আন্তর্জাতিক

ইসরায়েলের ‘নেতানিয়াহু যুগ’ কি শেষ?

ফের সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে ব্যর্থ হয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। মঙ্গলবারের নির্বাচনে নেতানিয়াহু এবং তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বেনি গানৎজ পেয়েছেন সমান সমান ভোট।

মিডল ইস্ট আই জানায়, গতকালের নির্বাচনে ৯৬.৯ শতাংশ ভোট গণনা শেষে দেখা গেছে নেতানিয়াহুর ডানপন্থী লিকুদ পার্টি এবং গানৎজের মধ্যপন্থী ব্লু অ্যান্ড হোয়াইট পার্টি উভয় দলই ৩৩টি করে আসন পেয়েছে। ধরে নেওয়া হয়েছিল, রেকর্ড পঞ্চমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন নেতানিয়াহু। কিন্তু মঙ্গলবারের নির্বাচনের ফলাফল সেই প্রত্যাশাকে বড় ধরনের ধাক্কা দিয়েছে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

নেতানিয়াহু এবং গানৎজের সমান আসন ভোট অর্জনের এই লড়াইকে ইসরায়েলি সোসাইটির দীর্ঘকালীন বিভক্তির প্রতিচ্ছবি হিসেবে দেখা হচ্ছে। এখন ইহুদি রাষ্ট্রটির নতুন প্রধানমন্ত্রী কে হতে চলেছেন সেটি জানার আগেই যে প্রশ্নটি সামনে এসেছে -ইসরায়েলের নেতানিয়াহু যুগ কি শেষ?

এপ্রিলে প্রথমবারের নির্বাচনেও এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছিলেন নেতানিয়াহু। জোটগতভাবেও একটি কার্যকরী সংসদ গঠন করতে না পারায় দেশটিতে দ্বিতীয়বারের এই নির্বাচন অনিবার্য হয়ে উঠে।

এই নির্বাচনেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় অধিকাংশ বিশ্লেষকেরা একমত যে, ‘ইহুদি রাষ্ট্রের জাদুকর’ নেতানিয়াহুর ক্ষমতায় এখানেই শেষ। মঙ্গলবারের নির্বাচনে সরকারি ফলাফল জানতে এক সপ্তাহের বেশি সময় লাগতে পারে। তার আগেই বিভিন্ন সমীক্ষাও বলছে, এবারও নেতানিয়াহুর পক্ষে ক্ষমতায় টিকে থাকা কঠিন হবে।

এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা নেতানিয়াহুর সময়কালে নিরাপত্তা নিয়ে তেমন একটা দুশ্চিন্তা করতে হয়নি ইসরায়েলিদের। আত্মঘাতী হামলা থেকে মুক্ত ছিল ইসরায়েলি স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। ফিলিস্তিনের হামাসের রকেট হামলাও তেমন একটা ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারেনি ইহুদি রাষ্ট্রটির।

ডয়েচ ভেলে জানায়, দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে ইসরায়েলি সমাজে চরম বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব হয়ে ওঠেন নেতানিয়াহু। তার ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও প্রতারণাসহ একাধিক মারাত্মক অভিযোগ উঠেছে, সেগুলোর তদন্তও চলছে। ক্ষমতা হারালে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে। সে ক্ষেত্রে তিনি গ্রেপ্তারও হতে পারেন।

নেতানিয়াহু এবং তার প্রধান প্রতিপক্ষ সামরিক বাহিনীর প্রাক্তন প্রধান বেনি গানৎজ দুজনের কেউই জয়ের দাবি করতে পারছেন না। মঙ্গলবার রাতে লিকুদ দলের সদর দপ্তরে নেতানিয়াহুকে কিছুটা বিমর্ষ দেখাচ্ছিল। অন্যদিকে গানৎজকে দেখা গেছে আত্মবিশ্বাসে তিনি বেশ চাঙা।

শেষ পর্যন্ত যে দলই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাক না কেন, জোট গড়তে অন্যান্য দলের সমর্থনের প্রয়োজন হবে। সেখানেও ধর্মীয় ভাবাদর্শে উদ্বুদ্ধ ও ধর্মনিরপেক্ষ দুইটি শিবিরে বিভক্ত ইসরায়েলি রাজনীতি। ধর্মভিত্তিক দলগুলো নেতানিয়াহু ও ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলো গানৎজের প্রতি সমর্থন জানাতে পারে।

এদিকে দেশটির সরকার গঠনে দীর্ঘদিন ধরেই তুরুপের তাস হিসেবে ধরা হয় সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী অ্যাভিগডো লিবারম্যানকে। তার দল ইসরায়েল বেইতেনু পেয়েছেন ৯টি আসন। এপ্রিল নির্বাচনের পর নেতানিয়াহুর সরকারে থাকতে অস্বীকৃতি জানান ক্ষমতাসীন জোটের এ শরিক। ফলে তার সমর্থন পাচ্ছেন না নেতানিয়াহু, এটা নিশ্চিত।

লিবারম্যানও এককভাবে কাউকে সমর্থন দিতে ইচ্ছুক নন। বুধবার সকালেও তিনি মত দেন, লিকুদ পার্টি এবং ব্লু অ্যান্ড হোয়াইট পার্টির সমন্বিত সরকারকেই কেবল তিনি সমর্থন দেবেন। কিন্তু নেতানিয়াহু এবং গানৎজ কেউই একত্রে সরকার গঠনে ইচ্ছুক নন।

তবে জোটগতভাবে সরকার গড়ার উদ্যোগ আবার বিফল হলে জাতীয় ঐক্য সরকার গঠনের সম্ভাবনাই দেখছেন পর্যবেক্ষকেরা। তবে সে ক্ষেত্রে নেতানিয়াহুর পক্ষে প্রধানমন্ত্রী থাকা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে। নেতানিয়াহু যুগের অবসান ঘটলে ইসরায়েলের রাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের সম্ভাবনা দেখছেন অনেক পর্যবেক্ষক।

অভ্যন্তরীণ নানা ইস্যু ছাড়াও ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে শান্তির উদ্যোগের ক্ষেত্রেও ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে বলে আশা দেখছেন তারা। এ ছাড়া ইরানের প্রতি চরম বৈরী মনোভাবের বদলে বাস্তববাদী নীতি গ্রহণ করতে পারেন বেনি গানৎজ বা অন্য কোনো গ্রহণযোগ্য নেতা। সে ক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিও নতুন বাঁক নেবে, এটা অনেকটা নিশ্চিত।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button