মরণ কামড় দিতে চায় জিম্বাবুয়ে
দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে কি করার থাকে? জিম্বাবুয়ে জানে তাদের সামনে দুটি উপায় হয় দেয়াল ভেঙে ফেলতে হবে, নইলে প্রতিপক্ষের ওপর প্রবল হুঙ্কারে ঝাঁপিয়ে মরণ কামড় দিয়ে বাঁচিয়ে রাখতে হবে নিজেদের। নিজেদের সমস্যার সঙ্গে লড়তে লড়তে পিছিয়ে পড়া জিম্বাবুয়ে বাংলাদেশের বিপক্ষে আজ চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের ম্যাচটিকে নিয়েছে ফেরার লড়াই হিসেবে।
তাদের বিশ্বাস, প্রথম দুই ম্যাচে হেরে গেলেও, দুই প্রতিপক্ষের চেয়ে অনেক পিছিয়ে থাকলেও, ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজের ফাইনালে এখনো খেলা সম্ভব। সেজন্য শেষ দুই ম্যাচই জিততে হবে। আর সেই লক্ষ্যে আফ্রিকান দলটি আজ দিচ্ছে প্রথম ঝাঁপ। সামনে বাংলাদেশ।
স্বাগতিকদের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচটা জিম্বাবুয়ে জিততেই পারত। স্বাগতিকদের অভিজ্ঞ সব ব্যাটসম্যানকে সস্তায় শিকার করেছিল তারা। শেষটায় ঝামেলা হলো টিনএজার আফিফ হোসেন রুখে দাঁড়িয়ে জয়ের পথ দেখিয়ে দেওয়ায়। মোসাদ্দেক হোসেন তাকে দিলেন যোগ্য সঙ্গ। আফিফই শেষ পর্যন্ত মূল ব্যবধান হয়ে দাঁড়ালেন বলে জয়টা পাওয়া হয়নি জিম্বাবুয়ের। আক্ষেপ তাদের। দ্বিতীয় ম্যাচে অবশ্য আফগানরা তাদের ব্যাটে-বলে সুস্পষ্ট আধিপত্য দেখিয়ে হারিয়েছে বাংলাদেশকে।
তারপরও শিরোপা জেতা সম্ভব? ‘আমি সব সময় তা বিশ্বাস করি। ভালো ব্যবধানে ম্যাচ জেতা দরকার।’ জিম্বাবুয়ে দলের সিনিয়র খেলোয়াড় শন উইলিয়ামস নিজেদের সম্ভাবনা খুব দেখছেন, ‘আমরা নির্দিষ্ট কিছু বোলারকে অন্যের চেয়ে অনেক ভালো খেলি। তাছাড়া অসম্ভব তো কিছুই নয়। আমরা যদি আমাদের সেরাটা দিতে পারি তাহলে অবশ্যই তা সম্ভব।’
এই ম্যাচে জিম্বাবুয়ে হেরে গেলে বাংলাদেশের সঙ্গে আফগানিস্তানও উঠে যাবে ফাইনালে। দুটি করে জয়ে। তিন হারে টুর্নামেন্ট শেষ হয়ে যাবে জিম্বাবুয়ের। তবে জিম্বাবুয়ে জিতলে আসরটা বেশ জমে উঠবে। তিন দলেরই সম্ভাবনা রইবে। বাকি দুই ম্যাচে প্রাণ থাকবে তখন। টুর্নামেন্টের স্বার্থে জিম্বাবুয়ের জেতা দরকার। বাংলাদেশ তো আর তা হতে দিতে চাইবে না।
খুব আত্মবিশ্বাসী কণ্ঠে কথা বললেও অলরাউন্ডার শন উইলিয়ামস জানেন তাদের সামনে প্রায় অসম্ভব এক কাজ দাঁড়িয়ে। ‘হ্যাঁ, এটা ঠিক তারা চাপে আছে।’ আফগানদের কাছে বাজেভাবে হেরে স্বাগতিকরা নিজেদের নিয়েই প্রশ্নে। উইলিয়ামসরা সেই চাপের ফায়দা নিতে চান। কিন্তু এই অবস্থাতেও তাকে স্বীকার করতে হচ্ছে, ‘আমার চোখে বাংলাদেশ সব দিক দিয়ে একটা ভালো দল।
ক্লাব পর্যায় থেকে শুরু করে সব দিকেই তাদের কাঠামো অনেক ভালো। আর তাদের দলে বেশ ভালো ও অভিজ্ঞ খেলোয়াড় আছে। যেমন সাকিব, মাহমুদউল্লাহ, মুশি। আমরা তাদের সম্মানও করি। আমাদের জন্য কোনো কিছু হালকাভাবে নেওয়ার উপায় নেই। আর আমরা শুধু আমাদের দিকে মন দিতে চাই। আমাদের করণীয়তে জোর দিতে চাই।’
প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের আত্মবিশ্বাস তলানিতে। সাকিব-মুশফিকরা মরিয়া হয়ে ফিরতে চাইছেন। কিন্তু তাদের বিফল করে দিতে পরিকল্পনা আছে জিম্বাবুয়ের। ‘বল করার সময় নাম তো দেখার দরকার নেই। দরকার হলো পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা।’ বাংলাদেশের নামি-দামিদের বিপক্ষে তাদের বোলিং পরিকল্পনা এমন, ‘বাউন্ডারি যাতে না হয় সেটা খুব বেশি জরুরি।
ওদের মতো খেলোয়াড়দের বিপক্ষে ফিল্ডিংও খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই খেলোয়াড়দের বাউন্ডারি মারার সুযোগ না দিলে চাপে ফেলা যায়। তারা শট খেলতে পছন্দ করে। এও জানি যে তারা আমাদের ওপর চড়াও হতে চাইবে। বিরাট চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে আসলে।’
সেই চ্যালেঞ্জে জেতা ছাড়া তাদের বিকল্প নেই। এই খেলায় হেরে ছিটকে যাতে না পড়তে হয় তাই জীবন বাজি ধরার ইচ্ছা। কারণ, সমস্যাজর্জরিত অবস্থা থেকে উত্তরণের পথে সবাইকে একটা বার্তা দেওয়া জরুরি। আর তা হলো সব অবস্থায় জিম্বাবুয়ে কিছু করে দেখাতে জানে। উইলিয়ামস বলছিলেন, ‘অবশ্যই (ভালো করা) গুরুত্বপূর্ণ।
যার ভেতর দিয়ে আমরা গিয়েছি তা থেকে আমরা অনেক কিছু শিখেছি। এটা খেয়াল করে দেখবেন যে আমাদের দলের বাঁধন ধীরে ধীরো জোরালো হচ্ছে, একটা দল হিসেবে গড়ে উঠছি।’ দলগত লড়াই তাদের লক্ষ্য। দল হয়ে লড়াইয়ে আজকাল বাংলাদেশ যে নিয়মিতভাবেই ব্যর্থ।