আন্তর্জাতিক

অর্থনীতিতে নয়, দূষণ সূচকে চীনকে টেক্কা ভারতের

ভারতের রাজধানীতে দূষণের মাত্রা এতটাই বেশি যে দিল্লিবাসীরা অন্যত্র চলে যেতে চাইছেন। কেননা ধোঁয়া এবং কুয়াশার মেশার ফলে পরিস্থিতি ক্রমেই এতটা জটিল হয়ে পরছে যার ফলে সাধারণ মানুষ আজ স্বাভাবিকভাবে শ্বাস নিতে পারছে না। আজ এই বিষয়টা কেবলমাত্র কোন দেশের পরিপ্রেক্ষিতে নয় সমগ্র বিশ্বের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। বর্তমানে ভারতের উত্তরাংশ এই চূড়ান্ত রকমের দূষণের সঙ্গে লড়াই করে চলেছে। এক ঝলকে দেখে নেওয়া যাক সমগ্র এশিয়া মহাদেশে বায়ুদূষণের হার ঠিক কি রকম।

বায়ুদূষণের দিক থেকে দেখতে গেলে বেইজিং উপরের দিকে থাকলেও পরিসংখ্যার দিক থেকে ভারত এবং পাকিস্তানের বায়ুদূষণের হার বেশ বেশি। অর্থাৎ দেখতে গেলে দক্ষিণ এশিয়াতে পরিবেশ দূষণের হার অন্যান্য দেশের থেকে ওপরে। আইকিউ এয়ারভিশুয়ালের করা গবেষণা অনুযায়ী বিশ্বের ৩০টি দূষিত শহরের মধ্যে ভারতেরই ২২টি রয়েছে। এছাড়া বাকি আটটি শহর রয়েছে পাকিস্তান, বাংলাদেশ এবং চীনে। তবে বেইজিংয়ের স্থান রয়েছে একশ ২২ নম্বরে।

বিশ্বের সব থেকে দূষিত রাজধানীর মধ্যে উপরেই রয়েছে দিল্লি। বর্তমানে দিল্লির আশেপাশের রাজ্যের শস্য পোড়ানোর ফলে দিল্লিতে দূষণের পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল আকার ধারণ করেছে। পরিস্থিতি এতটাই জটিল হয়ে যায় দিল্লি সরকারকে স্কুলের ছুটি বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

প্রতি বছরের দূষণের ভিত্তিতে করা সমীক্ষাতে উঠে এসেছে এইরকম তথ্য। যা কপালে ভাঁজ ফেলে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট। শুধু তাই নয় দূষণের ভিত্তিতে করা একটি তালিকাতে তৃতীয় নম্বরে রয়েছে ভারত। আর সব থেকে নিচে রয়েছে থাইল্যান্ড।

এখন স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে দূষণের কারণ নিয়ে। শহরাঞ্চলে বায়ু দূষণ হয় মূলত অতিরিক্ত ট্র্যাফিক, কলকারখানা থেকে বেড়িয়ে আসা ধোঁয়া এবং গাছ কেটে ফেলে শহরাঞ্চলের বিস্তারের ফলে। অন্যদিকে গ্রামাঞ্চলে দূষণ হয় অতিরিক্ত ফসল পোরানোর ফলে।

লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্সের সহকারী অধ্যাপক থমাস স্মিথ জানিয়েছেন, এই বিষয়টি বায়ু দূষণের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চীন যে বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে। কেননা চীনে চাষের ফসল পোরানোর বিষয় পুরোপুরিভাবে নিষিদ্ধ।

যার ফলে বায়ু দূষণের হার চীনে যথেষ্ট পরিমাণে কমেছে। অধ্যাপক স্মিথ জানিয়েছেন, বায়ুদূষণের ক্ষেত্রে ট্র্যাফিক বা কলকারখানার ধোঁয়ার থেকেও বেশি প্রভাব পরে ফসল পোড়ানোতে। তবে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট দিল্লির আশেপাশে ফসল পোড়ানোর ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করলেও বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে তা চলেছে নির্দ্বিধায়। তবে ভারতের রাজধানীর পরিস্থিতি সব থেকে খারাপ হয় শীতকালে। কেননা ঘন কুয়াশা এবং আশেপাশের রাজ্যতে ঘটা দূষণ থেকে নাজেহাল হয়ে পরে দিল্লিবাসী।

বায়ুদূষণের পরিমাপ করা হয় বাতাসে অবস্থিত বিপজ্জনক ধূলিকণার উপর ভিত্তিতে। বাতাসে যদি এই বিপজ্জনক ধূলিকণার হার বেড়ে যায় তাহলেই তা বায়ুদূষণ হিসেবে মানা হয়। এই দূষণের ফল বিভিন্ন মানুষের উপরে বিভিন্নভাবে দেখা যায়। তবে মূলত চোখ জ্বালা থেকে শুরু করে শ্বাসপ্রশ্বাস জনিত সমস্যাতে ভুগতে থাকে সাধারণ মানুষ। তবে সব থেকে ভুক্তভোগী হন বয়স্করা।

বর্তমানে ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া এবং আমেরিকাতে দূষণের হার অপেক্ষাকৃতভাবে কম। তবে ১৯ এবং ২০ দশকে লন্ডনেও দূষণের হার ছিল বেশ বেশি। ১৯৫২ সালে লন্ডনের পরিস্থিতি হয়েছিল বর্তমান দিল্লির মতই। তবে সেই জায়গা থেকে পেরিয়ে আজ কড়া হাতে দমন করেছে দূষণকে।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Back to top button