আমজাদ হোসেন। তার মৃতুতে মানাজমা বেগমের মাথায় আকাশ ভেঙে পরে। কিশোরী মেয়েকে নিয়ে তিনি চরম সংকটের মধ্যে পরে যান। এই অবস্থায় মায়ের বাড়িতে চলে আসেন তিনি। দাদীর বাড়িতেই পড়াশুনা চলছিল আসমানীর।

চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে দেবর আশরাফুল সলাম পাশেই তার বাড়িতে মেয়ে সহ নাজমা বেগমকে ডাকেন। সেখানে গিয়ে জানতে পারেন আসমানীর বিয়ের আয়োজন করা হচ্ছে। ছেলে একই ইউনিয়নের আলোরচর গ্রামের নবরউদ্দির পুত্র আলামিন। আসমানীকে কিছু বুঝতে না দিয়ে মৌলভী দিয়ে বিয়ে পড়ানো হয়। বিয়ে অস্বীকার করে আসমানী। শশুরবাড়ির লোকজন চেষ্টা করেও তাকে বাড়িতে নিয়ে যেতে পারেনি। ফলে পরিবারের সবাই ক্ষীপ্ত হয়ে ওঠে। এ নিয়ে চাচা আশরাফুল, মা, বোন ও দাদী তাকে বিভিন্নভাবে মারধোর করে। একদিন ছেলেটি জোড় করে ঘরে ঢুকলে তার সাথে আসমানীর হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এসময় ছেলেটি আসমানীকে ওড়নাদিয়ে বেঁধে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে। তার চাচা তাকে নদীতে ফেলে দেওয়ার হুমকী দেয়। এতেও কথানা শোনায় ৯ হাজার টাকায় কবিরাজ এনে চিকন কঞ্চি দিয়ে আসমানীকে পেটানো হয়। এ ঘটনার পর বাড়ি থেকে পালিয়েযায় মেয়েটি।

ঘোগাদহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ আলম জানান, আসমানী নামে নির্যাতিতা মেয়েটি গভীর রাতে আমার বাড়িতে এসে জানায় সে আর বাড়ি ফিরবে না। তাকে আশ্রয় না দিলে সে আত্মহত্যা করবে। আমি মেয়েটিকে আশ্রয় দিয়ে পর দিন তার অভিভাবকদের ইউনিয়ন পরিষদে ডেকে আনি। সেখানেসালিশ বৈঠকে মেয়েটিজানায়তাকেবাড়িতে ফেরানোর চেষ্টাকরাহলে সে জীবনদিয়ে দেবে। মেয়েটিরনিরাপত্তারকথা ভেবে আসমানীকে নিজের বাড়িতে মেয়ে হিসেবে আশ্রয় দিয়েছেন চেয়ারম্যানশাহআলম।

আসমানী জানায়, আমি পড়তে চাই। আরও জানতে চাই। আমাদের সমাজে মেয়েদের মতামতের গুরুত্ব না দিয়ে তাদেরকে জোড় করে বাল্য বিয়ে দেয়া হয়। এটা উচিত নয়।

বেসরকারি এনজিও এইড কুমিল্লার জেলাইনচার্জ মিজানুররহমানজানান, আমরা মেয়েটির সেফটির কথা চিন্তা করে তাকে প্রশাসনের সাথে যোগাযোগকরিয়ে দিয়েছি। তাৎক্ষণিকভাবে বই পত্র কেনার জন্য অর্থ সহযোগিতা করেছি। ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউএনওতার দেকভালের দায়িত্ব নিয়েছেন।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিলুফা ইয়াসমিন জানান, মেয়েটির নিরাপত্তার কথা ভেবে তার পরিবারের কাছে মুছলেকা নিয়ে ঘোগাদহ ইউপি চেয়ারম্যান শাহ আলমের জিম্মায় দেয়া হয়েছে। মেয়েটির উচ্চ শিক্ষারজন্য আমরাপাশে থাকবো।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Back to top button