জাতীয়লিড নিউজ

আজ বিশ্ব নদী দিবস

বিশ্ব নদী দিবস রোববার (২২ সেপ্টেম্বর)। নদী রক্ষায় সচেতনতা বাড়তে প্রতি বছর সেপ্টেম্বরের চতুর্থ রোববার বিশ্বের বহু দেশে দিবসটি পালিত হচ্ছে। পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো প্রতিবারের মতো এবারও নদীর দিকে পদযাত্রা কর্মসূচির আয়োজন করেছে। এবারে দিবসটির প্রতিপাদ্য হলো- ‘নদী একটি জীবন্ত সত্তা, এর আইনি অধিকার নিশ্চিত করুন।’

১৯৮০ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর। দিনটি ছিল রোববার, সাপ্তাহিক ছুটির দিন। ব্রিটিশ কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক তরুণ শিক্ষক এবং নদীপ্রেমিক মার্ক অ্যাঞ্জেলো, তিনিই পরে হয়ে ওঠেন খ্যাতনামা নদী সংরক্ষক। মার্ক তার কয়েকজন ছাত্রছাত্রী ও বন্ধুকে ডাকলেন। তাঁদের নিয়ে চললেন থমসন নদীর পাড়ে। তাঁরা সেখানে পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালালেন। এর নাম দিলেন বিসি (ব্রিটিশ কলম্বিয়া) রিভারস ডে।

পরের বছরের সেপ্টেম্বরের শেষ রোববার তারা একই উদ্যোগ নিলেন। এই দিবসের উদ্যোগ ব্রিটিশ কলাম্বিয়া রাজ্য থেকে পুরো কানাডায় ছড়িয়ে পড়ে। পরে বিস্তৃত হয় উত্তর আমেরিকা, দক্ষিণ আমেরিকা ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। বিসি রিভারস ডের সাফল্যের হাত ধরেই এটি আন্তর্জাতিক রূপ পায়।

২০০৫ সালে জাতিসংঘ নদী রক্ষায় জনসচেতনতা তৈরি করতে ‘জীবনের জন্য জল দশক’ কর্মসূচি ঘোষণা করে। সে সময়ই জাতিসংঘ দিবসটি অনুসমর্থন করে। এরপর থেকেই জাতিসংঘের বিভিন্ন সহযোগী সংস্থা দিবসটি পালন করছে, যা দিন দিন বিস্তৃত হচ্ছে। গত বছর বিশ্বের প্রায় ৬০টি দেশে পালন করা হয়েছে বিশ্ব নদী দিবস। বাংলাদেশে ২০১০ সাল থেকে এ দিবস পালিত হচ্ছে।

এদিকে ঢাকাসহ দেশের বেশিরভাগ নদ-নদী এখন দখলদারদের কবলে। ভয়ানক দূষণের শিকার প্রতিটি নদী। নানা কারণে মরতে বসেছে দেশের নদ-নদী। পাথর ও বালু উত্তোলনের কারণে অনেক নদী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সরকারি হিসাবে নদী দখলের সঙ্গে প্রায় ৪৭ হাজার ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান জড়িত। যদিও বাস্তবে এ সংখ্যা লক্ষাধিক।

দখলবাজরা পানি প্রবাহে বাধা দিয়ে করছে মাছ চাষ। তারা দখল করেছে নদীর দুই পাড়। এমনকি প্রবহমান নদীর পানিতে বাঁশ-কাঠের মাচা তুলে বানিয়েছে ঘরবাড়ি-দোকানপাট।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ঢাকার টঙ্গী থেকে সদরঘাট হয়ে ডেমরার সুলতানা কামাল ব্রিজ পর্যন্ত বুড়িগঙ্গা, তুরাগ ও বালু নদ দূষণে জড়িত ১২০ প্রতিষ্ঠান। নারায়ণগঞ্জে নদী দূষণের তালিকায় রয়েছে ৭৪টি প্রতিষ্ঠান।

এদিকে দূষণকারীদের মধ্যে একক প্রতিষ্ঠান হিসেবে শীর্ষে রয়েছে ঢাকা ওয়াসা। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, প্রতিদিন নদীতে ২২৫ কোটি লিটার পয়ঃবর্জ্য ফেলছে ঢাকা ওয়াসা।

নদী ও পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতারা বলেছেন, বাস্তবে ঢাকার চারপাশের চার নদী এবং নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীর অবস্থা আরও করুণ। আর সারা দেশে দূষণের চিত্র ভয়ঙ্কর ও চরম উদ্বেগজনক।

১৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের হালনাগাদ করা তথ্য অনুযায়ী- ৬২ জেলায় নদী দখলবাজের সংখ্যা ৪৬ হাজার ৮৩৯ জন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দখলবাজ কুমিল্লা জেলায়। এর সংখ্যা ৫৯০৬ জন। দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে আছে নোয়াখালী ও কুষ্টিয়া। এর সংখ্যা যথাক্রমে ৪৪৯৯ ও ৩১৩৪ জন। ঢাকায় এ সংখ্যা ৯৫৯ জন।

তালিকা হলেও দখলবাজদের উচ্ছেদ-অভিযান খুব একটা হয় না। বিশেষ করে ঢাকার বাইরে নদী-দখলবাজ উচ্ছেদে অভিযান নেই বললেই চলে। ঢাকায় মাঝে-মধ্যে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে অভিযান শুরুর পর অদৃশ্য কারণে তা স্থায়ী হয় না। সংসদীয় স্থায়ী কমিটিকে দেয়া নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে ধারাবাহিক উচ্ছেদ অভিযান পরিচালানোর কথা জানানো হয়েছে।

নদী দিবস সামনে রেখে শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) রাজধানীতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর নদী রক্ষায় পদক্ষেপ নেয়। কিন্তু বিভিন্ন কারণে সেই উদ্যোগ ব্যাহত হয়। বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর অবস্থানের কারণে নদী রক্ষাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেয়া হয়েছে। সেই চ্যালেঞ্জ প্রতিহত করতে দখলদাররা নানাভাবে চেষ্টা করছে। আইনিভাবে কেউ যাতে এ কাজে বাধা দিতে না পারে, সেই লক্ষ্যে কাজ করা হচ্ছে। নদী আন্দোলনের সঙ্গে সরকার নিজেই সম্পৃক্ত। সুতরাং এ আন্দোলন সফল হবে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, নদীর সংকটে পড়ার আরেকটি বড় কারণ দূষণ। ঢাকার চারপাশের চার নদী, গাজীপুর, মানিকগঞ্জ, নরসিংদী, মুন্সীগঞ্জের বিভিন্ন নদ-নদীর দূষণ সীমাহীন। মাত্রাতিরিক্ত দূষণে সদরঘাটের বুড়িগঙ্গার পানি কুচকুচে কালো, হাজারীবাগের পানি রক্তের মতো লাল। তুরাগের পানি কোথাও কালো, কোথাও গাঢ় নীল। বালু নদের পানি ধূসর বর্ণ ধারণ করেছে।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button