জাতীয়
পাঁচ মাসের মধ্যে এলো সবচেয়ে কম রেমিট্যান্স
মহামারি করোনার মধ্যে দেশের অর্থনীতির অধিকাংশ সূচক যেখানে নিম্নমুখী ছিল, সেখানে শুধু রেমিট্যান্স আহরণের ধারা ছিল ঊর্ধ্বমুখী। কিন্তু এবার রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় আহরণও ধাক্কা খেল। গত পাঁচ মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম রেমিট্যান্স আহরণ হয়েছে গত মাসে (জুলাই)। এ মাসে ১৮৭ কোটি ১৫ লাখ ডলার দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। আর গত বছরের জুলাইয়ের চেয়ে কম প্রায় ৩৯ শতাংশ। ফলে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে ধীরগতি নিয়ে শুরু হলো নতুন অর্থবছর।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ১৭৮ কোটি ৬ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে। আর গত বছরের জুলাইয়ে এসেছিল ২৫৯ কোটি ৮২ লাখ ডলার, যা ছিল এক মাসের হিসাবে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স।
তবে, অর্থনীতির প্রধান সূচকের এই ধীরগতিতে মোটেই উদ্বিগ্ন নয় বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতিবছর দুই ঈদের পর রেমিট্যান্স কিছুটা কমে। জুলাই মাসেও তাই হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সোমবার যে হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, কোরবানির ঈদের আগে ১৯ দিনে (১ জুলাই থেকে ১৯ জুলাই) ১৫৫ কোটি ডলারের বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। ঈদের পর মাসের বাকি ১১ দিনে (২০ থেকে ৩১ জুলাই) এসেছে ৩২ কোটি ১৫ লাখ ডলার।
করোনা মহামারির মধ্যেও অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গত অর্থবছরে ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ (২৪.৮ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। এই অঙ্ক আগের বছরের চেয়ে ৬ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার বা ৩৬ দশমিক ১ শতাংশ বেশি। টাকার অঙ্কে ওই অর্থের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ১০ হাজার ১১৫ কোটি টাকা, যা ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২১-২২ অর্থবছরের ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার জাতীয় বাজেটের এক-তৃতীয়াংশের বেশি। বাংলাদেশের ইতিহাসে এক বছর বা অর্থবছরে এত বেশি রেমিট্যান্স কখনই আসেনি।
জুলাইয়ের রেমিট্যান্সের মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৪৩ কোটি ১৮ লাখ ডলার। বিশেষায়িত কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৩ কোটি ২২ লাখ ডলার।
বেসরকারি ৪০ ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১৪০ কোটি ১২ লাখ ডলার। আর বিদেশি ৯ ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৬১ লাখ ৮০ হাজার ডলার। ২১ জুলাই কোরবানির ঈদ উদযাপিত হয়। তার আগে ১৯ জুলাই ছিল ঈদের ছুটির আগে শেষ কর্মদিবস।
মহামারির মধ্যে গত ২০২০-২১ অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স আসে অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে। ওই মাসে প্রায় ২ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার পাঠান প্রবাসীরা, যা এক মাসের হিসাবে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আসে মে মাসে ২১৭ কোটি ১০ লাখ ডলার। গত অর্থবছরের ১২ মাসের মধ্যে ৭ মাসেই ২০০ কোটি (২ বিলিয়ন) ডলারের বেশি করে রেমিট্যান্স এসেছে। গড় হিসাবে প্রতি মাসে ২ দশমিক ০৬ বিলিয়ন ডলার করে এসেছে। তার আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১ হাজার ৮২০ কোটি ৫০ লাখ (১৮ দশমিক ২০ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে, যা ছিল এক অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি।
রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে ২০১৯-২০ অর্থবছর থেকে ২ শতাংশ হারে নগদ প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার। ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটেও এই প্রণোদনা অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেয় সরকার। কোরবানির ঈদের ছুটির আগে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক চিঠিতে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স প্রবাহের ইতিবাচক ধারা ধরে রাখতে মাসে ৫০০ ডলার পর্যন্ত রেমিট্যান্সে ১ শতাংশ বাড়তি প্রণোদনা দিতে সরকারকে অনুরোধ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন যে মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে, তাতে ২০২১-২২ অর্থবছরে রেমিট্যান্স প্রবাহের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হয়েছে ২০ শতাংশ।
রিজার্ভ ৪৫.৮ বিলিয়ন ডলার : এদিকে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে ভর করে বাংলাদেশের বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ সন্তোষজনক অবস্থায় রয়েছে। সোমবার দিন শেষে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল প্রায় ৪৫ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার।