রাজশাহী বিভাগসারাদেশ

প্রধান শিক্ষকের অবহেলায় জাতীয়করণ হারাতে বসেছে বদলগাছী সরকারি মডেল পাইলট হাইস্কুল

নওগাঁ প্রতিনিধি: নওগাঁর ‘বদলগাছী সরকারি মডেল পাইলট হাইস্কুল’ সরকারিকরণ করা হলেও জাতীয়করণ করা হয়নি। এতে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা একদিকে যেমন বোনাস পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে অপরদিকে সিনিয়রটি থেকে পিছিয়ে পড়ছেন। এতে প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক সুরেশ সিংহ এর অবহেলায় ও স্বেচ্ছাচারিতায় জাতীয়করণ হারাতে বসেছে। তার শিক্ষা জীবনে তিনটিতে তৃতীয় শ্রেনী। প্রতিষ্ঠানটি জাতীয়করণ হলে চেয়ার হারাতে পারেন এই ভয়ে তিনি কোন ধরনের চেষ্টা করছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে। এটি উপজেলার একটি সুনামধন্য প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠান প্রধান অযোগ্য হওয়ায় তাকে বাদ দিয়ে বিদ্যালয়ের জাতীয়করণ কাজ দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য কতৃর্পক্ষের দৃষ্টি কামনা করছেন অন্য শিক্ষকরা।

জানাগেছে, সুরেশ সিংহ ১৯৭৯ সালে মাধ্যমিক, ১৯৮১ সালে উচ্চ মাধ্যমিক এবং ১৯৮৩ সালে নওগাঁ সরকারি কলেজ থেকে বিএসসি ডিগ্রী লাভ করেন। তার শিক্ষা জীবনে তিনটিতে তৃতীয় শ্রেনী। কর্মজীবনে ১৯৮৮ সালে উপজেলার কার্তিকাহার উচ্চ বিদ্যালয়ে জীববিজ্ঞান বিষয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৯৫ সালে একই বিদ্যালয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক হন। এরপর ২০০০ সালে বদলগাছী মডেল পাইলট হাইস্কুলে জীববিজ্ঞান বিষয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। একই বিদ্যালয়ে ২০১০ সালের ৩১ আগষ্টে প্রধান শিক্ষক হন।

২০১৬ সালে সারাদেশে ৩২৮টি বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে প্রথম ধাপে নওগাঁর দুইটি বিদ্যালয় তালিকা ভুক্ত হয়। যার একটি বদলগাছী মডেল পাইলট হাইস্কুল এবং অপরটি আত্রাই উপজেলার আহসানগঞ্জ মেমোরিয়াল একাডেমি উচ্চ বিদ্যালয়। এরপর ২০১৮ সালে ২১ মে সরকারি ঘোষণা করা হয়। এরপর বিদ্যালয়ের সঙ্গে সরকারি শব্দটি যোগ হয়ে ‘বদলগাছী সরকারি মডেল পাইলট হাইস্কুল এবং আহসানগঞ্জ মেমোরিয়াল একাডেমি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় হয়’। পরবর্তীতে সরকারি নিদের্শনায় রাজশাহী উপপরিচালকের তত্ত্বাবধানে জাতীয়করণের লক্ষ্যে কাজ শুরু হয়। পর্যায়ক্রমে উপপরিচালক বিদ্যালয় পরিদর্শণ করে মতামত মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। এরপর বিদ্যালয়ের স্থাবর অস্থাবর সকল সম্পত্তি সরকারের নিকট হস্থান্তর করা হয়। পর্যায় ক্রমে বিদ্যালয়ের সকল কাগজপত্র নিয়ে ২০১৯ সালের ১ আগষ্টে মন্ত্রণালয়ে আলোচনা জন্য আয়োজন করে। প্রধান শিক্ষক সুরেশ সিংহ সহ আরও দু’জন শিক্ষক ঢাকায় আলোচনায় অংশগ্রহনে জন্য যান। মন্ত্রণালয়ের পাশ ১টা থাকায় বাঁকী দু’জনকে বাহিরে রেখে প্রধান শিক্ষক কাগজপত্র নিয়ে একা আলোচনায় অংশ নেন।

অভিযোগ আছে- সুরেশ সিংহ আলোচনায় অংশ নেয়া অন্য স্কুলের কাগজপত্র জমা দেওয়া শিক্ষকদের কাছ থেকে জানতে পারেন একাধিক তৃতীয় শ্রেনী পাওয়া শিক্ষক জাতীয়করণের আওতায় আসবে না। বিষয়টি জানার পর তিনি আলোচনায় অনুপস্থিত দেখিয়ে ফিরে আসেন এবং শিক্ষকদের সঙ্গে নাটকীয়তা শুরু করেন। পরে তার নাটকীয়তা প্রকাশ পেলে বাধ্য হয়ে মন্ত্রণালয়ের সব শেষ আলোচনায় গত বছরের ৫ নভেম্বরে সকল শিক্ষকের কাগজপত্র জমাদেন। কিন্তু কোন কাজেই আসেনি।

আহসানগঞ্জ মেমোরিয়াল একাডেমি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় যথাযতভাবে কাগজপত্র জমা দেওয়ায় জাতীয়করণ লাভ করে এবং চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে গেজেটভুক্ত হয়ে শিক্ষকরা সরকারি সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন। কিন্তু প্রধান শিক্ষক সুরেশ সিংহ’র অবহেলায় ও স্বেচ্ছাচারিতায় জাতীয়করণ না হওয়ায় বঞ্চিত হচ্ছে প্রতিষ্ঠানের ১২ জন শিক্ষক ও চারজন কর্মচারী।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষক বলেন, প্রধান শিক্ষক সুরেশ সিংহ তার ব্যক্তি স্বার্থের কারণে আমাদের কাগজপত্রগুলো সঠিক সময়ে মন্ত্রনালয়ে জমাদেননি। এতে আমরা জাতীয়করণ থেকে পিছিয়ে পড়েছি। বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ হলে হয়ত তার চেয়ার হয়ত থাকবে না। ওই চেয়ার থেকেই তিনি অবসরে যেতে চান। তার অবহেলায় ও স্বেচ্ছাচারিতায় জাতীয়করণ না হওয়ায় বঞ্চিত হচ্ছে প্রতিষ্ঠানের ১২ জন শিক্ষক ও চারজন কর্মচারী।

শিক্ষকরা আরো বলেন, আমরা এমপিওভুক্ত’র সুযোগ সুবিধা পেলেও সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। এছাড়া একদিকে যেমন বোনাস পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছি অপরদিকে সিনিয়রটি থেকে পিছিয়ে পড়েছি। আগামী ২ বছরের মধ্যে তিনজন শিক্ষক অবসরে চলে যাবেন। সরকারি সুবিধা ভোগ করা তাদের ভাগ্যে জুটবে কিনা বলা যাচ্ছে না। বিদ্যালয়টি আদ্যে জাতীয়করণ হবে কিনা তার কোন নিশ্চিয়তা নাই। প্রধান শিক্ষককে বাদ রেখেই বিদ্যালয়ের জাতীয়করণের দাবী জানান শিক্ষকরা।

এ ব্যাপরে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুরেশ সিংহ বলেন, আমার কারণেই বিদ্যালয়টি সরকারিকরণ হয়েছে। সবাই এমপিও’তে বেতন পাচ্ছি। কিন্তু সরকারি কোন সুবিধা পাচ্ছি না। বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ করার ক্ষেত্রে চেষ্টা করেছি। আমার কোন অবহেলা নাই। মন্ত্রনালয়ে কাগজপত্র জমা দেওয়া হয়েছে। করোনার কারণে গত এক বছর থেকে অফিসিয়াল কার্যক্রমগুলো বন্ধ আছে। বিদ্যালয়টি জাতীয়করণের ক্ষেত্রে যদি আমার কাগজপত্র বাদ দিয়ে অন্য শিক্ষকদের কাগজপত্র নিয়ে জাতীয়করণ করে দেয় এতে আমার কোন আপত্তি নাই।

বদলগাছী মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এটিএম জিল্লুর রহমান বলেন, বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে আমাদের দপ্তরে কোন কাগজপত্র দেওয়া হয়নি। যাবতীয় কাগজপত্র নিয়ে তারা সরাসরি মন্ত্রনালয়ে যোগাযোগ করে থাকেন। আমাদের এখানে কোন করনীয় নাই।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button