আন্তর্জাতিক

যুক্তরাষ্ট্র থেকে নায়াগ্রা জলপ্রপাতের গর্জন কানে বাজতো

ছোটবেলা থেকে সমুদ্রের গর্জন, নদীর কলকল ধ্বনি, টিনের চালায় বৃষ্টির শব্দ বেশ আকর্ষণ করে; মনে অন্য রকম আনন্দ ও প্রশান্তি অনুভূত হয়। সেই তাড়নায় মনে হতো যেন সুদূর আমেরিকা থেকে নায়াগ্রা জলপ্রপাতের গর্জন আমার কানে বাজতো যেন দুহাত বাড়িয়ে ডাকতো। নায়াগ্রা ফলস প্রকৃতির মহাবিস্ময় বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ জলপ্রপাত যা ছোটবেলা থেকে টিভিতে পত্রিকায় বইয়ের পাতায় আমরা দেখে আসছি। বিশ্ব বুকে এই জলপ্রপাতের নাম শুনেনি এমন লোক কমই পাবেন।
আমার ছোটবেলা থেকেই ইচ্ছা ছিল বিশ্বের আকর্ষণীয়, ভয়ঙ্কর সুন্দর নায়াগ্রা ফলস দর্শনে যাব।

নায়াগ্রা জলপ্রপাত যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার সীমান্তবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত। নায়াগ্রা জলপ্রপাতটি, এক সময় তাদের বিশেষ পরিচিতি বহন করতো। এই জলপ্রপাত প্রকৃতির সৃষ্ট বিস্ময়কর এর জলপ্রপাত,পানি পতনের দিক থেকে নায়াগ্রা জলপ্রপাত সবচেয়ে বৃহৎ, মিনিটে প্রায় ছয় মিলিয়ন ঘনফুট পানি জলপ্রপাত দিয়ে গড়িয়ে পড়ে। নায়াগ্রা জলপ্রপাত তার সৌন্দর্য এবং জলবিদ্যুৎ শক্তি একটি মূল্যবান উৎস হিসাবে উভয় বিখ্যাত। এছাড়াও চলচ্চিত্র, শিল্প সাহিত্যে নায়াগ্রা জলপ্রপাতের সৌন্দর্য চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। অনেকের কাছে নায়াগ্রা ফলস মধুচন্দ্রিমার জন্য আদর্শ জায়গা হিসেবে মনে করেন। বসন্তের শেষের দিকে বা গ্রীষ্মকালের শুরুতে জলপ্রপাত গুলো থেকে সেকেন্ডে ২০২,০০০০ ঘন মিটার পানি পতিত হয়।

প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ ভ্রমণ বিলাসি তাদের সৌন্দর্য পিপাসা মেটাবার জন্য দেশদেশান্তর থেকে ছুটে আসেন এখানে ।

আবুধাবি থেকে এই মায়াবী জলপ্রপাত দেখার জন্য রওনা দিলাম নিউইয়র্কের উদ্দেশে। সেখানে পৌঁছে উঠলাম আত্মীয়ের বাসায়। ওনি আমার নানা নাম আইয়ুব। ওনাদের মাধ্যমে পরিচয় হল তার গ্রামের প্রতিবেশী, খোকন বাবু ভাইয়ের সঙ্গে।

তিনি খুব মিশুক আর ভ্রমণ পিপাসু, সহজ সরল একজন মানুষ। আমি যেহেতু একা তাই আমাকে সঙ্গ দিতে আমার সাথে যেতে রাজি হলেন যা আমেরিকার মতো যান্ত্রিক শহরে বিরল। বাফেলোতে বাস, ট্রেন, আর বিমান যোগে যাওয়া যায়।

আমরা নিউইয়র্ক গ্রে হাউন বাস স্টেশন থেকে সন্ধ্যা ৬.৩০ মিনিটে বাফালো বাস স্টেশনের উদ্দেশে রওনা হলাম। আমরা পরদিন ভোর ৪.৩০ মিনিটে পৌঁছলাম। তখন আবহাওয়া অনেক খারাপ। ঠাণ্ডা কনকনে বাতাস বইতে ছিল। আমি প্রথমে মনে করছিলাম বৃষ্টি হচ্ছিল। পরে বুঝলাম বরফ পড়ছে। সেখান থেকে আমাদের যেতে হবে নায়াগ্রা ফলস। আমরা দুজনের জন্য টিকিট কাটলাম মেশিন থেকে। কিন্তু পরে দেখলাম টিকিট কাটা হল নায়াগ্রা ফলস কানাডা সাইডের দিকে। টাকাটা পানিতে গেল। পরে জানলাম নায়াগ্রা ফলসের বাস আছে, যা ছাড়বে ভোর ৬টায়। হালকা নাস্তা সেরে বাসে উঠলাম। বাস খুব আস্তে আস্তে চলতে লাগল। কারণ বাইরে তুষারপাত হচ্ছিল। বাস আস্তে আস্তে আমাদের গন্তব্যের দিকে ছুটল। প্রায় ২ ঘণ্টা পরে আমরা পৌঁছলাম নায়াগ্রা ফলস বাস স্টেশন। গন্তব্যের দিকে অগ্রসর হতেই কানে আসল একটা তীব্র বেগে পানি পতনের আওয়াজ। জলপ্রপাতের গর্জন শুনতেই পলকেই আমার দীর্ঘ ভ্রমণক্লান্তি দুর হয়ে গেল। শব্দ কানে আসতেই নিমিষেই সমস্তশরীর পুলকিত ও রোমাঞ্চিত হলাম।

ওইখানে তাদের নিজস্ব বাস পরিবহন আছে। যা পুরো নায়াগ্রা ফলস এলাকা ও আরও কিছু স্থানীয় দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখান। আমরা বাস না নিয়ে পায়ে হেটে র্ঝনার দিকে এগুলাম। এদিকে তুষারপাতের পরিমাণ আরো বেড়ে গিয়ে রাস্তাঘাট সাদা ছাদরে ঢেকে দিচ্ছিল। এখানে একটা কথা উল্লেখ করা দরকার, আমাদের ভাগ্য সুপ্রসন্ন ছিল এক দিন পরে গেলে আমরা আটকা পড়তাম, পরের দিন টানা তুষারপাত রাস্তা বন্ধ হয়ে পাঁচ ফুট বরফের স্তর জমেছিল। যাই হোক বেলা বাড়ার সাথে সাথে ঠাণ্ডার প্রকোপ বেড়ে চললো, চার পাঁচটা গরম কাপড় থাকার পরও বেশ ঠাণ্ডা অনুভব করছিলাম। কিন্তু দমবার পাত্র আমরা কেউ নই । আমরা অনেকটা ঘোরের মধ্যে সামনেই এগিয়ে ঝর্নার কাছে পৌঁছালাম। ঝর্নার সেই কি গর্জনসেকি তাণ্ডব। পানি প্রচণ্ড বেগে ছুটে ঝর্নার ধারে আঁচড়ে পড়ছিল।

চারিদিকে কুলুকুলু রব আর গাঙচিলের ডাক আর পানির গর্জন, এখানে জলপ্রপাতের পানি পতনের কলকল গর্জন কানে মধুর সংগীতের মতো বাজতে লাগলো।

অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম আমি যেন এক মরুভূমির বুকে তৃষ্ণার্ত পথিক সুন্দরের পিপাসায় পিপাসার্ত আমার দুচোখ ভরে যেন আরো দেখি দেখছি তবু দেখার স্বাদ যেন মিটছে না‌।

শন শন শব্দ ঝিরঝির শব্দ সাদা ফেনা দুধ সাদা জলপ্রপাতের স্বচ্ছ পানি গড়িয়ে পড়ছে নিচে আর আঁচড়ে পড়ছে পাথরের উপর।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button