আন্তর্জাতিক

ইরানি হামলার জবাব দিতে আমরাও প্রস্তুত : সৌদি বাদশা

মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় অপরিশোধিত তেল শোধনাগার ‘আরামকো কোম্পানি’র দুটি বৃহৎ স্থাপনায় ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইয়েমেনের ইরান সমর্থিত সশস্ত্র হুথি বিদ্রোহীরা। মূলত এ ঘটনায় এরই মধ্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন দেশটির বাদশা সালমান বিন আবদুল আজিজ।

মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘সৌদির স্থাপনায় হামলার পাল্টা জবাব দেওয়ার সক্ষমতা রিয়াদের আছে। আর এর জন্য আমরা সর্বক্ষণ প্রস্তুত।

কর্তৃপক্ষের বরাতে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা ‘রয়টার্স’ জানায়, এদিন রাজধানী রিয়াদে মন্ত্রিসভার এক বৈঠক শেষে সৌদি বাদশা একটি বিবৃতি দেন। যেখানে তিনি বলেছেন, ‘মন্ত্রিসভার বৈঠক থেকে আরামকোর স্থাপনায় হামলার ক্ষয়ক্ষতি পর্যালোচনা করা হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার প্রধানদের প্রতি এরই মধ্যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে; তারা যেন অবিলম্বে হামলাকারী ইরানকে মোকাবিলা করেন।’

এর আগে একই দিন রাতে তেহরানের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য আলোচনায় বসতে রিয়াদের পথে রওনা দিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও।

যাত্রা শুরুর পূর্বে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘সৌদির তেল স্থাপনায় হামলার পেছনে ইরান জড়িত বলে আমাদের কাছে যথেষ্ট প্রমাণ আছে। যে কারণে অবশ্যই ভয়াবহ সেই হামলার যথাযথ জবাব দেওয়া হবে।’

এ দিকে ওয়াশিংটন ডিসিতে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স ঘোষণা করেছেন, ‘ইরানের হামলার প্রেক্ষিতে আমাদের জবাব ঠিক কী হবে; এবার তা নিয়েই আলোচনা করতে পম্পেও সৌদির পথে রয়েছেন।’

মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট তার বক্তৃতায় আরও বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যেমনটি বলেছিলেন, আমরা এখন কারও সঙ্গে কোনো যুদ্ধে জড়াতে চাই না। আমার মতে সকল মার্কিনীরাও বর্তমানে ঠিক তা-ই ভাবছে। যদিও যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধের জন্য সব সময়ই প্রস্তুত।’

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বক্তব্যকে উদ্ধৃতি করে মাইক পেন্স বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সব অস্ত্রই প্রস্তুত। মধ্যপ্রাচ্যে আমাদের ও মিত্রদের স্বার্থ সুরক্ষায় আমরা সর্বোত্তম প্রস্তুত রয়েছি।’

এর আগে গত সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) ওভাল অফিসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘দৃশ্যত সৌদি আরবের তেলক্ষেত্রে হামলার জন্য ইরান একমাত্র দায়ী। তবে সেক্ষেত্রে ওয়াশিংটন অবশ্যই তেহরানের সঙ্গে যুদ্ধ এড়িয়ে চলতে চায়।’

পরিচয় গোপন রাখার শর্তে একজন মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, ‘গত সপ্তাহে সৌদির তেলক্ষেত্রে যে হামলাটি ইরান থেকে হয়েছে তা ছিল ক্রুজ মিসাইল। ট্রাম্প প্রশাসন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আগামী সপ্তাহে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে সংশ্লিষ্ট প্রমাণাদিসহ বিষয়টি উত্থাপন করা হবে।’

অপর দিকে বিশ্লেষকদের মতে, গত মঙ্গলবার ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে যে কোনো ধরনের আলোচনার সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন। মূলত এর পরপরই তেহরানের বিরুদ্ধে মার্কিন অবস্থান আরও কঠোর করল ট্রাম্প প্রশাসন।

যে কারণে জাতিসংঘের আসন্ন সাধারণ অধিবেশনে ইরানি প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মধ্যকার নাটকীয় বৈঠকের আশা ধুলায় মিশে গেছে বলেই ধারণা সংশ্লিষ্টদের।

সৌদির সরকারি প্রেস এজেন্সি (এসপিএ) জানায়, শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) স্থানীয় সময় ভোর চারটায় আবকাইক ও খুরাইসে তেল স্থাপনায় ড্রোন হামলার কারণে সৃষ্ট আগুন এরই মধ্যে আরামকোর শিল্প নিরাপত্তা দল নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে। যদিও এর জন্য দেশের সার্বিক তেল ও গ্যাস উৎপাদন অনেকটাই কমে গেছে।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button