রাজশাহী বিভাগসারাদেশ

সিরাজগঞ্জে হাসপাতাল থেকে চুরি হওয়া ২ শিশুর ১টি জীবিত ১টি মৃত উদ্ধার

সিরাজগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি : সন্তান না হওয়ায় স্বামী এবং শ্বশুর বাড়ির লোকজনের চাপে নবজাতক চুরির জন্য সুপরিকল্পিতভাবে ‘নাটক’ সাজিয়ে  দুই শিশু চুরি করেন সিরাজগঞ্জের সলঙ্গা থানার আলোকদিয়ার গ্রামের আলপনা খাতুন।
আজ রোববার (২৮ ফেব্রুয়ারি) সকালে সিরাজগঞ্জ সদর থানা চত্বরে পুলিশ সুপার জনাব হাসিবুল আলম, বিপিএম এ সংক্রান্তে সংবাদ সম্মেলন এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান,আসামী মােছাঃ আলপনা খাতুন এর (০৭) সাত বছরের দাম্পত্য জীবনে কোন সন্তান না হওয়ায়, সে প্রথমে সিরাজগঞ্জ সদর হাসপাতাল হতে শিশু মাহিমকে চুরি করে।
পরবর্তিতে শিশু মাহিম  ২৭ ফেব্রুয়ারী (শনিবার)  মারা গেলে তার মৃতদেহ ঘরে রক্ষিত ধানের গােলায় লুকিয়ে রাখে ও সাখাওয়াত মেমােরিয়াল হাসপাতাল হতে শিশু সামিউলকে চুরি করে।
উল্লেখ্য,
গত গত ১৮ ফেব্রুয়ারী(বৃহস্পতিবার)উল্লাপাড়া, থানার, ভাদালিয়া গ্রামের সারমিন আক্তার, স্বামী-চয়ন ইসলাম,২৩(তেইশ) দিনের শিশু সন্তান মাহিম এর ঠান্ডাজনিত রােগের কারণে চিকিৎসার জন্য সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতাল শিশু ওয়ার্ডের স্ক্যানুতে ভর্তি করেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৩ ফেব্রুয়ারী (মঙ্গলবার)  অনুমান ১২.৫০ ঘটিকার সময় উক্ত শিশুটির মা সারমিন আক্তার রােদে শুকাতে দেওয়া কাপড় ও খাবার আনার জন্য বাইরে যায়।এরমাঝেই বেলা ১৩.৩০ ঘটিকার সময় এসে দেখেন তার শিশু সন্তান মাহিম নেই।অনেক খোঁজাখুঁজি করার পরেও মাহিমকে পাওয়া যায়নি।
এ সংক্রান্তে সিরাজগঞ্জ থানার মামলা নং-৪৯, তারিখ-২৪/০২/২০২১ খ্রিঃ,ধারা-২০১২ সালের মানব পাচার প্রতিরােধ ও দমন আইনের ১০(২) রুজু করা হয়।
অপরদিকে, গত ২৭ ফেব্রুয়ারী (শনিবার)  রাত্রি ০৩.০০ ঘটিকার সময় মােছাঃ সবিতা খাতুন, স্বামী-মােঃ মাজেদ আলী, সাং-নওগাঁ, থানা-তাড়াশ, জেলা-সিরাজগঞ্জ সলঙ্গা থানাধীন হাটিকুমরুল গােল চত্বর সাখাওয়াত মেমােরিয়াল হাসপাতাল, জেনারেল ওয়ার্ড, বেড নং ১২ এ ভর্তি হয়।
সকাল ০৮.৩০ ঘটিকার সময় উক্ত মােছাঃ সবিতা খাতুন এর সিজারের মাধ্যমে নবজাতক শিশু জন্মগ্রহণ করে।
বেলা ৩.৩০ ঘটিকার সময় অজ্ঞাতনামা মহিলা জেনারেল ওয়ার্ডে ঢুকে শিশু বাচ্চাটিকে কোলে তুলে নিয়ে বাচ্চার পরিবারের সদস্যদের সাথে কিছু সময় কাটান এবং সুযােগ বুঝে বাচ্চাটিকে নিয়ে হাসপাতাল থেকে চলে যায়।
পরে পরিবারের লােকজন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেন ও বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেন। খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে পরিবারের লােকজন ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সলঙ্গা থানা পুলিশকে অবগত করেন। এ সংক্রান্তে সলঙ্গা থানার মামলা নং-২৮, তারিখ-২৮/০২/২০২১ খ্রিঃ ধারা-২০১২ সালের মানব পাচার প্রতিরােধ ও দমন আইনের ৭/৮/১০(২) রুজু করেন।
পরবর্তীতে, চুরি যাওয়া শিশুটিকে উদ্ধারের লক্ষ্যে সলঙ্গা থানা, জেলা গােয়েন্দা শাখা ও সিরাজগঞ্জ থানা পুলিশ যৌথ অভিযানে, সিরাজগঞ্জ সলঙ্গা থানা,হাটিকুমরুল ইউনিয়নের আলােকদিয়া গ্রামের আসামী ১। মােছাঃ আল্পনা খাতুন (২৪), স্বামী- মােঃ সাদ্দাম হােসেন, সাং-চরদোগাছি, থানা-উল্লাপাড়া ২। ছায়রন (৫৫), স্বামী-মৃত সােলায়মান, ৩। মােছাঃ মিনা খাতুন (৫০), স্বামী-মৃত সাইফুল ইসলাম, ৪। মােছাঃ মায়া খাতুন (২০), স্বামী-মমাঃ রবিউল ইসলাম, ৫। মােঃ রবিউল ইসলাম (৩০), পিতা-মৃত সােলায়মান,কে আটক করেন, আসামীদের বাসায় ০১ টি জীবিত ও ০১ টি মৃত নবজাতক শিশু পুত্র পাওয়া যায়।
পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে আসামীরা জানায় মৃত শিশুটি গত ২৩ ফেব্রুয়ারী সোমবার  সিরাজগঞ্জ সদর হাসপাতাল হতে চুরি যাওয়া শিশু মাহিম এবং জীবিত শিশুটি ২৭ ফেব্রুয়ারী শনিবার,সাখাওয়াত মেমােরিয়াল হাসপাতাল হতে চুরি যাওয়া শিশু সামিউল।
জীবিত শিশু সামিউলের বাবা মাজেদ ও মাতা সবিতা তাদের চুরি যাওয়া শিশু হিসেবে সনাক্ত করে। উপস্থিত সাক্ষীদের সামনে শিশু বাচ্চা সামিউলকে তার বাবা মার জিম্মায় প্রদান করা হয়েছে। এবং মৃত শিশু মাহিমকে তার পিতামাতা চুরি হওয়া শিশু হিসেবে সনাক্ত করে।
এ সময় জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ সহ বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Back to top button