স্বাস্থ্য

পায়ে পানি আসার কয়েকটি কারণ ও এর প্রতিকার….

দুই পা ফুলে যাওয়া বা পায়ে পানি আসা সমস্যাটি যে কারোরই হতে পারে। এটা কোন রোগ নয় বরং শরীরের অন্য কোন সমস্যার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার ফলাফল। শরীরের বিভিন্ন প্রয়োজনীয় অঙ্গ যেমন হৃদযন্ত্র, লিভার, কিডনি, খাদ্যনালীর কাজের ব্যাঘাত ঘটলে পায়ে ও গায়ে পানি আসতে পারে।

জেনে নিন পা ফুলে যাওয়া বা পায়ে পানি আসার কয়েকটি কারণ ও এর প্রতিকার…

১/ হৃদযন্ত্রের কার্যকারিতা কমে যাওয়া: কোন কারণে যদি হৃদযন্ত্রের কার্যকারিতা কমে যায়। যেমন- উচ্চ রক্ত চাপ, হার্টের রক্ত চলাচলের ব্যাঘাত, হৃদযন্ত্রের বাল্বের সমস্যা ইত্যাদি হলে হার্টের মাংসপেশির কার্যকারিতা অনেক কমে যায়। ফলে শরীরের বিভিন্ন অংশ যেমন পায়ে, পেটে, বুকে পানি আসতে পারে। এসব সমস্যা হলে রোগীর বুকে ব্যথা, উচ্চ রক্তচাপ, বুক ধড়ফড় করা, অতিরিক্ত ক্লান্তবোধ, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দেয়।

২/ কিডনির সমস্যা: কিডনির বিভিন্ন সমস্যা যেমন নেফ্রোটিক সিনড্রোম, নেফ্রাইটিস, ও কিডনি বিকল ইত্যাদি হলে রোগীর প্রথমে মুখে, পরে বুকে ও পায়ে পানি আসে। এসব রোগীদের বেশি বেশি প্রস্রাব, বমি বমি ভাব, খাবারে অরুচি দেখা দেওয়া, প্রস্রাব ফেনা ফেনা ও রং ঘন সরিষার তেলের মত অথবা প্রস্রাবের পরিমাণ কম হওয়া ইত্যাদি লক্ষণ দেখা যায়।

৩/ লিভারের সমস্যা: লিভারের সমস্যা যেমন সিরোসিস হলে প্রথম দিকে পেটের দিকে ও পরে পায়ে ও বুকে পানি জমতে পারে। লিভারের সিরোসিস হওয়ার পিছনে কারণগুলো হলো হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাসের আক্রমণ, অতিরিক্ত মদপান, লিভারে অতিরিক্ত চর্বি জমে যাওয়া ইত্যাদি। এ ধরণের রোগীদের খাবারে অরুচি, হলুদ প্রস্রাব, রক্ত বমি ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দিতে পারে।

৪/ হরমোনের সমস্যা: হরমোনের সমস্যা যেমন শরীরে থাইরয়েড হরমোনের মাত্রা কমে গেলে পায়ে পানি আসতে পারে। এ রোগ হলে রোগীর শীত শীত লাগা, মোটা হয়ে যাওয়া, মহিলাদের মাসিকের রক্ত বেশি যাওয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়া ইত্যাদি লক্ষণগুলো দেখা দিতে পারে।

পা ফুলে গেলে বা পায়ে পানি জমার প্রতিকার
১/ ঠাণ্ডা ও গরম পানির থেরাপি: পায়ের পাতার ফোলা কমানোর জন্য কার্যকরী একটি পদ্ধতি হচ্ছে ঠাণ্ডা ও গরম পানির থেরাপি। যেখানে গরম পানি রক্ত চলাচল বৃদ্ধি ও ঠাণ্ডা পানি ফোলা ও জ্বালাপোড়া কমতে সাহায্য করে। এই চিকিৎসা পদ্ধতিতে ২টি বালতি বা গামলার একটিতে ঠাণ্ডা পানি ও অন্যটিতে গরম পানি নিতে হবে। গরম পানির বালতিতে পা ৩-৪ মিনিট ডুবিয়ে এরপর পা দুটি গরম পানি থেকে উঠিয়ে ঠাণ্ডা পানিতে ১ মিনিট ডুবিয়ে রাখতে হবে। এভাবে পর্যায়ক্রমে ১৫-২০ মিনিট এবং দিনে কয়েকবার এই প্রক্রিয়াটির পুনরাবৃত্তি করলে পায়ের ফোলা কমে যাবে।

২/ পা মালিশ করা: পা ফুলে যাওয়ার সমস্যার প্রতিকারে পা মালিশ করা সবচেয়ে ভালো উপায়। এজন্য আক্রান্ত স্থানে সরিষার তেল বা অলিভ অয়েল সামান্য গরম করে মালিশ করা যেতে পারে। পায়ের পাতার নীচ থেকে উপরের দিকে উঠিয়ে আস্তে আস্তে মালিশ করতে হবে। খুব বেশি চাপ প্রয়োগ করা যাবেনা। আক্রান্ত স্থানে এই চাপ প্রয়োগ কঠিন মাংসপেশিকে শিথিল বা ঢিলা হতে সাহায্য করে এবং রক্ত চলাচলের উন্নতি ঘটায়।

৩/ স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ: শরীরের সঠিক কার্যকারিতার জন্য লবণের প্রয়োজন থাকলেও অতিরিক্ত পরিমাণে লবণ শরীরে পানি জমতে সাহায্য করে। তাই খাবারে অতিরিক্ত লবণ গ্রহণ বর্জন করতে হবে। এছাড়া ক্যাফেইন যুক্ত খাবার যেমন চা, কফি ইত্যাদি গ্রহণের মাত্রাও সীমিত করা প্রয়োজন।

৪/ লেবু পানি খাওয়া: লেবু পানি খেলে শরীরের অতিরিক্ত তরল ও বিষাক্ত পদার্থ বাহির হয়ে পা ফোলা কমতে সাহায্য করে। এটা শরীর কে হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করে এবং এর প্রদাহরোধী উপকারিতাও আছে। এজন্য ২ টেবিল চামচ লেবুর রস ১ কাপ উষ্ণ গরম পানিতে মিশাতে হবে। সামান্য মধু মিশিয়ে মিষ্টি স্বাদ করে নেওয়া যেতে পারে। এভাবে দিনে কয়েক বার এই পানীয়টি পান করলে উপকার পাওয়া যায়।

৫/ পা উপরের দিকে রাখা: যেহেতু পানি জমে থাকার কারণে পা ফুলে যায় তাই এই পানিকে নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করলে এই সমস্যাটি থেকে রেহাই পাওয়া যায়। এজন্য ফুলে যাওয়া পা দুটো উপরের দিকে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। পা দুটো এমন উচ্চতায় রাখতে হবে যাতে হার্ট থেকে উপরের দিকে থাকে। ফলে পায়ে আবদ্ধ পানি নিষ্কাশিত হতে পারবে এবং পা ফোলা কমবে। দিনে ৪-৫ বার এবং প্রতিবার এক ঘণ্টা করে রাখা ভালো।

এসব করার পরও পায়ে পা ফুলে গেলে বা পায়ে পানি জমলে রোগীকে দ্রুত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button