জাবিতে এবারও ‘শর্ট সাজেশন’ বিক্রির তোড়জোড় শুরু
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের প্রথম বর্ষ স্নাতক (সম্মান) শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে অন্যান্য বছরের ন্যায় এবারও শর্ট সাজেশনের বই বিক্রির তোড়জোড় শুরু করেছে কয়েকটি চক্র।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের (ডেইরি গেট) আশেপাশে অস্থায়ী বইয়ের দোকান বসেছে। এসব দোকানে বিভিন্ন ভর্তি গাইডের পাশাপাশি ৫/১০ পৃষ্ঠার শর্ট সাজেশন বই নিয়ে বসেছেন অনেকেই। এদের অধিকাংশই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। এসব বইয়ের ওপরে লেখা আছে ১০০ শতাংশ কমনের নিশ্চয়তাসহ নানান প্রলোভন। দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য এসব লেখা থাকলেও এসব বই প্রস্তুত করা হয় মূলত বিভিন্ন ভর্তি গাইড থেকে হুবহু কপি করা গুটিকয়েক প্রশ্ন দিয়ে।
জানা যায়, মাত্র কয়েক টাকা খরচ করে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে শর্ট সাজেশনের বই বিক্রি করেন এই চক্রের সদস্যরা। এসব বই প্রস্তুতে ১০-২০ টাকা ব্যয় হলেও ভর্তিচ্ছুদের কাছে নানা প্রলোভন দেখিয়ে ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি করা হয়। চাহিদা বেড়ে গেলে টাকার অঙ্ক আরও বেড়ে যায়। আকর্ষণীয় উপস্থাপনা ও প্রলোভনে পড়ে ভর্তিচ্ছুরাও শেষ সময়ের প্রস্তুতি হিসেবে এসব বইকে নির্ভরযোগ্য ভেবে এসব কিনতে আগ্রহী হন। তবে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে শর্ট সাজেশন বই কিনে কোনো লাভ হয়নি বলে জানান ভুক্তভোগীরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ৪৮তম আবর্তনের এক শিক্ষার্থী এই প্রতিবেদককে ১৪ পৃষ্ঠার একটি শর্ট সাজেশনের বই দেখিয়ে বলেন, ‘গতবার ভর্তি পরীক্ষার আগের দিন ৭০ টাকা দিয়ে এই বইটি কিনেছিলাম। অনেকেই কিনছিলো দেখে আমি ভেবেছিলাম হয়তো এ বই থেকে পরীক্ষায় প্রশ্ন আসতে পারে। এ বই থেকে পরীক্ষায় ১/২ টি প্রশ্ন এসেছে তবে সেগুলো পূর্বে পড়া ছিল। ভর্তিচ্ছুদের এসব বই না কেনা উচিত।’
রাজশাহীর গোদাগাড়ি উপজেলা থেকে ‘এ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসা মো. ইসরাফিল ইসলাম একটি দোকানে শর্ট সাজেশনের বই কিনতেছিলেন। এ সময় কেন তিনি শর্ট সাজেশনের বই কিনছেন জিজ্ঞেস করা হলে উত্তরে তিনি জানান, ভাইয়েরা বলতেছেন যে এগুলো থেকে অনেক প্রশ্ন কমন পড়বে। তাই ৫০ টাকা দিয়ে এই বইটি কিনলাম। এখন কমন পড়বে কিনা সেটা বলতে পারব না।
এ দিকে এসব শর্ট সাজেশনের বই বিক্রি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও শুরু হয়েছে জোর আলোচনা-সমালোচনা। অনেকেই এ বছর এসব বই বিক্রি না করার অনুরোধ জানিয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, ভর্তিচ্ছুরা যাতে ভর্তি পরীক্ষার সময় স্বল্প সময়ে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি সেরে নিতে পারেন সেজন্যে ভর্তি পরীক্ষার আগে থেকে অনেকে বই তৈরি করেন। ভর্তিচ্ছুদের কল্যাণের কথা চিন্তা করে এটা করেন তারা। তবে এক শ্রেণীর শিক্ষার্থী ভর্তিচ্ছুদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে ব্যবসা করে। এতে ক্যাম্পাসের সুনাম নষ্ট হয়।
এদিকে ভর্তি পরীক্ষার সময় যেসব দোকানে এসব শর্ট সাজেশনের বই বিক্রি করা হয় সেসব দোকান বসানোর অনুমোদনই নেওয়া হয় না বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয় এস্টেটের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. নুরুল আমিন।
তিনি জানান, ‘এসব শর্ট সাজেশনের বই ক্যাম্পাস নোংরা করে। এসব বই বিক্রির জন্য কেউ দোকান বসানোর অনুমতিও নেয় না। তবে কেউ যদি দোকান বসানোর অনুমতি নেয় তবু আমরা ক্যাম্পাস নোংরা করে এমন কিছু বিক্রির অনুমতি দেই না।’
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘ভর্তি পরীক্ষার সময় ডেইরি গেটের পার্শ্ববর্তী এলাকায় অবৈধ দোকান বসে। প্রশাসনের নিষেধ উপেক্ষা করে অবৈধভাবে দোকান বসান তারা। তবে এসব দোকানের সঙ্গে ছাত্ররা সংশ্লিষ্ট থাকায় দোকান উঠিয়ে দেওয়া সম্ভব হয় না।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান বলেন, ভর্তি পরীক্ষার সময় আমাদের অনেক ব্যস্ত থাকতে হয়। এ জন্য আমাদের প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা সবসময় এই বিষয়টি দেখভাল করতে পারেন না। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই এগুলোর সঙ্গে জড়িত থাকায় সহজে এসকল বই বিক্রি বন্ধ করাও সম্ভব হয় না। তারপরও এসব বই বিক্রি বন্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।