লিড নিউজ

বঙ্গবন্ধুর ত্যাগ সবার জন্য শিক্ষনীয়: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দল গোছানোর জন্য মন্ত্রীত্ব ত্যাগ করে এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন, তার এই ত্যাগের দৃষ্টান্ত সবার জন্য শিক্ষনীয়।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু ১৯৫৭ সালে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদে ছিলেন, তিনি তখন মন্ত্রীত্ব ছেড়ে দেন আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করার জন্য। কারণ, তিনি জানতেন যেকোন অর্জন করতে হলে একটি শক্তিশালী সংগঠন দরকার।
শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত ‘মুজিব চিরন্তন’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে সভাপতির ভাষণে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা লক্ষ্য নির্ধারণ করে রাজনীতি করতেন বিধায় দেশকে স্বাধীন করার জন্য তিনি লক্ষ্য স্থির করেছিলেন এবং ‘৫৬ সালে যখন আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে সেই কেবিনেটে তিনি মন্ত্রিত্ব পেয়েছিলেন।
তিনি বলেন, কিন্তু, দুঃখের বিষয় হলো আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মওলানা ভাসানী ১৯৫৭ সালে কাগমারি কনফারেন্সের পর আওয়ামী লীগ ভেঙ্গে দেন এবং ন্যাশনাল আওয়াম পার্টি নামে আরেকটি দল গঠন করেন। তিনি যখন দল ভেঙ্গে চলে যান তখন আওয়ামী লীগ সংগঠনটাকে শক্তিশালী করা একান্তভাবে প্রয়োজন ছিল এবং বঙ্গবন্ধু সেই সময় দলের জন্যই মন্ত্রিত্ব ত্যাগ করেন।
অনুষ্ঠানে শ্রীলংকার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষে এবং সংস্কৃতি মন্ত্রী কে এম খালিদ বক্তৃতা করেন। রাশিয়ান ফেডারেশনের পররাষ্ট্র মন্ত্রী সের্গেই ভি ল্যাভরভে’র একটি ধারণকৃত ভিডিও বার্তা অনুষ্ঠানে প্রচার করা হয়। অধ্যাপক সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন। এরআগে ১০দিন ব্যাপী অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী দিনে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহামেদ সলিহ এবং তার সহধর্মিনী ফাজানা আহমেদ যোগ দিয়েছিলেন।
১০দিন ব্যাপী এই অনুষ্ঠানমালায় যোগ দিতে আগামী ২২ মার্চ নেপালের প্রেসিডেন্ট বিদ্যা দেবী ভান্ডারির দুই দিনের সফরে ঢাকা আসার কথা রয়েছে। ভূটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং ২৪ ও ২৫ মার্চ এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আগামী ২৬ মার্চ অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে।
এদিনের অনুষ্ঠানের ধারাক্রমে জাতীয় সংগীত, পবিত্র ধর্মগ্রন্থসমূহ থেকে পাঠ, মুজিববর্ষের থিম সংগীত, ‘যতকাল রবে পদ্মা যমুনা’ শীর্ষক ভিডিও প্রদর্শন এবং স্বাগত সম্ভাষণ প্রদানের পর প্রতিপাদ্যভিত্তিক আলোচনা পর্ব শুরু হয়। এরপর সম্মানিত অতিথিদের ‘মুজিব চিরন্তন’ শ্রদ্ধা-স্মারক প্রদান করা হয়।
জাতির পিতার একের পর এক গ্রেফতার হবার প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে বলেন, তিনি যে বাংলাদেশের মানুষের জন্যই একের পর এক সংগ্রাম করে যাচ্ছেন তা পাকিস্তানীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছিল। তিনি এজন্য পাকিস্তানী ইন্টালিজেন্স ব্রাঞ্চের রিপোর্ট নিয়ে প্রকাশিত ‘সিক্রেট ডকুমন্টস অব ইন্টালিজেন্স ব্রাঞ্চ অন ফাদার অবদি নেশন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ নামক বইয়ের খন্ডগুলো সবাইকে পড়ে দেখার আহ্বান জানান। সেখানে ইন্টালিজেন্স ব্রাঞ্চের রিপোর্টগুলো দেখলে জানা যায় দিনের পর দিন জাতির পিতা কি অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করেছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু বাংলার মানুষের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। তার নিজের জীবনে কোন চাওয়া-পাওয়া ছিল না। এই বাংলার মাটি যেটা হাজার বছরের পরাধীনতার গ্লানি বয়ে বেড়িয়েছে সেখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবই কিন্তু প্রথম এই মাটির সন্তান যিনি এদেশকে স্বাধীন করেছেন এবং এদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন। এই ভূমির পুত্র বা ভূমির সন্তান একমাত্র বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যে কারণে, এদেশের মানুষের প্রতি তার সবসময় একটা ভালোবাসা ছিল।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার পরে যারাই ক্ষমতায় এসেছে তাদের একটাই ভয় ছিল ঐ নামটা (বঙ্গবন্ধু) নিয়ে। কাজেই, তারা ২১টা বছর সবই নিষিদ্ধ করে রেখেছিল। কিন্তু যে সংগঠন জাতির পিতা গড়ে তুলেছিলেন সেই সংগঠন আওয়ামী লীগ কিন্তু সেই আদর্শ নিয়েই চলেছে এবং সংগ্রামের পথ বেয়ে আমরা ২১ বছর পর সরকার গঠন করে মানুষকে সেবা করার সুযোগ পেয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে বাংলাদেশ এক সময় বিশ্বের কাছে বলতে গেলে হাত পেতে চলতো। যে বাংলাদেশকে জাতির পিতা স্বাধীন হবার পর যুদ্ধবিধ্বস্থ অবস্থা থেকে গড়ে তোলেন এবং দেশকে স্বল্পোন্নত দেশের পর্যায়ে রেখে যেতে সক্ষম হন।
তার সরকার দেশকে আজ স্বল্পোন্নত অবস্থা থেকে উন্নয়নশীল দেশের পর্যায়ে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পঁচাত্তরের পর বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা, রেসকোর্সের ঐতিহাসিক বক্তব্য ও ভাষা আন্দোলনে তার নেতৃত্বের ইতিহাস মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছে। তার ভাষণ প্রচারে অলিখিত নিষেধাজ্ঞা ছিল। সবাইকে ধন্যবাদ জানাই, সবার সহযোগিতায় আজকে আমরা সেই সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে পারছি। বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ করতে পেরেছি এবং আমরা উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাই।
তিনি বলেন, আমরা বঙ্গবন্ধুর ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত অসাম্প্রদায়িক সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি।
শেখ হাসিনা বলেন, মার্চ মাস বাঙালি জাতির জন্য এক স্মরণীয় মাস। ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যিনি হাজার বছর ধরে পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ বাঙালি জাতিকে একটি স্বাধীন-সার্বভৌম আবাসভূমি এনে দিয়েছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৪৮ সালের এই মার্চ মাসের ১১ তারিখে তিনি মাতৃভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য সর্বপ্রথম কারাগারে অন্তরীণ হন। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ পাকিস্তানি শাসকদের ভ্রুকুটি উপেক্ষা করে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, জয় বাংলা।’ এর সপ্তাহ আড়াই পর ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে ঘোষণা করেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা। সমগ্র জাতিকে নির্দেশ দেন প্রতিরোধ যুদ্ধের, মাতৃভূমিকে শত্রুমুক্ত করার।
প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের চিত্র তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, শ্রীলঙ্কা আমাদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু দেশ। বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা বিভিন্ন আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক ইস্যুতে একই ধরনের মনোভাব পোষণ করে এবং আমরা পরস্পরকে সমর্থন ও সহযোগিতা দিয়ে থাকি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মাহিন্দা রাজাপাকসে বাংলাদেশের একজন অকৃত্রিম বন্ধু এবং তিনি সবসময়ই বাংলাদেশের পাশে অবস্থান করেন। আমিও চেষ্টা করি সেই বন্ধুত্বের প্রতিদান দিতে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন অনুষ্ঠানে মাহিন্দা রাজাপক্ষের যোগদান তার নিজের ও শ্রীলঙ্কার জনগণের আমাদের মধ্যকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কেরই প্রতিফলন।
প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করে বলেন, দুই দেশের জনগণের মধ্যকার এই বন্ধুত্বের সম্পর্ক ভবিষ্যতে আরও সুদৃঢ় হবে।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button