বিনোদন

যে চরিত্রগুলো করি, তার একটাও আমি নই : সব্যসাচী

সব্যসাচী চক্রবর্তী, কলকাতার প্রখ্যাত অভিনেতা। ফেলুদাখ্যাত এই অভিনেতার জন্মদিন আজ। নির্মাতা ফাখরুল আরেফীন খানের ‘গণ্ডি’ ছবির শুটিংয়ে অংশ নিতে গত ১ সেপ্টেম্বর ঢাকায় এসেছেন বরেণ্য এই অভিনেতা। বর্তমানে ব্যস্ত আছেন ছবির শুটিংয়ে। জন্মদিন, ছবি ও অন্যান্য বিষয়ে দৈনিক আমাদের সময় অনলাইন’র মুখোমুখি হয়েছেন তিনি।

দৈনিক আমাদের সময় অনলাইন’র পক্ষ থেকে আপনাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা। কেমন আছেন?

ধন্যবাদ, সবার ভালোবাসায় বেশ ভালো আছি।

জন্মদিনটি আপনার কাছে আলাদা কোনো গুরুত্ব বহন করে কি?

জন্মদিন আসবে-যাবে, তা মনে রাখার কিছু নেই। জন্মদিনকে গুরুত্ব দেওয়ার কোনো দরকার হয় না। লোকে খুব একটা গুরুত্ব দেয়, বোধহয় পণ্য বেচার কারণে। একটা জন্মদিন এলেই হয় কেক বিক্র হবে, নয় কার্ড বা গিফট বিক্রি হবে কিংবা পার্টি হবে। তার মধ্যে সবই একটা না একটা ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য আছে। কাজেই ওসব নিয়ে ভাবার কোনো কারণ নেই। জন্মদিন হচ্ছে আমরা একটা গণ্ডি তৈরি করেছি, এক বছর ৩৬৫ দিনের। সেই গণ্ডিটা পেরুচ্ছি। আমার মতে ওটা নিয়ে খুব একটা চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই।

এবারের সফর কেমন উপভোগ করছেন?

বরাবরই এ দেশের মানুষের ভালোবাসা আমাকে মুগ্ধ করেছে। আজ আমার জন্মদিন। এই জন্মদিনের কেক কেটেছি, যেদিন দেশে পা রেখেছি সেদিন। ‘গণ্ডি সন্ধ্যা’য় সবার ভালোবাসা আমাকে অবাক করেছে। এবারের সফরটা আমার সারা জীবন মনে থাকবে।

‘গণ্ডি’ ছবি নিয়ে যদি বলতেন: এই ছবির ট্যাগ লাইন হচ্ছে ‘ফ্রেন্ডশীপ উইদাউট বাউন্ডারি’। বন্ধুত্ব হচ্ছে শব্দহীন, এর কোন বাঁধা নেই। সে যে কোন বাউন্ডারিই হউক, তা মানে না। বন্ধুত্ব সব রকম হতে পারে বয়স, লিঙ্গ, সীমানা কোনো বাধাতেই তাকে আটকানো যায় না। এ ছবির গল্পটি তেমনই এক গল্প। ‘গণ্ডি’ ছবির মূল বিষয়বস্তু আমার খুব ভালো লেগেছে। ছবিতে আমার চরিত্র কী, কতক্ষণ থাকব, আমি নিজের কাজ কতটুকু দেখাতে পারব, কত টাকা পাবো, কখনো আমি এসব বিচার করি না। আমার হচ্ছে সোজা কথা, গল্প-নির্মাতা কতটুকু সৎভাবে, নিষ্ঠাভরে ছবিটি করবেন এবং আমাকে কতটুকু চাইছেন। তার সঙ্গে কথা বলে ভালো লাগলে, আমি ‘হ্যা’ বলে দেই। এই ছবির ইউনিটের সঙ্গে কাজ করে দারুণ মজা পাচ্ছি। এরা সবাই অনেক ভালো। তাদের কথাবার্তা, ব্যবহার, এত সুন্দর আতিথেয়তা সত্যি আমাকে মুগ্ধ করেছে।

পর্দার সব্যসাচীর সঙ্গে বাস্তব সব্যসাচীর কতটুকু পার্থক্য?

প্রচুর পার্থক্য। আমি যে চরিত্রগুলো করি, তার একটাও আমি নই। এই যে এখন আপনার সঙ্গে কথা বলছি, এটা আমি। আমি যে চরিত্রগুলো করি, তার একটাও আমার মতো করে কথা বলে না, খাবার খায় না, হাঁটে না। একটাও আমার মতো করে ভাবে না। সেই সব চরিত্রগুলো, যে চরিত্রগুলোর চিত্রায়ণ করা হয়েছে চিত্রনাট্য অনুযায়ী। কাজেই সব একদমই আলাদা আমার থেকে।

বিশ্বজুড়ে আপনার অসংখ্য ভক্ত আছে। আপনি কার ভক্ত?

সব্যসাচী অনেকের ভক্ত। সব্যসাচী চক্রবর্তী প্রথমত তার বাবা-মায়ের জন্য। তারপর তার শিক্ষাগুরুর ভক্ত। তারপর আরও মহাপুরুষরা আছেন, তাদের ভক্ত। অভিনয়ের জগতে যারা আছেন তাদের আমি ভক্ত বলব না, পছন্দ করি সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, অমিতাভ বচ্চন, তুলসী চক্রবর্তী, উৎপল দত্ত এ রকম অনেকেই আছে।

আপনার অভিনয় জীবনে সবচেয়ে সেরা চরিত্রের কথা জানতে চাইলে আপনি কি ‘ফেলুদা’র কথা বলবেন?

না, ঠিক সেরা চরিত্র বলব না। এটি একমাত্র চরিত্র যে, এটি আমি নিজে থেকে করতে চেয়েছিলাম। আর কোনো চরিত্র আমি নিজে থেকে চাইনি। অন্যগুলো আমার কাছে এসেছে। আর এসেছে বলেই আমি সেগুলো করার সুযোগ পেয়েছি। ‘ফেলুদা’ হচ্ছে একমাত্র চরিত্র, যা আমি চেয়েছিলাম। আর সবচেয়ে যেটা জনপ্রিয় হয়েছে সেটা ‘ফেলুদা’ চরিত্র। এ ছাড়া অনেক চরিত্র আছে, যা আমার খুব প্রিয়।

আপনার তো অভিনেতা হওয়ার ইচ্ছা ছিল না?

একদম তাই। নাটকের পরিবারে আমার জন্ম। সবাইকে দেখতাম, নাটক করছে আমার বাবা-মা, পিসেমশাই, পিসি, মামা, মেঝো কাকা সবাই নাটকের মধ্যে যুক্ত হয়ে গিয়েছিলেন। রোজ সন্ধ্যা বেলায় রিহার্সেল হচ্ছে। আমি দেখলাম, যারা আসছেন, তারা সবাই আমার বাবা-মায়ের বন্ধু। এভাবে তাদের সঙ্গেও আমার সুসম্পর্ক হয়ে ওঠে। তারা যখন নাটক করতে যেতেন, তাদের সঙ্গেও যেতাম। আমার একটা ইচ্ছে জন্মেছিল, নাটকে কাজ করব। কিন্তু যেটা মূল আকর্ষণ ছিল আমার, সেটা হচ্ছে মঞ্চের পেছনে। ভেবেছিলাম, ওটাই করব। কিন্তু আমার পিসেমশাই আমাকে জোড় করে ঢুকিয়ে দিলেন অভিনয়ে। অভিনয়ে আসার পরে আমি মনেপ্রাণে চেয়েছিলাম, লোকে যাতে আমাকে বর্জন করে দেয়, ভালো নয় বলে। হলো উল্টো। লোকের পছন্দ হয়ে গেল। কাজেই আমি আটকে গেলাম। অভিনেতা হওয়ার কোনো ইচ্ছা ছিল না, অথচ অভিনেতা হতেই হলো।

আমি বাবার সঙ্গে ফ্যাক্টরিতে কাজ করতাম। আমি একজন টেকনিশিয়ান ছিলাম। আমার বাবা একজন ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। তাই বাবার পেশাটাই আমাকে বেশি টানতো। আমি হতে চেয়েছিলাম অনেক কিছু। কিছুই হতে পারিনি। এখন অভিনেতা হয়ে সব কিছুই হতে হচ্ছে।

সবশেষে আপনার শখের কথা জানতে চাই: বন্যপ্রাণীর ছবি। লাখ লাখ ছবি আছে আমার সংগ্রহে। এগুলো সংগ্রহ করতে আমার ভীষণ ভালো লাগে।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button