লিড নিউজ
ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করছে ডেঙ্গু
পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলেও ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যাচ্ছে। রোববার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে আরও ২৯১ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এ বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্টের ২২ তারিখ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ৮ হাজার ৪১ জন। এটি কেবল হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে এমন রোগীর সংখ্যা। বাসায় চিকিৎসা নেওয়া রোগীরা সরকারি হিসাবের বাইরেই থেকে যাচ্ছে। এর মধ্যে জুলাইয়ে ১২ ও আগস্টে ২৪ জন রোগী ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। মহামারি করোনাকালে ডেঙ্গু পরিস্থিতি উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়াচ্ছে।
এদিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় মগবাজার ও নিউ ইস্কাটন এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বাসাবো ও গোড়ান এলাকায় ডেঙ্গুর ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। আর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে বেশি রোগী ভর্তি হচ্ছে যাত্রাবাড়ী, মিরপুর ও উত্তরার বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। ‘মনসুন এডিস সার্ভে ২০২১ অ্যান্ড কারেন্ট সিচুয়েশন অব ডেঙ্গু’ শীর্ষক প্রকাশিত জরিপে স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে, ডেঙ্গুর প্রকোপ সবচেয়ে বেশি দেখা দিয়েছে যাত্রাবাড়ীতে। মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর ৮ দশমিক ২০ শতাংশই যাত্রাবাড়ীর। তারপর মিরপুর ও উত্তরায় ডেঙ্গুতে আক্রান্তের হার বেশি। ধারাবাহিকভাবে বাসাবো, রামপুরা, খিলগাঁও, মুগদা, ওয়ারী, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, মগবাজার ও পল্টনে বেশি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে।
উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের মগবাজার ও নিউ ইস্কাটন এলাকায় ডেঙ্গু মশার ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি; ৫৬ দশমিক ৭ শতাংশ। এরপর ঝুঁকিতে রয়েছে ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা ও নিকুঞ্জ; ১১ নম্বর ওয়ার্ডের কল্যাণপুর ও দারুস সালাম; ১৪ নম্বরের মিরপুর-১০ নম্বর ও কাজীপাড়া; ২০ নম্বরের মহাখালী ও নিকেতন এবং ৩৭ নম্বর ওয়ার্ডের আফতাবনগর ও মেরুল বাড্ডা। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসাবো ও গোড়ান এলাকায় মশার ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি; ৭৩ দশমিক ৩ শতাংশ। এরপর ঝুঁকিতে রয়েছে ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের এলিফ্যান্ট রোড ও সায়েন্স ল্যাবরেটরি, ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের আর. কে. মিশন রোড ও টিকাটুলী, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বনশ্রী, ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের মিন্টো রোড ও বেইলি রোড এবং ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের বংশাল এলাকা।
গত ২৯ জুলাই থেকে ৭ আগস্ট পর্যন্ত ১০ দিনব্যাপী স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার ২০টি টিম ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৯৮টি ওয়ার্ডের ১০০টি স্থানে জরিপ পরিচালনা করে। ঘরের ভেতরে লার্ভার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এডিসের লার্ভার উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি পাওয়া গেছে বহুতল ভবনে। নির্মাণাধীন ভবনেও উল্লেখযোগ্যভাবে লার্ভার উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
চলতি বছরের জুন, জুলাই ও আগস্টে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েছে। এখন পর্যন্ত বেশি ডেঙ্গু রোগী পাওয়া গেছে আগস্টে। আগস্টের ২২ দিনে ৫ হাজার ৩৮৩ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, নতুন করে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ঢাকায় নতুন রোগী ভর্তি হয়েছে ২৫৯ জন। আর ঢাকার বাইরে ৩২ জন রোগী ভর্তি হয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি হতেও ভোগান্তিতে পড়ছে অনেক ডেঙ্গু রোগী। ঢাকার বেশিরভাগ সরকারি হাসপাতাল এখন করোনা ডেডিকেটেড। তাই সব হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্তের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে না বলে রোগী ও তাদের স্বজনরা অভিযোগ করছেন। রাজধানী ঢাকার চারটি হাসপাতালকে ডেঙ্গু চিকিৎসার জন্য সরকার নির্ধারণ করে দিয়েছে। সেগুলোর বেশিরভাগ হাসপাতালে শয্যা খালি নেই। গতকাল স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালে ৪২ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়। আর ঢাকা শিশু হাসপাতালে ১১ শিশুকে ভর্তি করা হয়।
সরকারি হিসাবে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু সংক্রমণ হয়েছিল ২০১৯ সালে। সে বছর ১ লাখের বেশি মানুষ রোগটিতে আক্রান্ত হয়েছিল। আর মারা গিয়েছিল ১৭৫ জনের বেশি। তবে বেসরকারিভাবে মৃতের সংখ্যা আরও অনেক বেশি বলে ধরা হয়। কিছু সুপারিশ তুলে ধরে জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এডিসবাহিত রোগনির্মূল কর্মসূচির ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. আফসানা আলমগীর খান বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সচেতনতা, যাতে জমে থাকা পানিতে এডিস মশা জন্মাতে না পারে। নগরের পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলেও ডেঙ্গু উদ্বেগ বাড়াচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা জানান, লকডাউনের কারণে অনেক প্রকল্পের কাজ বন্ধ ছিল। সেখানে জমে থাকা পানি থেকে ডেঙ্গু ছড়িয়েছে। এখন সেগুলোর কাজ শুরু হয়েছে। আস্তে আস্তে সেখান থেকে ডেঙ্গু নির্মূল করা হচ্ছে। আর প্রতিদিন স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে যেসব তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, সেসব তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে ডেঙ্গুর উৎপত্তিস্থল ধ্বংস করা হচ্ছে। নির্মাণাধীন ভবনগুলোয় উল্লেখযোগ্যভাবে ডেঙ্গুর লার্ভা পাওয়া যাচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেছেন, ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভালো নয়। সব হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা দেওয়ার বিষয়টি দেখা হচ্ছে।