লিড নিউজ

সরকারি চাকুরেদের গাড়ি ব্যবহারে লাগাম

ঢাকা: বৈশ্বিক কারণে জ্বালানি সংকট, বিদ্যুতের নাজুক পরিস্থিত ও অন্যান্য পণ্য সংগ্রহে মারাত্মক অনিশ্চয়তার মধ্যে নানা উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়, বিদেশ ভ্রমণ সীমিতকরণ, প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হ্রাস ইতোমধ্যে বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে।

জ্বালানি সাশ্রয়ে এবার সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে গাড়ি ব্যবহারে নতুন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বাসাবাড়িতেও।

কর্মকর্তা-কর্মচারীদে নিজের বা সরকারি যানবাহন একান্ত প্রয়োজন ছাড়া ব্যবহার না করতে নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়, বিদেশ ভ্রমণ সীমিতকরণ, প্রকল্প বাস্তবায়নসহ অন্যান্য খাতে বায় সংকোচনে সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন’ সংক্রান্ত নির্দেশনা সিটি করপোরেশন, জেলা পরিষদ, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদে পাঠিয়েছে।

স্থানীয় সরকার বিভাগের সেই চিঠিতে বলা হয়, বৈশ্বিক কারণে পৃথিবীতে জ্বালানি ও অন্যান্য পণ্য সংগ্রহে মারাত্মক অনিশ্চয়তা বিরাজ করায় জ্বালানির মূল্য অস্বাভাবিক ভাবে বেড়েছে। সেই কারণে অনেক দেশ বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ করে ব্যয় সীমিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ও জনগণকে কৃচ্ছতা সাধনের আহ্বান জানিয়েছে। একই কারণে বাংলাদেশেও বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ী ব্যবহার নিশ্চিতকল্পে গত ২০ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের সভাপতিত্বে ব্যয় সংকোচন সংক্রান্ত বিশেষ সভার গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহ এবং তৎপরবর্তীতে অর্থ বিভাগের ২১ জুলাই পরিপত্রের প্রদত্ত নির্দেশনার আলোকে স্থানীয় সরকার বিভাগ এবং আওতাধীন দপ্তর, সংস্থা, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানকে কিছু নির্দেশনা অনুসরণ করতে বলা হয়।

বিদ্যুৎ ব্যবহার হ্রাসের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার বিভাগ এবং আওতাধীন দপ্তর, সংস্থা, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে প্রদত্ত বরাদ্দের ২৫ শতাংশ ব্যয় কমাতে হবে- এই নির্দেশনার লক্ষ্য অর্জনের জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগ ১২ দফা কার্যক্রম গ্রহণ করে।

সেগুলো হলো- বিদ্যুতের ব্যবহার হ্রাসের লক্ষ্যে স্থানীয় সরকার বিভাগ এবং আওতাধীন দপ্তর, সংস্থা ও সব প্রতিষ্ঠানে বিদ্যুৎ খাতে বরাদ্দের ২৫ শতাংশ ব্যয় কমাতে হবে। অফিস খোলার সময় এবং পরিষ্কারের পর কক্ষের লাইট এবং এসি বন্ধ রাখতে হবে। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কক্ষে ঢোকার পর সর্বনিম্ন যে পরিমাণ আলো প্রয়োজন; সে মোতাবেক অর্থাৎ সাশ্রয়ীভাবে লাইট জ্বালাবেন।

শীততাপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি) সর্বনিম্ন ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তদূর্ধ তাপমাত্রায় ব্যবহার করতে হবে। এসির বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ২০১৩ সালের ১৩ মের পরিপত্র যথাযথভাবে প্রতিপালন করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়।

অফিস ত্যাগের সময় কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিজ দায়িত্বে প্রয়োজন অনুযায়ী কক্ষের লাইট, ফ্যান ও এসি বন্ধ করবেন। ফের কক্ষে ঢোকার সময় নিজ নিজ দায়িত্বে প্রয়োজন অনুযায়ী কক্ষের লাইট, ফ্যান ও এসি চালু করবেন।

সব বিদ্যুৎ চালিত যন্ত্রপাতি যেমন- কম্পিউটার, টিভি, ফ্রিজ এবং ওভেন ইত্যাদি প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবহার করবেন; যাতে কোনোভাবেই বিদ্যুতের অপচয় না হয়। অফিস বন্ধের সময় সব কর্মকর্তা-কর্মচারী নিজ নিজ দায়িত্বে বিদ্যুৎ চালিত যন্ত্রপাতি যেমন- কম্পিউটার, টিভি ও ফ্রিজ ইত্যাদি বন্ধ রাখবেন।

টয়লেট জোনে দিনের বেলায় ব্যবহারের সময় ছাড়া সব লাইট বন্ধ থাকবে। বারান্দা বা নিরাপত্তা বাতি দিনের বেলায় জ্বালানো যাবে না। ভোরের আলো স্পষ্ট হওয়ার পর বাতি বন্ধ করে দিতে হবে এবং মাগরিবের পর প্রয়োজন অনুযায়ী জ্বালানো যাবে।

জ্বালানি ও বিদ্যুৎ কম খরচের উদ্দেশ্যে অনিবার্য না হলে শারীরিক উপস্থিতিতে সভা বাদ দিতে হবে এবং অধিকাংশ সভা অনলাইন প্লাটফর্মে আয়োজন করতে হবে। সার্ভাররুম ও অপরিহার্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ব্যবহার করা যাবে।

বিদ্যুতের ব্যবহার কমাতে ‘অফিসের মতো বাসায়ও অনুরূপ পদক্ষেপ নিতে হবে’ বলে ১২ দফার শেষ দফায় উল্লেখ করা হয়েছে।

স্থানীয় সরকার বিভাগ এবং আওতাধীন দপ্তর, সংস্থা ও সব প্রতিষ্ঠান অর্থ বিভাগের ২১ জুলাইয়ের পরিপত্র অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে পেট্রোল, অয়েল ও লুব্রিকেন্ট, গ্যাস ও জ্বালানি খাতে বরাদ্দকৃত অর্থের সর্বোচ্চ ৮০ শতাংশ ব্যয় করতে পারবে এবং ২০ শতাংশ সাশ্রয় করতে হবে বলে নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়।

এক্ষেত্রে বলা হয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ এবং আওতাধীন দপ্তর, সংস্থা ও সব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জরুরি না হলে বিদেশ ভ্রমণ পরিহার করতে হবে। স্থানীয় সরকার বিভাগ এবং আওতাধীন দপ্তর, সংস্থা ও  প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক ক্রয় পরিকল্পনা পুনঃপর্যালোচনা করে রাজস্ব ব্যয় কমাতে হবে।

‘সেই সঙ্গে সব কর্মকর্তা- কর্মচারী তার নিজের বা সরকারি যানবাহন একান্ত প্রয়োজন না হলে ব্যবহার করবেন না। ’

উপ-সচিব এ কে এম মিজানুর রহমান স্বাক্ষরিত এসব নির্দেশনা গত ২৮ জুলাই স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীন সব দপ্তর, সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান প্রধানদের কাছে পাঠানো হয়েছে।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button