লিড নিউজ

দুর্নীতি রোধে ৩৯ সুপারিশ

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ (বিআরটিএ) কর্তৃপক্ষ, সাবরেজিস্ট্রি অফিস এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে দুর্নীতির ৩২টি উৎস চিহ্নিত করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এসব দপ্তরে সরকারি পরিষেবা প্রদানে ঘুস, দুর্নীতি, হয়রানি ও দীর্ঘসূত্রতা রোধে দপ্তরগুলোকে আধুনিকায়নসহ ৩৯ দফা সুপারিশ করা হয়েছে। গত দুই বছরে সংঘটিত বিভিন্ন দুর্নীতির ঘটনায় ৬৯৫টি মামলা, ১৪ কোটি টাকা জরিমানা ও ৫০৬ কোটি টাকা ক্রোক করা হয়েছে। বর্তমানে দুদকে ৩ হাজার ৫৭০টি অভিযোগের অনুসন্ধান চলছে। পাশাপাশি কমিশনের ৩ হাজার ৪৩৪টি মামলা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। এ সময়ে সাজার হার ছিল যথাক্রমে ৭২ ও ৬০ শতাংশ।

দুদকের বার্ষিক প্রতিবেদনে (২০২০ ও ২০২১) এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবারের মতো এবারও প্রতিবেদনে কমিশনের বিস্তারিত কার্যক্রম তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনটি রোববার সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের কাছে উপস্থাপন করা হয়েছে। দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ্, কমিশনার (অনুসন্ধান) ড. মো. মোজাম্মেল হক খান, কমিশনার (তদন্ত) জহুরুল হক ও সচিব মো. মাহবুবু হোসেন প্রতিবেদনটি হস্তান্তর করেন। এবার করোনার কারণে দুই বছরের বার্ষিক প্রতিবেদন একসঙ্গে তৈরি করা হয়।

জানতে চাইলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান যুগান্তরকে বলেন, নানা প্রতিকূলতার পরও দুদক বেশ কয়েকটি মামলা করে দুর্নীতিবাজদের বিচারের মুখোমুখি করেছে। দেশে দুর্নীতি বেশি। তাই নানা কারণেই দুদকের প্রতি জনগণের প্রত্যাশা বেশি। কিন্তু কমিশন সেই প্রত্যাশা পূরণের জায়গায় যেতে পারেনি। চুনোপুঁটির পাশাপাশি রাঘববোয়ালদের প্রতিও দুদকের সমান নজর দিতে হবে। স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও নিরপেক্ষতা বজায় রেখে কমিশনের কর্মকর্তাদের কাজ করতে হবে।

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর : প্রতিবেদনে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরে দুর্নীতির ১০টি উৎসের কথা বলা হয়েছে। সেখানে উল্লেখ করা হয়, কোন কোম্পানি কোন ওষুধ তৈরি করছে, কোনটার স্ট্যান্ডার্ড কেমন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মান অনুযায়ী হচ্ছে কিনা-এ বিষয়গুলো চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সক্ষমতার ঘাটতি রয়েছে। পাশাপাশি আছে অনিয়ম-দুর্নীতি ও হয়রানির ঘটনা। অনেক নামসর্বস্ব কোম্পানি আছে যাদের পণ্য পরীক্ষায় মানোত্তীর্ণ হয় না। কিন্তু সেগুলোকেও মানসম্মত বলে সনদ দেওয়া হয়। ফলে বাজারে নিম্নমানের ওষুধ বিক্রি হওয়ার সুযোগ তৈরি হচ্ছে। এসব নিম্নমানের ওষুধ জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। নকল-ভেজাল, মানহীন ওষুধ উৎপাদনের মূলে রয়েছে খোলাবাজারে বিক্রি হওয়া ওষুধের কাঁচামাল। ঔষধ প্রশাসনের অনুমোদন পাওয়া কোম্পানিই শুধু বিদেশ থেকে কাঁচামাল আমদানি করতে পারে। অনেক ওষুধ কোম্পানি চাহিদার তুলনায় অধিক কাঁচামাল আমদানি করে তা খোলাবাজারে বিক্রি করে। ফার্মেসিগুলোতে নিষিদ্ধ চোরাইপথে আসা ওষুধ, নিম্নমানের ওষুধ ও মেয়াদদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রি হচ্ছে। ফার্মেসি পরিদর্শনের দায়িত্বে নিয়োজিতরা পরিদর্শন কার্যক্রম ঠিকমতো পরিচালনা করেন না। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কতিপয় দুর্নীতিপরায়ণ কর্মকর্তার যোগসাজশে অনৈতিক সিন্ডিকেট এসব দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। এ দপ্তরের দুর্নীতি প্রতিরোধে দুদক ৫টি সুপারিশ করেছে। এগুলো হলো-লাইসেন্স প্রদান, নবায়ন, ফি গ্রহণসহ পুরো প্রক্রিয়াকে অটোমেশনের আওতায় আনা। বিশেষজ্ঞ নিয়োগের মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া। দোকানে লাইসেন্স ও ফার্মাসিস্ট রাখা পর্যায়ক্রমে বাধ্যতামূলক করা। লাইসেন্স দেওয়ার আগে ওষুধের গুণগত মান পরীক্ষা করা ও বিভিন্ন কোম্পানি কর্তৃক ডাক্তারদের গিফট (দেশ-বিদেশ ভ্রমণ, গৃহ-আসবাব, মূল্যবান উপহার) প্রতিরোধ করা। একটি নীতিমালার ভিত্তিতে যথাসময়ে কোম্পানিগুলোকে পর্যবেক্ষণে রাখা।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) : প্রতিবেদনে বিআরটিএ দুর্নীতির ৬টি উৎসের কথা বলা হয়েছে। এগুলো হলো-রেজিস্ট্রেশনের সময় যানবাহন পরীক্ষা করে রেজিস্ট্রেশন করার বিধান থাকলেও অর্থের বিনিময়ে রেজিস্ট্রেশন দেওয়া। অর্থের বিনিময়ে যানবাহনের ফিটনেস সনদ দেওয়া। ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষার সময়ক্ষেপণ করে অর্থ আদয় করা। একই কর্মচারীকে একাধিক ডেস্কের দায়িত্ব দিয়ে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দালালদের দৌরাত্ম্যের সুযোগ সৃষ্টি করা। ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে সব তথ্য সংগ্রহের পর তা সরবরাহে দীর্ঘ সময় নেওয়া হয়। যানবাহনের মালিকের পরিচয় না জেনে রেজিস্ট্রেশন সনদ দেওয়া। এতে কালো টাকার মালিকরা অবৈধ টাকায় গাড়ি কিনে ভোগ-বিলাসের সুযোগ পাচ্ছেন। এ সেক্টরের দুর্নীতি প্রতিরোধে দুদক ৭টি সুপারিশ করেছে। এগুলো হলো-ডিজিটাল তথ্য কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা। অনলাইন আবেদন গ্রহণ ও সিসিটিভি পর্যবেক্ষণ জোরদার করা। ত্রুটিমুক্ত গাড়িকে ফিটনেস সার্টিফিকেট দেওয়া। ন্যূনতম সময়ে লাইসেন্স দেওয়া। বেনামে গাড়ি রেজিস্ট্রেশন হলে অবৈধ গাড়ির মালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। ঠিকাদারদের কাজে আরও নজরদারি বাড়ানো। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বদলির ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা তৈরি করা।

সাবরেজিস্ট্রি অফিস : এ সেক্টরের দুর্নীতির ১০টি উৎসের কথা বলা হয়েছে। আর দেশের ভূমি ব্যবস্থাপনা গতিশীল ও স্বচ্ছতা আনার ক্ষেত্রে ভূমি রেজিস্ট্রেশন বিভাগকে ঢেলে সাজানোর কোনো বিকল্প নেই বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এ সেক্টরের দুর্নীতি প্রতিরোধে ১০টি সুপারিশ করা হয়েছে। এগুলো হলো-রেজিস্ট্রেশন ম্যানুয়াল-২০১৪ ও রেজিস্ট্রেশন আইন-১৯০৮ যথাযথভাবে অনুসরণ করা। প্রতিটি দলিল ডাটাবেজ সংরক্ষণ করা। অনলাইন পদ্ধতিতে টাকা জমা দেওয়ার ব্যবস্থা করা। জমির মালিকানা পরিবর্তনের ক্ষেত্রে মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে দাতা ও গ্রহীতাকে জানিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা। আইন সংশোধনের মাধ্যমে জাল দলিল বাতিল ও সংশোধনের আপিল ও রিভিউ ক্ষমতা জেলা রেজিস্ট্রার ও তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আইজিআরকে আইনের দ্বারা অথরিটি দেওয়া। দাতা-গ্রহীতা ও জমির মূল্য এবং পরিমাণের ডাটাবেজ তৈরি করা। সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও সাবরেজিস্ট্রি অফিস একই কমপ্লেক্সে স্থাপন করা। সরকারি রাজস্ব আদায় নিশ্চিত করা। রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেক্সকে পুরো অটোমেশন করা। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বদলির সুনির্দিষ্ট নীতিমালা করা।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় : এ মন্ত্রণালয়ের দুর্র্নীতির ৬টি উৎসের কথা বলা হয়েছে। এগুলো হলো-প্রজেক্টের দুর্নীতি, কোয়ালিটি কন্ট্রোল সেক্টরে দুর্নীতি, প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে দুর্র্নীতি, স্থাপনা কার্যক্রমে দুর্নীতি, লাইসেন্স প্রদানে অনিয়ম-দুর্নীতি ও সরকারি অর্থ অপচয়বিষয়ক। এসব ক্ষেত্রে দুর্নীতি প্রতিরোধে ১৭টি সুপারিশ করা হয়েছে। এগুলো হলো- প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম সব জায়গায় চালু করা, ইজিপি চালু রাখা, টেন্ডারে কোটেশন কম করা, প্রজেক্টের পিডি নিয়োগে স্বচ্ছতা আনা ও প্রধান কার্যালয়ে প্রকল্পের সেল খোলা। বিশেষজ্ঞ কর্মকর্তা নিয়োগের ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়কে কম সম্পৃক্ত করা ও লাইসেন্স/সার্টিফিকেট অনলাইনে করা। বিদেশে মাছ পাঠানোর সময় সৎ কর্মকর্তাদের দিয়ে স্যাম্পলিং করা ও কার্যক্রম মনিটরিং করা। ট্রেনিং মনিটরিং করা, ট্রেনিংয়ের ভাতা ব্যক্তিগত হিসাবে দেওয়া, ট্রেনিংয়ে সফটওয়্যার ব্যবহার করা। ইজিপির নীতিমালা সংশোধন করা, দক্ষ ইঞ্জিনিয়ার নিয়োগ করা, ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আওতাধীন দপ্তরগুলোকে সংযুক্ত করা এবং অডিট নিষ্পত্তি প্রক্রিয়ার আধুনিকায়ন করা।

সুপারিশ বাস্তবায়নে সদিচ্ছা নেই : প্রতিবেদনে বলা হয়, দুর্নীতির প্রবণতা যখন ছুঁয়ে যায় দেশের প্রতিটি স্তরে, তখন দুদকের একার পক্ষে তা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা অসম্ভব। জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশলপত্রে প্রায় প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের জন্য শুদ্ধাচার সংশ্লিষ্ট ও দুর্নীতি প্রতিরোধে সহায়ক অন্যান্য কার্যক্রমের ওপর ১৫ নম্বরের মাপকাঠি বেঁধে দেওয়া আছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে দুর্নীতি প্রতিরোধে দৃশ্যমান কোনো কার্যক্রম ছাড়াই অনেক প্রতিষ্ঠান এই মাপকাঠি শতভাগ অর্জনের স্বীকৃতি প্রত্যাশা করছে। দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান হিসাবে দুদক কোনো ঘটক-অনুঘটকের দায়িত্বে নেই। আইনি দায়িত্বের অংশ হিসাবে বিভিন্ন সেবাদান প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতির উৎস চিহ্নিত করে সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করলেও সেগুলো বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সদিচ্ছার আশানুরূপ প্রতিফল দৃষ্টিগোচর হয়নি।

কমিশনের ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা : প্রতিবেদনে ‘ভবিষ্যৎ অগ্রযাত্রায় কমিশনের কর্মপরিকল্পনা’কে মূলত তিনটি অংশে ভাগ করা হয়েছে। এগুলো হলো-প্রথমত, মানি লন্ডারিং দমন ও প্রতিরোধ কার্যক্রমে বিদ্যমান সমস্যা ও উত্তরণের উপায়। দ্বিতীয়ত, পাচারকৃত সম্পদ পুনরুদ্ধারে দুদকের কার্যক্রমে সীমাবদ্ধতা ও তা দূরীকরণের উপায়। তৃতীয়ত, গোয়েন্দা কার্যক্রম। এ তিনটি অংশে বিদ্যমান সমস্যা ও এর সমাধানে কমিশনের পরিকল্পনা রাষ্ট্রপতির কাছে উপস্থাপন করা হয়েছে। এর প্রথম দুটি অংশই মানি লন্ডারিং বা অর্থ পাচার সংক্রান্ত। শেষেরটি দুদকের গোয়েন্দা শাখা সংক্রান্ত। বিদ্যমান মানি লন্ডারিং আইনে তদন্ত ক্ষমতা বাড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমেই শুধু কমিশনের প্রথম দুটি ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন সম্ভব। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অর্থ পাচার রোধ এবং পাচারকৃত অর্থ বিদেশ থেকে দেশে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে দুদকের অগ্রণী ভূমিকা দেখাতে চাইলে দুদকে পর্যাপ্ত আইনি ক্ষমতা প্রদান করতে হবে।

অনুসন্ধান, তদন্ত ও সাজা : দুদক ২০২১ সালে ৪ হাজার ৬১৪টি অভিযোগের অনুসন্ধান শুরু করে। এ সময় ১ হাজার ৪৪টি অনুসন্ধান শেষে ৩৪৭টি মামলা করা হয়েছে। দুদকে ৩ হাজার ৫৭০টি অভিযোগের অনুসন্ধান চলছে ও ৩ হাজার ৪৩৪টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। ২০১৮ সালে দুদকের মামলায় সাজার হার ছিল ৬৩ শতাংশ। ২০১৯ সালে ৬৩, ২০২০ সালে ৭২ এবং ২০২১ সালে সাজার হার ছিল প্রায় ৬০ শতাংশ। দুদক কর্তৃক মানি লন্ডারিং আইনের মামলায় প্রায় শতভাগ সাজা হয়েছে। গত দুই বছরে ১ হাজার ৩৫৫টি অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য গ্রহণ ও ৬৯৫টি মামলা করেছে। একইসঙ্গে ১৪ কোটি টাকা জরিমানা ও ৫০৬ কোটি টাকা ক্রোক করা হয়েছে।

গৃহীত ব্যবস্থা : ২০১৯ সালের ২৩ জানুয়ারি থেকে চালু হওয়া এনফোর্সমেন্ট ইউনিট দুদক হটলাইনে (নম্বর-১০৬) প্রাপ্ত অভিযোগের বিষয়ে অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করে আসছে। এই ইউনিট গত দুই বছরে সারা দেশে ৭৩২টি অভিযান পরিচালনা করেছে এবং কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিভিন্ন দপ্তরে ১ হাজার ৪৫৪টি চিঠি পাঠিয়েছে। সরকারি পরিষেবা প্রাপ্তিতে হয়রানি লাঘবে কমিশন ২৫টি প্রাতিষ্ঠানিক টিম গঠন করেছে। দুর্নীতি প্রতিরোধের লক্ষ্যে ৫২০টি দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি গঠন করা হয়েছে। তরুণদের মধ্যে সততা ও নিষ্ঠাবোধ সৃষ্টির লক্ষ্যে ২৭ হাজার ৬২৯টি সততা সংঘ গঠন এবং ৫ হাজার ৭৫৬টি সততা স্টোর প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। কোভিড পরিস্থিতেও দুদক কর্মকর্তারা ৫৫টি প্রশিক্ষণ কোর্স সম্পন্ন করেছেন।

অপ্রতুল জনবল : ২০২০ ও ২০২১ সালে বিভিন্ন মাধ্যমে অভিযোগ এসেছে ৩৩ হাজার ২৭৮টি। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, কমিশনের অনুসন্ধান/তদন্তকারী কর্মকর্তা রয়েছেন মাত্র ২৫০ জন। এ অপ্রতুল জনবল দিয়ে এ বিশাল কর্মযজ্ঞের দায়ভার বহন কতখানি কঠিন, তা সহজেই অনুমেয়। এ স্বল্পসংখ্যক জনবলে আবার রয়েছে অত্যাধুনিক ও উচ্চতর প্রশিক্ষণের অভাব। এরপরও কোনো প্রতিকূলতাই প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারেনি কমিশনের আত্মপ্রত্যয়ী কর্মীদের মাঝে। অনুন্ধান, তদন্ত, কোর্টে সাক্ষ্য দেওয়া, দৈনন্দিন তাৎক্ষণিক অভিযান পরিচালনাসহ প্রতিরোধ ও গবেষণা থেকে শুরু করে নানাবিধ কাজেই কমিশনের কর্মকর্তাদের হতে হয় পারদর্শী।

কমিশনের সীমাবদ্ধতা : দুদকের প্রতি জনগণের প্রত্যাশা যেহেতু অনেক বেশি, সেহেতু কখনো কখনো সমাজ বাস্তবতা এবং সক্ষমতার অভাবে সে প্রত্যাশা কমিশনের জন্য নেতিবাচক দায় হয়ে দাঁড়ায়। দৃষ্টান্তস্বরূপ বলা যায় যে, মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০১২ এর ২৭টি সম্পৃক্ত অপরাধের মধ্যে শুধু ‘ঘুস ও দুর্নীতি’ লব্ধ অর্থের মানি লন্ডারিংয়ের তদন্ত আইনগত দুদক করতে পারে। বাকি ২৬টি সম্পৃক্ত অপরাধের তদন্তের ক্ষমতা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের ওপর ন্যস্ত। যেখানে ট্রেডভিত্তিক অর্থ পাচার হয় শতকরা ৮০ ভাগ ক্ষেত্রে। সেখানে জনগণ দুদকের এ আইনি ক্ষমতার সীমাবদ্ধতার কথা চিন্তা না করে সেকেন্ড হোমসহ সব অর্থ পাচার প্রতিরোধের ব্যর্থতার দায় কমিশনকে দিয়ে থাকে।

ডিজিটাল এভিডেন্স সক্ষমতা নেই : আইনে বলা থাকলেও কমিশনের নিজস্ব প্রসিকিউশন ইউনিট এখন পর্যন্ত গড়ে উঠেনি। অন্যদিকে দুর্নীতির অনুসন্ধান ও তদন্তকার্যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে প্রয়োজনীয় রেকর্ডপত্র সংগ্রহে কর্মকর্তাদের যথেষ্ট বেগ পেতে হয়। সদিচ্ছা থাকলেও অনেক সময় আইন ও বিধিতে উল্লিখিত সময়ে অনুসন্ধান ও তদন্তকাজ শেষ করা সম্ভব হয় না। বিশ্ব এখন ডিজিটালাইজেশনের পরিসীমা পেরিয়ে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের পরিক্রমায় পদচারণা করছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে শুরু করে এখন ১৭টি দেশ এখন ন্যায়বিচারের স্বার্থে ‘এসআইআরআইইউএস’ প্রজেক্টের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ পেরিফেরির বাইরেও ইলেকট্রনিক এভিডেন্স ও ডাটা সরাসরি আদান-প্রদান করছে। তবে আধুনিক প্রযুক্তির অভাবে দুদক ডিজিটাল এভিডেন্স হিসাবে ইমেইল, খুদে বার্তা, সোশ্যাল মিডিয়া থেকে প্রাপ্ত তথ্য-প্রমাণাদি ব্যবহারে এখনও খুব বেশি সক্ষমতা অর্জন করতে পারেনি। তবে দ্রুত দুদকের সক্ষমতা বৃদ্ধি করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button