বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির বর্তমান কমিটি ‘অবৈধ’

তথ্যপ্রযুক্তি খাতের ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির (বিসিএস) বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটি বিধি বহির্ভূতভাবে গঠন করা হয়েছে। ৮ সেপ্টেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব সৈয়দা নাহিদা হাবিবা স্বাক্ষরিত এক পরিপত্রে এ তথ্য জানানো হয়। দুই পক্ষের অভিযোগ পাল্টা অভিযোগের বিষয়ে আগামীকাল সকাল সাড়ে ১১টায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে বলে পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।
২০১৮ সালের ১০ মার্চ ২০১৮-২০ মেয়াদকালে বিসিএস নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সভাপতি হন ইঞ্জি. সুব্রত সরকার। দুই বছর মেয়াদী এই দায়িত্ব নিলেও গত ২ এপ্রিল নতুন সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নেন মো. শাহিদ-উল-মুনীর। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, এক মেয়াদে দুই সভাপতি আইন বহির্ভূত। আর প্রথম সভাপতি বলছেন, ‘আমি অব্যাহতি পত্র দেইনি। আমাদের নিজেদের মধ্যে যে সমঝোতা ছিল, তার পরিপ্রেক্ষিতে মো. শাহিদ-উল-মুনীরকে সভাপতির দায়িত্ব দেয়া হয়।’
বিসিএস-এর অগঠনতান্ত্রিক কর্মকাণ্ড এবং বিভিন্ন অনিয়ম বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে চারটি লিখিত অভিযোগ করেন সংগঠনের সদস্য (সদস্য নং ৫৮) এটিএম শফিক উদ্দিন আহমেদ। তার অভিযোগের প্রেক্ষিতেই একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় এবং সে কমিটির পক্ষ থেকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন স্বাক্ষরিত প্রতিবেদন গত ১৯ আগস্ট জমা দেয়া হয়।
তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে ৮ সেপ্টেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব সৈয়দা নাহিদা হাবিবা স্বাক্ষরিত একপত্রে সংশ্লিষ্টদের ১২ সেপ্টেম্বর শুনানিতে উপস্থিত হওয়ার জন্য নির্দেশনা দেন।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, অভিযোগকারী লিখিত অভিযোগে বলেছেন, বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির সংঘবিধির বিধি ১৯(খ) অনুযায়ী ২০১৮ সালের ১০ মার্চ অনুষ্ঠিত কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচনের ভোট গণনা শেষে ফলাফল প্রকাশের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তফসিল অনুযায়ী নির্বাচন বোর্ডের তত্ত্বাবধানে নবনির্বাচিত সদস্যরা তাদের মধ্য হতে সভাপতি, সহ-সভাপতি, মহাসচিব, যুগ্ম মহাসচিব এবং কোষাধ্যক্ষ দুই বছরের জন্য নির্বাচন করার কথা।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ২০১৮ সালের ১২ মার্চ নির্বাচন কমিশন দুই বছর মেয়াদী কমিটির পরিবর্তে এক বছর মেয়াদী দুটি কমিটি ঘোষণা করে; যা আইনত অবৈধ।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে গঠিত তদন্ত কমিটির লিখিত প্রতিবেদনে ‘সাক্ষ্য এবং সংশ্লিষ্ট বিধি পর্যালোচনা’ অংশে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির ২০১৮-২০২০ মেয়াদকালের কার্যনির্বাহী কমিটি গঠনের জন্য স্বদেশ রঞ্জন সাহা নির্বাচন বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং খন্দকার আতিক-ই-রাব্বানী ও কামরুল ইসলাম নির্বাচন বোর্ডের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।’
‘বাণিজ্য সংগঠন বিধিমালা ১৯৯৪ এর বিধি ২১(১) অনুযায়ী ফেডারেশন ব্যতীত অন্য বাণিজ্য সংগঠনের মেয়াদ হবে দুই বছর অথবা বিকল্প হিসেবে উক্ত সংগঠন, উপবিধি (৩) এর বিধান সাপেক্ষে এর কার্যনির্বাহী কমিটির মেয়াদ তিন বছর নির্ধারণ করতে পারবে।’
এসব বিষয় উল্লেখ করে তদন্ত প্রতিবেদনের শেষ দিকে বলা হয়েছে, ‘অভিযোগটি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, বাণিজ্য সংগঠন ১৯৯৪ এর ২১(১) বিধি এবং বিসিএস-এর সংঘবিধির ১৯(খ) বিধি অনুযায়ী এক বছর মেয়াদী দুই কমিটি গঠন করার কোনো সুযোগ নেই। বিধি ভঙ্গ করে কার্যনির্বাহী কমিটি গঠন করা হয়েছে।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে ২০১৮-২০ মেয়াদকালে বিসিএস নির্বাচনে সভাপতি ইঞ্জি. সুব্রত সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি যুগান্তরকে বলেন, ‘আমি কোনো আব্যাহতিপত্র দেইনি। মো. শাহিদ-উল-মুনীর সাময়িক দায়িত্ব পালন করছেন।’
তবে নতুন দায়িত্ব নেয়া মো. শাহিদ-উল-মুনীর বলছেন ভিন্ন কথা। যুগান্তর থেকে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি উল্টো প্রশ্ন করেছেন, ‘এক বছর মেয়াদী দুই কমিটি বিধি সম্মত না হলেও দুজন সভাপতি হতে পারবেন না এমন কোনো বিধি আছে কি? বিষয়টি যেহেতু সরকার ও নির্বাচন কমিশনের এবং বিষয়টি নিয়ে যেহেতু তদন্ত চলছে তাই সভাপতি হিসেবে আমি এ বিষয়ে আর কোনো মন্তব্য করতে চাই না।’
বিসিএস-এর একজন সাবেক সভাপতি নাম প্রকাশ না করার শর্তে যুগান্তরকে বলেন, ‘বিসিএস সভাপতি ইস্যু নিয়ে জটিল প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এসব নিয়ে যদি সমস্যা অব্যাহত থাকে তাহলে সরকার প্রশাসক বসিয়ে দিতে পারেন। আর প্রশাসক বসিয়ে দিলে এ খাতের ব্যবসায়ী ও সংগঠনের জন্য দীর্ঘ মেয়াদী ক্ষতি হয়ে যাবে। তাই বড় দুর্যোগ আসার আগেই বিধিসম্মতভাবে সভাপতির দায়িত্ব দিতে হবে।’