অর্থনীতি

ই-কমার্সের ভাউচার, প্রি-পেমেন্ট নিয়ে উদ্বেগ

বাংলাদেশে অনলাইন কেনাকাটা দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠলেও নেই তদারক সংস্থা, কী করা যাবে আর করা যাবে না সে বিষয়েও নেই স্পষ্ট নির্দেশনা; এই ফাঁকে ক্রেতা আকর্ষণে লোভনীয় নানা অফার নিয়ে হাজির হচ্ছে নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান, যা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এই খাত সংশ্লিষ্টরা।

ই-কমার্স ব্যবসায়ীরাও বলছেন, ই-কমার্সকে আইনের মধ্যে আনতে ২০১৮ সালে ‘জাতীয় ডিজিটাল কমার্স নীতিমালা’ করা হলেও সেখানে সব বিষয়ের স্পষ্ট সমাধান নেই। সে কারণে কর্মপন্থা নিয়ে তাদের দ্বিধাদ্বন্ধও কাটছে না। খাত সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে অনেক ই-কমার্স কোম্পানি আগাম টাকা পরিশোধ (প্রি-পেমেন্টে), ক্যাশ ভাউচার, ক্যাশব্যাক অফারসহ বিভিন্ন কৌশলে নিজেদের বাজার বাড়ানোর চেষ্টা করছেন।

গ্রাহকের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চালু হওয়া এসব কৌশলের আড়ালে বড় ধরনের আর্থিক কেলেঙ্কারি হলে তা চিহ্নিত করার মতো সক্ষম কর্তৃপক্ষ গড়ে উঠেনি। এছাড়া পণ্য সরবরাহে বিলম্ব হওয়া নিয়ে গ্রাহকদের মধ্যে অসন্তোষ থাকলেও তা দেখভালেও কেউ নেই। সমপ্রতি ইভ্যালি নামের একটি নতুন ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মের বিভিন্ন অফারে বিষয়গুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও সংশ্লিষ্টদের মাঝে বড় আকারে আলোচনার জন্ম দেয়। গত ৭ জুলাই থেকে নতুন ক্রেতাদের জন্য ২০০ শতাংশ ও দেড়শ শতাংশ ক্যাশব্যাক ভাউচার ঘোষণা করে ইভ্যালি।

ফেসবুকে দেওয়া তাদের ঘোষণা অনুযায়ী, একজন ক্রেতার কাছ থেকে ২০০ শতাংশ ভাউচারে সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা জমা নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। আর দেড়শ শতাংশ ভাউচারে নেওয়া হয়েছে ‘আনলিমিটেড’ টাকা। প্রায় একমাস পর ইভ্যালির প্ল্যাটফর্ম থেকে বিভিন্ন পণ্য কেনাকাটার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। ভাউচার ছাড়াও বিভিন্ন অফারে গ্রাহকের কাছ থেকে আগাম টাকা জমা রাখছে ইভ্যালি।

ভাউচারের নামে বেচাকেনার এক মাস আগেই ক্রেতার কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করা যায় কি না এমন প্রশ্নের জবাবে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) সহ-সভাপতি রেজওয়ানুল হক জামি বলেন, ‘এ ধরনের প্রক্রিয়া নিয়ে বিদ্যমান আইনের সব কিছু জানা নেই। নির্দিষ্ট কোনো প্রতিষ্ঠান নিয়েও মন্তব্য করা ঠিক হবে না। তবে এটা ই-কমার্সের ভবিষ্যৎ নিয়ে বিভিন্ন রকম ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।’

দীর্ঘদিন ধরে ই-কমার্সের সঙ্গে যুক্ত অনলাইন মার্কেটপ্লেস আজকের ডিল-এর প্রধান নির্বাহী ফাহিম মাসরুর বলেন, ‘অনলাইনে কেনাকাটার বিষয়ে সমপ্রতি কিছু ঘটনা ঘটছে, যা আসলেই উদ্বেগের। ভাউচার কিংবা প্রি-পেমেন্টের ধরন কেমন হওয়া উচিত তা এই সেক্টরের জন্য এখনও ঠিক করা হয়নি। তবে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য কেউ গ্রাহকের টাকা ধরে রাখতে পারে না বলেই জানি।’

বিষয়টি নিয়ে ইভ্যালির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রাসেল বলেন, বাজারে নতুন আসা ইভ্যালি ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে ও ই-কমার্সের প্রতি মানুষকে অভ্যস্ত করতে বিনিয়োগ কৌশলের অংশ হিসাবে ক্যাশব্যাক ও ভাউচারসহ বিভিন্ন অফার দিয়েছে। তবে বিভিন্ন মহল থেকে উদ্বেগ উঠায় তা বিবেচনায় নিয়ে এবং এই সেক্টরের শৃঙ্খলার স্বার্থে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। একই ধরনের অফার দিয়ে কোনো বেনামি প্রতিষ্ঠান গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার আশঙ্কার সঙ্গেও একমত পোষণ করেন রাসেল। তিনি বলেন, ‘অ্যামাজনসহ অন্যান্য প্ল্যাটফর্মে প্রি-অর্ডারের পদ্ধতি প্রচলিত আছে। তবে সেটা কতদিন দীর্ঘ হবে সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনো নির্দেশনা নেই। আমরা কোনো আইনি বাধ্যবাধকতার কারণে এটা বন্ধ করিনি। এটা বন্ধ করেছি যাতে কেউ এর সুযোগ নিয়ে বাজারে কোনো কেলেঙ্কারি ঘটাতে না পারে।’

ভাউচারের মাধ্যমে কিংবা প্রি পেমেন্টের মাধ্যমে ভবিষ্যতে যাতে কেউ টাকা সংগ্রহ করতে না পারে সেজন্য ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন থেকে একটি বিধি নিষেধ জারি করা হবে বলেও জানান তিনি।

ই-ক্যাবের সভাপতি শমী কায়সার বলেন, লেনদেনের এই বিষয়গুলো নিয়ে অচিরেই তারা কার্যকরী কমিটির সদস্যদের নিয়ে আলোচনায় বসবেন। লেনদেনের ঝুঁকি এড়িয়ে কীভাবে অনলাইন বেচাকেনাকে নিরাপদ করা যায় তা ঠিক করবেন। ই-কমার্সের দেখভাল করার জন্য একটি সরকারি মনিটরিং কর্তৃপক্ষের প্রয়োজন বলে মনে করেন কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি গোলাম রহমান। তিনি বলেন, ‘ই-কমার্স বা ডিজিটাল কমার্স যাই বলুন না কেন, যদি চান যে সব নিয়মের মধ্যে চলবে, তাহলে একটা মনিটরিং অথরিটি লাগবেই।’

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, ‘এই মুহূর্তে তেমন তো রেগুলেটারি অথরিটি আমাদের নেই। তবে আমারা এ ব্যাপারে কথাবার্তা বলছি। খুব তাড়াতাড়ি আমরা কিছু একটা করব। আমাদের চিন্তা ভাবনায় আছে।’

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button