অর্থনীতি

ব্যয়ের সুষ্ঠু পরিকল্পনা গ্রহণের নির্দেশ অর্থ মন্ত্রণালয়ের

প্রত্যেক মন্ত্রণালয়কে বাজেটের টাকা ব্যয়ের ক্ষেত্রে সুষ্ঠু পরিকল্পনা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে পরিকল্পনার প্রতিবেদন অর্থ মন্ত্রণালয়ে দাখিল করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি প্রতি তিন মাসের (প্রান্তিক) বাজেট বাস্তবায়নের প্রতিবেদনও পাঠাতে বলা হয়েছে মন্ত্রণালয়গুলোকে।

এছাড়া রাজস্ব আহরণকে গুরুত্ব দিয়ে কোয়ার্টারভিত্তিক লক্ষ্য নির্ধারণ ও তা অর্জন করতে বলা হয়। সম্প্রতি এসব নির্দেশনা দিয়ে পরিপত্র জারি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।

পরিপত্রে বলা হয়, বিগত বছরগুলোর অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের বাজেট বাস্তবায়ন অর্থবছরের প্রথমদিকে ধীরগতিতে চলে। একইভাবে রাজস্ব আদায়ে ধীরগতি লক্ষ্য করা যায়। পাশাপাশি সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতা ছাড়া অন্য সব ব্যয়ে শ্লথগতি বিরাজ করে।

বিশেষ করে বিভিন্ন ইউটিলিটি বিল পরিশোধ, মেরামত সংরক্ষণ, নির্মাণ ও পূর্ত কাজ এবং মালামাল সংগ্রহের ক্ষেত্রে অর্থবছরের শেষদিকে পদক্ষেপ নেয়া হয়। এতে অনেক ক্ষেত্রে সরকারি ব্যয়ের গুণগত মান নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না।

এসব কারণে বছরের শেষে এসে সরকারকে অপরিকল্পিত ঋণের দায়ভার গ্রহণ করতে হয়। ফলে বাজেট শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা যায় না।

আরও বলা হয়, সরকারের আয় ও ব্যয়ের মধ্যে ভারসাম্যহীনতা থাকছে না। এর একটি প্রধান কারণ রাজস্ব আহরণ ও সরকারি অর্থ ব্যয়ের সুষ্ঠু পরিকল্পনা নেই। সুষ্ঠুভাবে এবং সময়মতো বাজেট বাস্তবায়ন সম্ভব হলে অপরিকল্পিত সরকারি ঋণ গ্রহণ থেকে বের হওয়া যেত।

পাশাপাশি ঋণজনিত ব্যয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমানো সম্ভব হতো। এজন্য প্রত্যেক মন্ত্রণালয়কে সুষ্ঠু ব্যয়ের পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, মন্ত্রণালয়গুলোকে বাজেট বাস্তবায়ন মনিটরিং করতে এ নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এসব তথ্যের ভিত্তিতে অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিক (জুলাই-সেপ্টেম্বর) বাজেট বাস্তবায়ন হার জাতীয় সংসদে প্রকাশ করা হবে।

প্রসঙ্গত চলতি অর্থবছরে ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা দেয়া হয়। তা বাস্তবায়নে রাজস্ব আদায় করতে হবে ৩ লাখ ৭৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। এছাড়া পরিচালনা ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৭৭ হাজার ৯৩৪ কোটি টাকা এবং উন্নয়ন হচ্ছে ২ লাখ ১১ হাজার ৬৮৩ কোটি টাকা।

ব্যয় পরিকল্পনা : ব্যয় পরিকল্পনা প্রসঙ্গে অর্থ বিভাগের পরিপত্রে বলা হয়, সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতাসহ অন্য সব আইটেমের বিপরীতে তিন মাস অন্তর ব্যয় সমানুপাতিক হারে নির্ধারণ করতে হবে। পাশাপাশি চাকরিজীবীদের উৎস ও শ্রান্তিবিনোদন ভাতার হিসাবটি সেখানে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

চাকরিজীবীদের বর্ধিত (বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট) বেতনের বিষয়টি বিবেচনায় নিতে হবে। এছাড়া প্রত্যেক মাসের তৃতীয় সপ্তাহের মধ্যে আগের মাসের সরকারের সব ইউটিলিটি বিল পরিশোধের নির্দেশ দেয়া হয়।

একইভাবে সরবরাহ ও সেবা খাতে অন্তর্ভুক্ত অন্য আইটেমের ক্ষেত্রে তিন মাসভিত্তিক বরাদ্দ নির্ধারণ করতে হবে। তবে এটি হবে অন্যান্য বছরের ব্যয়ের প্যাটার্ন বিবেচনায়।

ব্যয় পরিকল্পনা বিষয়ে আরও বলা হয়, অর্থবছরের প্রথম থেকেই সব ধরনের সরকারি কাজের মেরামত ও সংস্কার কাজ শুরু করতে হবে। যাতে বিভিন্ন কোয়ার্টারে এসব কাজের বিল পরিশোধে ভারসাম্য বজায় রাখা যায়।

আর শেষ তিন মাসে মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণের বিল পরিশোধের চাপ সৃষ্টি না হয় এ জন্য সতর্ক করা হয় মন্ত্রণালয়গুলোকে। মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে আরও বলা হয়, সম্পদ সংগ্রহ ও ক্রয়ের ক্ষেত্রে পরিচালনা ও উন্নয়ন উভয় বাজেটের আওতায় পণ্য ও সেবা ক্রয়ের একটি ‘সংগ্রহ পরিকল্পনা’ প্রস্তুত করতে হবে।

এই পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রতি তিন মাস অন্তর ব্যয়ের হিসাব যথাযথ প্রদর্শন করতে হবে।

বৈদেশিক অনুদান : বৈদেশিক অনুদান ও ঋণ সংগ্রহের পরিকল্পনা তৈরি করে অর্থ বিভাগে পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়। আর সাহায্য মঞ্জুরি ও অনুদানের অর্থ চারটি সমান কিস্তিতে অবমুক্ত করতে চার দফা লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে বলা হয়েছে।

রাজস্ব আহরণ : অর্থ বিভাগ থেকে বলা হয়, ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে বিভিন্ন আইটেমের বিপরীতে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে বলা হয়। এক্ষেত্রে মৌসুমভিত্তিক কারণে কোনো আইটেম বিপরীত রাজস্ব আদায় কমবেশি হলে তা বিবেচনা নিতে হবে।

এছাড়া সঠিকভাবে রাজস্ব আহরণ করতে বিভিন্ন আইটেমের বিপরীতে ধার্যকৃত লক্ষ্যমাত্রার ক্ষেত্রে তিন মাস অন্তর রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করতে বলা হয়। সেখানে এনবিআর নিয়ন্ত্রিত করসমূহ, এনবিআরবহির্ভূত করসমূহ এবং কর ছাড়া প্রাপ্তি সংক্রান্ত বাজেট বাস্তবায়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে আলাদাভাবে ফরম ব্যবহার করতে বলা হয়েছে।

এজন্য চলতি বাজেট সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে বছরের শুরুতে পরিকল্পনা গ্রহণ, যথাযথভাবে সেটি বাস্তবায়ন এবং নিয়মিত পর্যবেক্ষণের জন্য প্রত্যেক মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেয়া হয়।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button