সারাদেশ

ত্রান নয়, ছবি তোলাই যেন মানবতা

কলাপাড়া(পটুয়াখালী)প্রতিনিধি: করোনা ভাইরাসের সংক্রমন এড়াতে ঘরে থাকা কর্মহীন মানুষদের দূভোর্গ এখন চরমে। এই খেটে খাওয়া কর্মহীন মানুষদের দূভোর্গ লাগবে সরকারী-বেসরকারী বিভিন্ন সংস্থা ত্রান সামগ্রী বিতরন করছে। আর এসব ত্রান সামগ্রী দুস্থ্যদের মাঝে বিতরনের ছবি ফলাও করে ছড়ানো হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। দেখে মনে হয় যেন ছবি তোলা কিংবা সেলফিই হচ্ছে তাদের মূল উদ্দেশ্য। অথচ এই সেলফি তথা ছবি যে কতো মানুষের সন্মানহানী ঘটিয়েছে তার হিসাব রাখেননি ওই ত্রান দাতারা। দুস্থ্যদের ঘরে ত্রান পৌঁছে দেয়া নয়, যেন ত্রান বিতরনের ছবি তোলাই মুখ্য উদ্দেশ্য ত্রান দাতাদের।


আর এসব ত্রান সামগ্রী বিতরনে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখানো হয় প্রতিনিয়ত। ৫/১০ জন মিলে সামাজিক দূরত না মেনে ক্যামেরার দিকে তাক করিয়ে একজনকে ত্রান দেওয়ার ছবি মূহুর্তেই ভাইরাল হতে দেখা গেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। একজনকে একটি সাবান সহায়তা দিতে দেখা যায় দশজনকে। সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধি কিংবা জনপ্রতিনিধি কেউই ত্রান নিতে আসা দুস্থ্যদের ছবি তোলার এই হয়রানী থেকে বাদ দেয়না ।


এমনকি বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা ওয়ার্ল্ড কনসার্ন’র বিরুদ্ধে দুস্থ্য মানুষের হাতে ত্রান সামগ্রী দিয়ে ছবি তোলার পর তা আবার ফিরিয়ে নেয়ার মত অভিযোগ পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় মূখরোচক বিষয় ছিল। যদিও এনিয়ে ওয়ার্ল্ড কনসার্ন’র কলাপাড়া প্রতিনিধি মি: রাজিব বলেন, তাদের ওয়ার্ড দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির এক সদস্যের বিরুদ্ধে তার প্রতিপক্ষরা এই অপপ্রচার চালিয়েছে। তাছাড়া আমরা মাত্র আট লক্ষ টাকা বরাদ্দ পেয়েছি। যা দিয়ে উপজেলার নীলগঞ্জ, মহিপুর, লতাচাপলি, বালিয়াতলী ও মিঠাগঞ্জ ইউনিয়নে আমাদের তালিকাভুক্ত ১৫০০ দুস্থ্য পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন গুলোতে আমাদের আত্মসহায়ক দল ও ওয়ার্ড দুর্যোগ কমিটির দুস্থ্য সদস্যরা এ সহায়তা পেয়েছে।
জনসংখ্যা বিভাগের তথ্য মতে, কলাপাড়ার ১২টি ইউনিয়ন ও দু’টি পৌরসভায় প্রায় আড়াই লাখ লোকের মধ্যে শতকরা ২৪ ভাগ মানুষই দরিদ্র সীমার নীচে বসবাস করে। এদের মধ্যে জেলে, কৃষক, দিনমজুর, ঠেলা গাড়ী-ভ্যান শ্রমিক, রিক্সা শ্রমিক, অটো শ্রমিক, বাস-ট্রাক শ্রমিক, মৎস্য শ্রমিক, ধোপা, নাপিত, মুচি, প্রতিবন্ধী, বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা, ইটভাটা শ্রমিক, স্বমিল শ্রমিক, কাঠ মিস্ত্রী, রাজমিস্ত্রী, হেলপার, মাটি কাটা শ্রমিক, ভিক্ষুক সহ নানান পেশার অন্তত: ৫০ হাজার মানুষ রয়েছে। করোনা ভাইরাসের সংক্রমন এড়াতে লাগাতার ঘরে বসে থাকায় এ শ্রেনীর মানুষের উপার্জন একবারেই বন্ধ হয়ে গেছে। এখন দেখা দিয়েছে প্রায় প্রতিটি পরিবারে খাদ্য সংকট। তাই দুর্যোগ ও ত্রান মন্ত্রনালয়ের মাধ্যমে তাদের খাদ্য সহায়তার জন্য ত্রান সামগ্রী বিতরন করছে সরকার। আর এ বিতরন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করছে প্রশাসন কিংবা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিগন। এছাড়াও সামাজিক সংগঠন সহ ব্যক্তি উদ্যোগেও কিছু ত্রান সামগ্রী বিতরন করা হচ্ছে।


উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা তপন কুমার ঘোষ বলেন, দুস্থ মানুষের সহায়তার জন্য এ পর্যন্ত ১৫১ মেট্রিক টন চাল ও নগদ পাচঁ লক্ষ ৯২ হাজার ৫২০ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। এছাড়া শিশু খাদ্যের জন্য ৯৪, ৫৬০ টাকা বরাদ্দ রয়েছে। যা দুস্থ্য মানুষের মাঝে ত্রান সহায়তা হিসেবে দেয়া হচ্ছে। এছাড়া কয়েকটি সমাজিক সংগঠন এবং স্থানীয় সাংসদ সহ দু’একজন ব্যক্তি উদ্যোগে করোনা পরিস্থিতিতে দুস্থ্যদের ত্রান সহায়তা দিচ্ছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু হাসনাত মো.শহিদুল হক বলেন, ত্রান হাতে দিয়ে ছবি তোলার পর ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়টি ওয়ার্ল্ড কনসার্ন’র প্রতিনিধিকে ডেকে জিজ্ঞাসা করা হবে। তাদের ত্রান বিতরনের মাষ্টার রোল দেখে তদন্ত সাপেক্ষে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Back to top button