ডেঙ্গু প্রতিরোধ, বন্যার্তদের সহায়তা এবং শোকের মাস আগস্টের কারণে বেশ কিছুদিন থমকে ছিল আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কর্মসূচি। চলতি সেপ্টেম্বর থেকে এসব কর্মসূচি বাস্তবায়নে ফের পূর্ণোদ্যমে মাঠে নামছে ক্ষমতাসীনরা।
এর সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হচ্ছে ঢাকা উত্তর-দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের প্রস্তুতি। এ ছাড়া রোহিঙ্গা ইস্যুসহ সার্বিক বিষয়ে সরকারের পাশাপাশি দলীয়ভাবেও কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদারের মিশনে নামছে আওয়ামী লীগ।
নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা বলছেন, দলীয় কর্মসূচিগুলোর সফল বাস্তবায়নে কেন্দ্রীয় নেতাদের নানা পরিকল্পনা ও সিদ্ধান্ত শিগগির দলের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীকে জানিয়ে দেয়া হবে।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ শনিবার সন্ধ্যায় বলেন, আগস্ট মাস শেষ হচ্ছে। গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছাত্রলীগের একটা প্রোগ্রাম আছে।
এরপর রাতে যদি নেত্রীর সঙ্গে কথা বলতে পারি, আমার মনে হয় আগামী সপ্তাহে কার্যনির্বাহী কমিটির মিটিংয়ের বিষয়ে একটা সিদ্ধান্ত হতে পারে। সেটা হলে বিগত দুই মাস যে কাজগুলো পেন্ডিং আছে, সেগুলোতে গতি সঞ্চার হবে।
আগামী অক্টোবরে ২১তম জাতীয় সম্মেলন করার ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এ সম্মেলন সামনে রেখে বছরের শুরু থেকেই প্রস্তুতিতে মাঠে নামে দলটি। সম্মেলনের প্রাথমিক প্রস্তুতি হিসেবে সাংগঠনিক সফরের জন্য আটটি টিম গঠন করা হয়।
বেশ কয়েকটি জেলায় সফরেও যান নেতারা। কিন্তু বন্যা শুরু হওয়ায় ক্ষমতাসীনরা বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানোর কাজে নামেন। এ ছাড়া গুজব মোকাবেলা, ডেঙ্গু প্রতিরোধসহ নানা সামাজিক কর্মকাণ্ড নিয়ে তারা ব্যস্ত হয়ে পড়েন।
এরপর আসে শোকের মাস আগস্ট। এসব কারণে কাজগুলো থেমে যায়। কিন্তু এখন আর থেমে থাকার সুযোগ নেই। ফলে চলতি মাসেই পেন্ডিং ইস্যুগুলো নিয়ে ফের মাঠে নামছেন নেতাকর্মীরা।
ইস্যুগুলোর অন্যতম হচ্ছে- জাতীয় সম্মেলনের প্রস্তুতি, তৃণমূল সম্মেলন, পুরাতন সদস্য নবায়ন ও নতুন সদস্য সংগ্রহ অভিযান, উপজেলা নির্বাচনে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ সংক্রান্ত কার্যক্রম ইত্যাদি।
তবে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন এগিয়ে আসায় বেশকিছু কাজ আবারও গতি হারাতে পারে। বিশেষ করে যথাসময়ে জাতীয় সম্মেলন না হওয়ার আশঙ্কা আছে।
রীতি অনুসারে জাতীয় সম্মেলনের আগে তৃণমূল তথা ইউনিয়ন, থানা, জেলা পর্যায়ের সম্মেলন শেষ করে কেন্দ্রীয় সম্মেলন হয়। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় সম্মেলনের আগেই মেয়াদোত্তীর্ণ সহযোগী সংগঠনগুলোরও সম্মেলন হয়।
আওয়ামী লীগের মেয়াদোত্তীর্ণ তিন সহযোগী সংগঠন যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ এবং ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন শ্রমিক লীগের মধ্যেও কোনো সম্মেলন প্রস্তুতি নেই।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আমরা সব সময়ই যে কোনো দলীয় কর্মকাণ্ড শুরুর জন্য প্রস্তুত। জাতীয় কাউন্সিল করার জন্যও প্রস্তুত। স্থানীয় পর্যায়ে কাউন্সিল যেখানে প্রয়োজন, আমরা সেখানেই পদক্ষেপ নেব।
এদিকে ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল প্রথমবারের মতো ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর দুই মেয়র ওই বছর ৬ মে শপথ গ্রহণ করেন। সে অনুযায়ী আগামী বছরের মে মাসে মেয়াদ শেষ হবে মেয়রদের।
আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের মতে, বিধান অনুযায়ী ঢাকার দুই সিটিসহ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ভোট জানুয়ারির আগেই শেষ করতে হবে। আর দলীয় সম্মেলন কিছুদিন পেছানো যেতে পারে।
সে ক্ষেত্রে কোনোভাবে ডিসেম্বরের পরে নয়। ফলে ইতিমধ্যে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে সবাইকে পরামর্শ দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
এদিকে চলতি সেপ্টেম্বরেই জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রে যাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর পর অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে ভারত যাচ্ছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগ দিতে যাওয়ার আগেই দলের কার্যনির্বাহী কমিটির মিটিং ডাকবেন।
সেখানেই আগামী জাতীয় কাউন্সিলসহ দলের অন্যান্য কর্মসূচির বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হবে।
এছাড়া, দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুল মতিন খসরুর নেতৃত্বে ২০ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল আগামীকাল চীন সফরে যাচ্ছে। ফিরবেন ১২ সেপ্টেম্বর।
উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগেরই প্রায় দু’শ নেতা নৌকার বিপক্ষে নির্বাচন করেন। এর সঙ্গে নৌকার প্রার্থীর বিপক্ষে কাজ করার অভিযোগ ওঠে প্রায় অর্ধশত দলীয় সংসদ সদস্য, মন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় নেতার বিরুদ্ধে।
তাদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ মদদে অনেকটা একতরফা এই নির্বাচনেও নৌকার প্রার্থীরা হেরেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। গত ১২ জুলাই অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে ‘বিদ্রোহী’ ও তাদের মদদদাতাদের বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদ্রোহীদের প্রথমে সরাসরি সাময়িক বহিষ্কার করে এরপর কেন তাদের স্থায়ী বহিষ্কার করা হবে না মর্মে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানোর নির্দেশ দেন।
পরে আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর এক সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে ২৮ জুলাই থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করার কথা জানিয়েছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
কিন্তু বন্যাসহ আরও বেশকিছু সামাজিক কর্মকাণ্ড ও শোকের মাসের কারণে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয়নি। সে সময় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, স্থানীয় নেতাকর্মীরা এখন বন্যার্তদের সাহায্য-সহযোগিতা নিয়ে ব্যস্ত।
মানবিক বিবেচনায় এখন বহিষ্কার কিংবা শোকজ নোটিশ পাঠানো ঠিক হবে না। আজ বিকালে আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সভা অনুষ্ঠিত হবে। আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমণ্ডির কার্যালয়ে এ বৈঠক হবে।
সেখানেই ফের বিদ্রোহীদের শাস্তির বিষয়ে আলোচনা হবে। এরপর পরবর্তী কার্যক্রম শুরু হবে।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু করেছিল আওয়ামী লীগ। তখন শুরুতে কিছুটা উৎসাহ-উদ্দীপনা থাকলেও কিছুদিন পরই নির্বাচনী কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় সদস্য সংগ্রহ অভিযান চলে ঢিলেঢালাভাবে। ফলে ওই সময় কাজটি শেষ হয়নি।
এরপর গত জুনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ১ জুলাই থেকে সারা দেশে এ কার্যক্রম শুরু করার ঘোষণা দেন। পরে সে তারিখও পেছানো হয়।
৩০ জুন সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছিল, ২১ জুলাই থেকে সারা দেশে নতুন ভোটারদের আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্তির কার্যক্রম শুরু হবে। কিন্তু সে তারিখও পেছানো হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য শনিবার বিকালে বলেন, সদস্য সংগ্রহ অভিযান একটি চলমান প্রক্রিয়া। এটা শুরু হলেও থমকে আছে। আগস্ট মাস তো শেষ। আগামী মাস থেকে আবার এ কাজ নতুন করে শুরু হবে।