পিরিয়ডের সময় খাদ্যাভ্যাস

প্রতিটি নারীর জীবনে পিরিয়ড বা ঋতুস্রাবের দিনগুলো যেমন গুরুত্বপূর্ণ, একই সাথে অস্বস্তিদায়কও বটে। নানা ধরনের শারীরিক ও মানসিক পীড়ায় নারীরা এই সময়টা পার করেন।তবে এই সময়ে শরীরের বিশেষ খেয়াল রাখার বিষয়ে বাংলাদেশের অধিকাংশ নারীই এখনো অন্ধকারে।
একইভাবে খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে সঠিকভাবে অবগত না হওয়ার কারণে পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে পুষ্টিহীনতায় ভুগে থাকেন অনেক নারী। শুধু তাই নয়, কিছু কিছু খাবার যেমন পিরিয়ড চলাকালীন অস্বস্তিকে খানিকটা প্রশমিত করে; কিছু কিছু খাবার এই অস্বস্তিতে যোগ বাড়তি মাত্রাও যোগ করতে পারে।
পুষ্টিবিদ নাহিদা আহমেদ বলেন, “পিরিয়ড চলাকালীন খাদ্যতালিকায় ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, বিভিন্ন ধরনের বাদাম, আয়রন, ফোলেট, ভিটামিন বি৬, ভিটামিন সি, ম্যাগনেশিয়াম ও ফাইবার জাতীয় খাবার রাখতে হবে এবং সেই সাথে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে।”
পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে যে খাবারগুলো অবশ্যই খাওয়া উচিত-
ফলমূল
মিষ্টি ফলমূল যা শরীরের চিনির চাহিদাকে পূরণ করবে এবং তরমুজ জাতীয় ফল যা শরীরের পানির চাদিহাকে পূরণ করবে। এছাড়াও ভিটামিন সি রয়েছে এমন ফলমূল যেমন আমলকি, পেয়ারা, আমড়া, জলপাই ইত্যাদি খেতে হবে।
লেবু
লেবুতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে যা শুধু শরীরের ভিটামিন সি এর চাহিদাই পূরণ করে না, অরুচি কাটাতেও সমান কার্যকর।
কলা
কলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম যা শরীরের জন্য খুব দরকারী এবং শরীরে শক্তি যোগায়। তলপেটের মাংসপেশিকে শিথিল হতে সাহায্য করে পিরিয়ডের ব্যথা থেকে মুক্তি দিতে পারে।
পাতা জাতীয় সবুজ শাক-সবজি
যাদের অনেক বেশি রক্তস্রাব হয়ে থাকে তাদের শরীরে আয়রনের ঘাটতি হয়, বাধাকপি বা পালংশাক এক্ষেত্রে দেহের আয়রনের ( লৌহ) ঘাটতি পূরণ করবে। এছাড়াও পালংশাকে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেশিয়াম থাকে।
পানি
এসময় দেহকে সতেজ ও প্রাণবন্ত রাখতে প্রচুর পানি পানের বিকল্প নেই।
মুরগির মাংস
মুরগির মাংসে আয়রনের পাশাপাশি প্রচুর পরিমানে প্রোটিন রয়েছে যা স্বাস্থ্যকে অটুট রাখবে। অনেকে পিরিয়ড চলাকালীন অতিরিক্ত ক্ষুধা অনুভব করে, তারা মুরগির মাংস দিয়ে তৈরি খাবার খেতে পারেন, যাতে স্নেহের পরিমাণ তুলনামূলক কম।
মাছ
মাছ দেহের আয়রন, প্রোটিন ও ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিডের চাহিদা পূরণ করে। এই ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড মাসিকজনিত ব্যথা হ্রাস করে থাকে।
হলুদ
বিভিন্ন ধরনের প্রদাহের ক্ষেত্রে হলুদ বেশ উপশমদায়ক। পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে দুধের সাথে হলুদ মিশিয়ে খেলে প্রদাহজনিত সমস্যাগুলোঅপেক্ষাকৃত কম দেখা যায়।
বাদাম
বেশীরভাগ বাদামই ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড ও প্রোটিন সমৃদ্ধ। এছাড়াও এতে ম্যাগনেশিয়াম ও বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন থাকে।
ডার্ক চকলেট
ডার্ক চকলেট শুধু খেতেই সুস্বাদু নয়, বরং এর পুষ্টিগুণও রয়েছে অনেক। ডার্ক চকলেটে প্রচুর পরিমাণেআয়রন ও ম্যাগনেশিয়াম থাকে। লৌহঘাটতি পূরণে ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে এটি বেশ কার্যকর।
টকদই
ঋতুস্রাব চলাকালীন বা ঋতুস্রাব-পরবর্তী সময়ে নারীরা অনেকসময় ছত্রাকজনিত সংক্রমণে ভুগে থাকেন। টকদই একটি প্রো-বায়োটিক সমৃদ্ধ খাবার হওয়ায় তা এসব সংক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। টকদইয়ে ম্যাগনেশিয়াম ও ক্যালশিয়ামও থাকে।
পিরিয়ড চলাকালীন যে খাবারগুলো এড়িয়ে চলা উচিত-
লবণ
খাবারে অত্যধিক লবণ পরিহার করা উচিত, কারণ অতিরিক্ত লবণ সেবন শরীরে পানি ধরে রাখে যা অস্বস্তিদায়ক পরিস্থিতি তৈরি করে।
কফি
কফি অনেক সময় হজমে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে যদি ডায়রিয়াজনিত সমস্যা দেখা দেয়, তাহলে কফি সেবনের মাত্রা কমিয়ে দেওয়া উচিত।
মশলাদার খাবার
কেউ যদি মশলাদার খাবার খেতে অভ্যস্ত না হয় বা খেলে হজমে সমস্যা হয় তাহলে পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে তা পরিহার করাই শ্রেয়।
মিষ্টিজাতীয় খাবার
এসময় মিষ্টিজাতীয় খাবার পরিহার করা উচিত। নতুবা পেটে গ্যাস হতে পারে বা হঠাৎ করে রক্তে চিনির মাত্রা বেড়ে যেতে পারে, যা পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে অনাকাঙ্ক্ষিত সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে, মাথাব্যাথার উদ্রেক করতে পারে।
লাল মাংস
লাল মাংসে আয়রনের পাশাপাশি উচ্চমাত্রায় থাকে প্রোস্টাগ্লানডিন। পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে দেহে প্রোস্টাগ্লানডিন তৈরি হয়; দেহে যদি এর মাত্রা অধিক হয়ে যায় তাহলে তীব্র ব্যথার সৃষ্টি হয়।