আন্তর্জাতিক

ভারতে ৯ আল কায়দা জঙ্গি গ্রেফতারের দাবি গোয়েন্দাদের

আল-কায়দা জঙ্গিরা ভারতের মুর্শিদাবাদ ও কেরালার এর্নাকুলামে বসে দেশব্যাপী বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা করছিল বলে দেশটির গণমাধ্যমগুলোতে দাবি করা হয়েছে।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শনিবার দেশটির জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ) মুর্শিদাবাদ ও এর্নাকুলাম থেকে আল-কায়দার ভারতীয় মডিউলের নয় জঙ্গিকে গ্রেফতার করেছে। এই দুই জায়গাতেই তল্লাশি অভিযান চালিয়ে আল-কায়দা ঘাঁটি থেকে এনআইএ গোয়েন্দারা প্রচুর অস্ত্র ও আইইডি উদ্ধার করেছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

গোয়েন্দাদের দাবি, পাকিস্তান থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সদস্য সংগ্রহ থেকে জঙ্গি সংগঠনের বিস্তার ও কাজ পরিচালনা করা হয়।

সূত্রের খবর, গত কয়েক মাস ধরেই জঙ্গি সংগঠনের কার্যকলাপের খবর ছিল গোয়েন্দাদের কাছে। সেই সূত্র ধরেই চলে অভিযান।

এনআইএ-র পক্ষ থেকে বিবৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, পরিশ্চমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ ও কেরালার এর্নাকুলামসহ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে অনেকদিন ধরেই আল-কায়দার জঙ্গিরা ছড়িয়ে পড়েছিল। ইন্টার স্টেট বা আন্তঃরাজ্য মডিউলে এই সক্রিয় সদস্যরা কাজ করত। নাশকতামূলক কাজের মাধ্যমে নিরীহ সাধারণ মানুষদের মেরে ফেলা জঙ্গি কার্যকলাপের মাধ্যমে আমজনতার মনে ভয়-আতঙ্কের সৃষ্টি করাই ছিল এদের মূল লক্ষ্য। দেশের বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য জায়গায় নাশকতার পরিকল্পনা করেছিল এই জঙ্গিরা।

আনন্দবাজারের খবর, মুর্শিদাবাদে গ্রেফতার ছয় জনকে শনিবার দুপুরেই কলকাতার বিশেষ এনআইএ আদালতে পেশ করা হবে।

আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এনআইএ সূত্রে খবর, মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুর মহকুমার বিভিন্ন এলাকায় হানা দিয়ে গ্রেফতার করা হয়েছে নাজমুস সাকিব, আবু সুফিয়ান, মইনুল মণ্ডল, লিউ ইয়ান আহমেদ, আল মামুন কামাল এবং আতিউর রহমান নামে ৫ জনকে। গোয়েন্দাদের দাবি, এরা প্রত্যেকেই আল কায়দার ভারতীয় শাখার সক্রিয় সদস্য।

অন্যদিকে, একই সঙ্গে এনআইএ অভিযান চালায় কেরলের এর্নাকুলামে। সেখান থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে মুর্শিদ হাসান, ইয়াকুব বিশ্বাস ও মোশারফ হোসেনকে।

এনআইএ-র গোয়েন্দাদের দাবি, কেরল থেকেও যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদের মধ্যেও দু’জন আবার মুর্শিদাবাদেরই বাসিন্দা। গোটা নেটওয়ার্ক চলছিল মুর্শিদাবাদ থেকেই। ধৃতদের কাছ থেকে জিহাদি বইপত্র থেকে শুরু করে বিস্ফোরক, ধারাল অস্ত্র, আইইডি (ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস), বডি আর্মার অর্থাৎ ঢালের মতো জিনিসপত্র উদ্ধার করা হয়েছে।

কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের আরও দাবি, আল কায়দার এই ভারতীয় শাখা ‘কায়দাতুল জিহাদ’ বা ‘আল কায়দা ইন সাব কন্টিনেন্ট’ দীর্ঘদিন ধরেই পাকিস্তানে বসে তাদের সংগঠনের বিস্তার ঘটাচ্ছে। পাকিস্তান থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে তারা সদস্য সংগ্রহ করেছে। গোয়েন্দাদের দাবি, এই মডিউলটির পরিকল্পনা ছিল দিল্লির কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় হামলা চালিয়ে নিরীহ মানুষদের হত্যা করা।

এনআইএ গোয়েন্দাদের একটি অংশ ইঙ্গিত দিয়েছে, রাজ্যে সক্রিয় জামাতুল মুজাহিদিনের সালাউদ্দিন-পন্থী সংগঠন দীর্ঘদিন ধরেই আল কায়দাকে এ রাজ্যে সংগঠন বিস্তারে সহযোগিতা করছে। তাদের সন্দেহ, এই মডিউলের সঙ্গে জামাতেরও সরাসরি যোগ রয়েছে।

বুধবার সংসদে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, কেরল, কর্ণাটকসহ দেশের নয়টি রাজ্যে সংগঠন তৈরি করছে আইএস। তার মধ্যে এ রাজ্যের নামও ছিল। তবে তার আগে জুলাই মাসে জাতিসংঘের একটি রিপোর্টে জানানো হয় ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে কীভাবে জিহাদের শিকড় ছড়াচ্ছে আল কায়দা এবং আইএসের মতো সংগঠনগুলো। গত কয়েক মাসে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের কাছে বাংলায় লেখা প্রচুর জিহাদি নথি পৌঁছেছে, যা থেকে বোঝা যাচ্ছিল, আল কায়দার মতো সংগঠন অনেকটাই জমি তৈরি করেছে এ রাজ্যে।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Back to top button