আন্তর্জাতিক

লাদেনের মতো বাগদাদিরও ‘সমুদ্র সমাধি, মার্কিনিদের আসল উদ্দেশ্য কী?

২০১১ সালে পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে আল কায়দা প্রধান ওসামা বিন লাদেনের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছিল মার্কিন নেভি সিল। লাদেনকে খুন করার পর তার দেহ কখনই প্রকাশ্যে আনেনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। জানানো হয়, তা সমুদ্রে সমাধি দিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেই একই পরিণতির কথা বলা হল এক সময় আল কায়দা থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করে ইরাক ও সিরিয়ায় বেড়ে ওঠা জঙ্গি সংগঠন আইএস প্রধান আবু বকর আল বাগদাদির ক্ষেত্রেও।

লাদেনকে হত্যার পর ইসলামিক নিয়ম অনুযায়ী গোসল করানো হয়। তারপর তার শরীর সাদ কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। সেনাবাহিনীরই এক কর্মকর্তা দোয়া-দরুদ পড়েন। পরে তা আরবিতে অনুবাদ করে পড়েন এক আরবিভাষী ব্যক্তি। প্রায় ৫০ মিনিটের আনুষ্ঠানিকতা শেষে লাশ সাগরে নামিয়ে দেওয়া হয়। বাগদাদির মৃত্যুর পর মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব মার্ক এসপারের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, বাগদাদির ক্ষেত্রেও একই নিয়ম মেনে সমাহিত করা হয়েছিল কিনা? এই প্রশ্নের তিনি কোনো ব্যাখ্যামূলক উত্তর না দিয়ে বলেন, আমি এমনটাই আশা করছিলাম।

লাদেনকে সমুদ্রে সমাহিত করার পর সারা বিশ্বের ইমামরা নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখান। তারা দাবি করেন, লাদেনকে মাটির নিচে সামহিত না করে ইসলামের নিয়ম ভঙ্গ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে এই ধরনের মন্তব্যের কোনো পাত্তা দেয়নি তৎকালিন মার্কিন প্রশাসন। বাগদাদিকে সমাহিত করার পর এখনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি ইমামরা।

মার্কিন সেনা সূত্রে জানানো হয়েছে, বাগদাদির দেহাংশ সমুদ্রে সমাধিস্থ করা হয়েছে। তবে কোথায় তা সমাধিস্থ করা হয়েছে সে ব্যাপারে কোনো তথ্যই দেয়নি ওয়াশিংটন। মার্কিন সেনাকর্তা মার্ক মিলি বলেন, বাগদাদির দেহাংশের শেষকৃত্য উপযুক্তভাবে সম্পন্ন হয়েছে। সশস্ত্র লড়াইয়ে নিহতদের ক্ষেত্রে মার্কিন সেনার যে নিয়ম রয়েছে সেই অনুযায়ীই সমাধি প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন মিলি।

মৃত্যুর আগে সিরিয়ার ইডলিব প্রদেশের বারিশা গ্রামে আস্তানা গেড়েছিল আইএস প্রধান। সেখানেই অভিযান চালায় মার্কিন বাহিনী। নেতাকে বাঁচানোর চেষ্টা করলেও মার্কিন বাহিনীর তীব্র আক্রমণের মুখে পড়ে পিছু হঠতে হয় আইএস জঙ্গিদের। তাদের বেশ কয়েকজনের মৃত্যুও হয়। কোণঠাসা হয়ে পালানোর চেষ্টাও করে বাগদাদি। কিন্তু সফল হয়নি। আইএসের ওই ঘাঁটিতে একটি সুড়ঙ্গে ঢুকে পড়ে বাগদাদি। কিন্তু ‘টার্গেট’-এর পিছু নেন মার্কিন বাহিনীর সদস্যরাও। শেষে সুইসাইড ভেস্ট (বোমা বাঁধা পোশাক) এর মাধ্যমে বিস্ফোরণ ঘটায় বাগদাদি। সঙ্গে ছিল তার তিন সন্তানও। বিস্ফোরণে সকলের দেহই ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়।

ধ্বংসস্তূপ থেকে দেহাংশ সংগ্রহ করে তার ডিএনএ পরীক্ষাও করে মার্কিন বাহিনী। তাতেই আইএস জঙ্গি প্রধানের পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হয় ওয়াশিংটন। এর পর তার দেহ উপযুক্ত প্রক্রিয়ায় সমাধি দেওয়ার কথা জানিয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ঠিক যেমনটা ঘটেছিল ৯/১১ হামলার মূলচক্রী, আল কায়দা প্রধান ওসামা বিন লাদেনের ক্ষেত্রেও।

এদিকে বাগদাদিকে সমুদ্রে সমাহিত করা নিয়ে নানা মহলে নানা প্রশ্ন উঠছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, যদি আইএস প্রধান বাগদাদিকে মাটির নিচে কোথাও দাফন করা হতো, তাহলে সেই স্থান তার ভক্তদের মাজারে পরিণত হয়ে যেত। মনে করা হচ্ছে এ কারণেই বিন লাদেনের মতোই বাগদাদিকেও সমুদ্রে দাফন করা হয়।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button