জাতীয়রাজনীতিলিড নিউজ

সরকারের পাপের ইতিহাস মাটি ফুঁড়ে বেরিয়ে আসছে : মির্জা ফখরুল

সরকারের পাপের ইতিহাস মাটি ফুঁড়ে বেরিয়ে আসছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে রোববার এক মানববন্ধনে অংশ নিয়ে তিনি বলেন, দেশটা জুয়াড়িদের দেশ হয়ে গেছে।

এ সরকারকে যদি আমি বলি জুয়াড়ি সরকার, আমার অপরাধ হতে পারে না। কারণ, সরকার সবদিক থেকে ব্যর্থ হয়ে এখন জুয়ায় আশ্রয় নিয়েছে। তারা ভাবছে জুয়া খেলে যদি কোনোরকমে ক্ষমতায় টিকে থাকা যায়। কিন্তু যাবে না, কারণ এটা হচ্ছে গণতন্ত্রকামী মানুষের দেশ। এভাবে টেকা যাবে না। সীমা ছাড়িয়ে যাবেন না। আল্লাহ তা পছন্দ করেন না। তার প্রমাণ পাচ্ছেন।

এ মুহূর্তে সরকারের পদত্যাগ করা উচিত মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, অন্যথায় জনগণ অতীতে যেভাবে রায় দিয়েছে, সেভাবেই আপনাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে এবং আপনাদেরকে বাধ্য করবে জনগণের সরকার গঠন করার জন্য, পার্লামেন্ট গঠন করার জন্য এবং নির্বাচন করার জন্য।

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের উদ্যোগে এ মানববন্ধন হয়। সংগঠনের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাসের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদের পরিচালনায় মানববন্ধনে বিএনপির নুরে আরা সাফা, মহিলা দলের হেলেন জেরিন খান, নেওয়াজ হালিমা আরলি, খান শামসুন্নাহার প্রমুখ বক্তব্য দেন।

সম্প্রতি ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অপসারণ প্রসঙ্গে বিএনপির মহাসচিব বলেন, চিন্তা করতে পারেন? ছাত্রনেতা, ছাত্রলীগের সভাপতি, তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলরকে বলেছেন, আপনার ৪০০-৫০০ কোটি টাকার যে প্রজেক্ট আছে সে জন্য আমাকে দিতে হবে ৮৬ কোটি টাকা। সেটাকে বলছে ফেয়ার শেয়ার। সেটা নাকি তার ভাগ।

খবরের কাগজে দেখবেন, এই যে শামীম (জি কে শামীম), সে ৫০০ কোটি টাকার কাজ করছে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে। সরকারের নির্দেশেই সে এসব কাজ পেয়েছে। আজ আওয়ামী লীগের ছোট নেতা, বড় নেতা, পাতি নেতা, তাদের দাপটে বাংলাদেশে আর কেউ থাকতে পারছে না। সরকারি কর্মচারীরা চুপচুপ চলে যান মান-সম্মান, ইজ্জত নিয়ে। যা হুকুম করে তাই করতে হয়- চাঁদা দাও, নইলে যাও। টেন্ডার দাও, নইলে যাও। এই হচ্ছে অবস্থা।

ফখরুল বলেন, অর্থনীতি নাকি মডেল হয়ে গেছে, সাংঘাতিক রোলিং অর্থনীতি। এমন মডেল হয়েছে যে, মুখ থুবড়ে পড়েছে। ব্যাংকে গেলে টাকা নাই। আপনি দুই লাখ টাকার চেক নিয়ে যান, বলবে, ভাই আজ দেয়া যাবে না, কাল আসুন। ১০ লাখ তো প্রশ্নই ওঠে না। আর কী করছেন? যারা ঋণখেলাপি, তাদের ঋণ মাফ করে দিচ্ছেন। কারণ আপনাদের বড় বড় নেতা-মন্ত্রী-এডভাইজার হাজার হাজার কোটি টাকার ঋণ নিয়েছেন।

এই ক্যাসিনোতে চাকরি করে কারা? বিদেশিরা, তারা টাকা পাচার করে। গত এক বছরে ২৭ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে গেছে। কানাডার বেগমপাড়ায় বাড়ি কিনে, মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম কিনে, লন্ডনের সবচাইতে পশ এলাকায় সেখানে বাড়ি কেনা হয়।

আমরা সব খবরই রাখি। কে কত টাকা পাচার করছেন, কে কতটি বাড়ি কিনছেন, কে কতগুলো ব্যবসা করছেন, সুইস ব্যাংকে কার কত টাকা জমা হচ্ছে- দেশের মানুষ সব খবরই রাখে।

তিনি বলেন, আজ সরকারের লোকেরা ইচ্ছামতো মানুষ খুন করে, ক্রসফায়ার করে। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হচ্ছে অবাধে। আমাদের নেতাকর্মীদের তুলে নিয়ে যাওয়া হয়, জিজ্ঞাসা করলে বলা হয় জানি না। নিখুঁতভাবে গুম হয়ে যায় মানুষ। আমাদের এমপিও পর্যন্ত বাদ যাননি।

খালেদা জিয়ার অসুস্থতার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা একবারও বলি নাই তাকে দয়া করে ছেড়ে দিন। দেশের একজন নাগরিক হিসেবে তার যা প্রাপ্য সে অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। আমরা কোর্টে যাই জামিনের জন্য। বিচারপতি সব বক্তব্য শুনে চলে যান। বলেন, পরে আদেশ দেব। যখন ওপর থেকে নির্দেশ আসে পরে তিনি আদেশ দেন। বিচার বিভাগের কোনো স্বাধীনতা নেই। সরকার বিচার বিভাগ নিয়ন্ত্রণ করছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, অনেকে দোষারোপ করেন পুলিশকে। পুলিশ কী করবে? উপর মহল থেকে যা হুকুম হয়, নির্দেশ হয় পুলিশের তা পালন করতে হয়। তারা হুকুম দিয়েছে দেশে যারা গণতন্ত্র চায়, তাদের মার, পুলিশ হুকুমমতো মেরেছে। হুকুম দিয়েছে, নির্বাচনের সব কেন্দ্র দখল কর, পুলিশ করেছে।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button