লিড নিউজ

নামেই বিশাল, ঢাল নেই তলোয়ার নেই নিধিরাম সর্দার

রাজধানীর মহাখালীতে করোনা ডেডিকেটেড ডিএনসিসি হাসপাতালে জনবল সঙ্কট প্রকট। একই সঙ্গে রোগীর চাপ প্রতিদিনই বাড়ছে। সীমিত জনবল দিয়ে বিশাল এই হাসপাতালে চিকিত্সা সেবা দিতে ডাক্তার-নার্সদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। দেশের সর্ববৃহৎ এই করোনা হাসপাতালটি ৫০০ বেডের। এরমধ্যে আইসিইউ বেড আছে ২০০। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুযায়ী, প্রতিদিন তিন শিফটে ২০০ বেডের আইসিইউয়ে ১০০ ডাক্তার ও ৬০০ নার্স থাকার কথা। ডাক্তার-নার্সদের ১৫ দিন ডিউটি করে বাকি ১৫ দিন আইসোলেশনে থাকতে হয়।

কিন্তু এই হাসপাতালে মোট ২৪২ জন ডাক্তার, ২৩৯ জন নার্স, ১২৮ জন মিডওয়াফারী নার্স ও আউটসোর্সিংয়ের নিয়োজিত চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী আছেন ৩২৭ জন। জনবল সঙ্কটের কারণে চিকিত্সা সেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। আইসিইউ ম্যানেজমেন্টে প্রতিটি রোগীর সার্বক্ষণিক মনিটরিং করতে হয়। রোগীর অক্সিজেন লেভেল কমে গেলো কিনা, কোনো পরিবর্তন আসলো কিনা, পরিবর্তন অনুযায়ী চিকিত্সার ব্যবস্থা করতে হয়। এক্ষেত্রে একজন রোগীর জন্য সার্বক্ষণিক একজন নার্স থাকতে হয়। ৩ জন রোগীর জন্য একজন ডাক্তার সার্বক্ষণিক থাকতে হয়। কিন্তু জনবল সঙ্কটের কারণে ঘণ্টাখানেক পর্যন্ত চিকিত্সকের রোগীদের কাছে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না।রোগীর অভিভাবকদের অভিযোগ, আমরা ডাক্তারদের দীর্ঘক্ষণ খুঁজেও পাওয়া যায় না। কর্তৃপক্ষ বারবার তাগিদা দিলেও জনবল সংকটের কোন সমাধান হয়নি। অথচ এই হাসপাতালটি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মাঝখানে অবস্থিত। খোদ রাজধানীর এই হাসপাতালে চিকিত্সা সেবার বেহাল দশা থাকলে, আর কারোর বুঝতে বাকি নেই যে, জেলা-উপজেলা হাসপাতালে চিকিত্সা সেবা কী করুণ দশা। ডিএনসিসি করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে কর্মরত চিকিত্সকরা বলেন, আমরা সাধ্য অনুযায়ী চিকিত্সা সেবা দিয়ে যাচ্ছি। জনবল সংকটের কারণে অমানুষিক পরিশ্রম করতে হচ্ছে। নামেই বিশাল হাসপাতাল এটি। ঢাল নেই, তলোয়ার নেই নিধিরাম সর্দারের মতো অবস্থা। জনবল সঙ্কট থাকলে রোগীরে চিকিত্সা সেবা ব্যাহত হবে- এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কে শুনে কার কথা?মহাখালীতে অবস্থিত ঢাকা নর্থ সিটি করপোরেশন মার্কেটে গত ১৮ এপ্রিল করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল উদ্বোধন করা হয়। তিন মাসের বেশি সময় অতিবাহিত হলেও এখনো পর্যাপ্ত চাহিদা অনুযায়ী জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়নি। এটি কোভিড রোগীদের জন্য স্থায়ী হাসপাতাল। দেশ করোনামুক্ত হলেও এই হাসপাতালটি থাকবে। এই হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেনের ব্যবস্থা আছে। চাহিদা অনুযায়ী বিশেষজ্ঞ চিকিত্সক নেই। ৯টা রুমের ভিতরে ২০০ বেডের আইসিইউ রয়েছে। এইচডিইউ (হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিট) শয্যা রয়েছে ৬টা ব্লকে। প্যাথলজি, রেডিওলজি, জেনারেল ওয়ার্ড ও ইমার্জেন্সি ওয়ার্ড আছে। প্রথমে রোগীকে ইমার্জেন্সি ওয়ার্ড নিয়ে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও চিকিত্সা সেবা দেওয়া হয়। এই হাসপাতালে আরও ৫০০ বেড চালু করার প্রস্তুতি চলছে। সেখানে থাকবে সেন্ট্রাল অক্সিজেনের ব্যবস্থা। আগামী ৫ দিনের মধ্যে বেশ কিছু বেড চালু হবে। কিছু দিনের মধ্যে ৫০০ বেড চালু হবে। অর্থাৎ, এটি হবে ১ হাজার বেডের হাসপাতাল। জনবল সঙ্কটের কারণে তখন এই হাসপাতালের চিকিত্সা সেবা কেমন হবে? এমন প্রশ্ন অনেকের। শুধুমাত্র আইসিইউতে এসির ব্যবস্থা আছে। অন্য জায়গায় আইসিইউ নেই। চিকিত্সা সেবা দিতে গিয়ে ডাক্তার-নার্সরা ঘেমে যাচ্ছেন।হাসপাতালে কর্মরত চিকিত্সকরা বলেন, আইসিইউ চালাতে কত জনবল লাগে সেটি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানে। অধিদপ্তরের নাকের ডগায় এই হাসপাতাল হলেও জনবল সংকটের বিষয়টি যেন কেউ দেখেও দেখছেন না। অথচ এটি পূর্ণাঙ্গ জনবল দিয়ে চালু করা হলে, এই হাসপাতালেই আক্রান্তের বেশিসংখ্যক করোনা রোগীর চিকিত্সা সেবা দেওয়া সম্ভব। স্বাস্থ্যের এত টাকা কোথায় যায়? করোনা মহামারীতে চিকিত্সা সেবা নিশ্চিত করতে হলে জনবল সঙ্কটের সমাধান করতেই হবে। কিন্তু বলেও কোন কাজ হয় না। তাই কিছুই বলতে চাই না। আমরা মহান পেশায় আছি। সাধ্যমতো চিকিত্সা সেবা দিয়ে যাব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুই হাত দিয়ে যখন যা প্রয়োজন তাই দিচ্ছেন। ডাক্তার-নার্সও নিয়োগ দিয়েছেন। কিন্তু মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের হয়তো অজ্ঞতা কিংবা দুর্নীতির কারণে হাসপাতালগুলোতে চিকিত্সা সেবার করুণ দশা। অথচ আমরা চিকিত্সকরা ভয়াবহ অবস্থা মোকাবেলা করছি। মানসিক যন্ত্রণা, পরিবার-পরিজন ফেলে দিন-রাত করোনা রোগীদের চিকিত্সা সেবা দিয়ে যাচ্ছি। এখনো সময় আছে জনবল বৃদ্ধি করুন।

বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকরা আরও বলেন, দেশের ৮০ ভাগ মানুষ গ্রামে বাস করে। করোনা এসেছে দেড় বছর হলেও জেলা-উপজেলায় স্বাস্থ্য সেবার দুরবস্থা ঠিক করা হয়নি। ৪০ হাজার ডাক্তার, সমসংখ্যক নার্স ও ১০ সহস্রাধিক টেকনোলজিস্ট বেকার আছে। তাদের জরুরি ভিত্তিতে নিয়োগ দিতে হবে। জনবল সংকট না থাকলেও করোনা রোগীরা হাতের কাছে প্রাথমিক চিকিত্সা সেবা পাবেন। তখন তাদের আর আইসিইউ পর্যন্ত যাওয়ার প্রয়োজন হবে না। করোনা রোগীদের মধ্যে মাত্র ৮ থেকে ১০ ভাগের আইসিইউয়ের প্রয়োজন হয়। বাকিদের উপসর্গভিত্তিক চিকিত্সা সেবা দিলে ভাল হয়ে যায়। কিন্তু হাসপাতালগুলোতে জনবল সংকটের কারণে চিকিত্সা সেবার বেহাল দশা বিরাজ করছে। মনে হয় পুরো মন্ত্রণালয় করোনায় আক্রান্ত। জরুরি কাজের কিছুই তারা করছে না।করোনা ডেডিকেটেড ডিএনসিসি হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম নাসির উদ্দিন বলেন, প্রতিদিন এই হাসপাতালে প্রচুর রোগী আসছেন। কোন কোন দিন ১০০ এর উপরে রোগী ভর্তি করা হচ্ছে। তাছাড়া হাসপাতালে আসা সব রোগীর ইমার্জেন্সি চিকিত্সা সেবা দেওয়া হচ্ছে। সাধ্যমতো করোনা রোগীদের সর্বাত্মক চিকিত্সা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন চিকিত্সক ও নার্সরা।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button