সারাদেশ

কুকুরের কামড়ে হাসপাতালে শতাধিক, আতঙ্কে ঝালকাঠি

ঝালকাঠি পৌরসভার পাড়া-মহল্লাগুলোতে অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে বেওয়ারিশ কুকুরের সংখ্যা। এসব কুকুরের কামড়ে যেন জলাতঙ্ক রোগ না ছড়ায় সেজন্য ইতঃপূর্বে হাতে নেওয়া হয়েছিল কুকুরকে ভ্যাকসিন (টিকা) দেওয়ার কর্মসূচি। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে সেই কর্মসূচিও বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে বেওয়ারিশ এসব কুকুরের কবলে পড়ে জলাতঙ্কের ঝুঁকির পাশাপাশি কুকুরাতঙ্কে রয়েছেন এলাকাবাসী।

এ দিকে, কুকুরের উপদ্রবে অতিষ্ঠ হয়ে কেউ কেউ আবার আঘাত করে বসছেন কুকুরকে। এতে কুকুরের ক্ষত থেকে সৃষ্টি হচ্ছে নানা রোগ। যার ফলে আঘাতপ্রাপ্ত কুকুরের শরীরে ধরছে পচন। এছাড়া প্রজনন মৌসুমে মহিলা কুকুরের জরায়ুতেও ক্ষতর সৃষ্টি হয়ে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। এ পচন ধরা অবস্থায় শহরের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়ানোর ফলে বিদঘুটে দুর্গন্ধে নাকাল পৌরবাসী।

অপরদিকে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের একটি সূত্র জানিয়েছে, ওষুধের সরবরাহ না থাকায় কুকুরকে ভ্যাকসিন দেওয়ার কর্মসূচি বন্ধ রাখা হয়েছে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে প্রতিদিন গড়ে কুকুরের কামড়ে আহত শতাধিক রোগীকে বিনা মূল্যে ভ্যাকসিন (টিকা) দিচ্ছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।

কুকুরের কামড় খেয়ে হাসপাতালে টিকা নিতে আসা জেলা সদরের বিকনা এলাকার গোলাম রব্বানী (৩০) জানান, শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) বিকালে বাড়ি থেকে বেরিয়ে বাজারে যাওয়ার পথে হঠাৎ একটি কুকুর তেড়ে এসে আমার পায়ে কামড় বসায়। এলাকায় এমন ঘটনা প্রতিদিনই ঘটছে। কুকুরের অত্যাচার থেকে বাঁচার উপায় কী, এই প্রশ্ন এখন সবার।

এ দিকে, আক্রান্ত ও তাদের স্বজনদের অভিযোগ, সরকারিভাবে র‍্যাবিস আইজি টিকার পর্যাপ্ত বরাদ্দ না থাকায় বাজার থেকে চড়া দাম দিয়ে (এক হাজার ২শ টাকা) কিনতে হচ্ছে। নিম্নবিত্তের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে থাকায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা দেয় নানা বিড়ম্বনা। ফলে বাধ্য হয়ে অনেকেই টিকা না নিয়ে ফিরে যাচ্ছেন।

কুকুরের ভয়ে নিরাপদে বিদ্যালয়েও যেতে পারছে না স্কুলগামী শিশুরা। সব অলি-গলিতেই কুকুরের সরব উপস্থিতি বিদ্যমান। তবে, জেলা কিংবা পৌরসভায় কুকুরের সংখ্যা কী হারে বেড়েছে তার কোনো পরিসংখ্যানও নেই পৌরসভা কিংবা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কাছে।

সদর হাসপাতালে টিকা নিতে আসা পৌর এলাকার নিলিমা আকতার (১৪) জানায়, বাড়ি থেকে বিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে হঠাৎ একটি কুকুর এসে কামড় দেয়। পায়ের ক্ষত দেখিয়ে সে বলে, এই ক্ষতর কারণে আমি ১৫ দিন বিদ্যালয়ে যেতে পারিনি। এছাড়া কুকুরের উপদ্রবে ভয়ে অন্য সহপাঠীরাও ঠিকমতো বিদ্যালয়ে যাচ্ছে না বলেও জানায় সে।

এ ব্যাপারে কথা হলে সদর আধুনিক হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ মনিনন্দ্রনাথ জানান, ‘কোনো-কোনো দিন শতাধিক কুকুর-বেড়ালের কামড়ে আহত মানুষকে র‍্যাবিস ভ্যাকসিন (টিকা) ও র‍্যাবিস আইজি (টিকা) দিতে হয়।’ এ সময় কুকুর নিধনে নিষেধাজ্ঞা থাকায় এমনটি হচ্ছে বলেও দাবি করেন তিনি।

বিষয়টিতে সিভিল সার্জন ডা. শ্যামল কৃষ্ণ হাওলাদার বলেন, ‘সরকারি নির্দেশে কুকুর নিধন বন্ধ রয়েছে। তবে, কুকুরের কামড়ে আক্রান্ত রোগীদের জন্য হাসপাতালে পর্যাপ্ত পরিমাণে র‍্যাবিস ভ্যাকসিন মজুদ রয়েছে। ভ্যাকসিন সংকটের কোনো কারণ নেই।’

এ দিকে, কুকর নিধনের ব্যাপারে ঝালকাঠি পৌরসভার প্যানেল মেয়র মাহবুবুজ্জামান স্বপন জানান, ‘সরকারি নির্দেশনা না পাওয়া পর্যন্ত কুকুর নিধনে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া যাবে না। এর আগে সরকারিভাবে রাজধানীর মহাখালী থেকে একটি টিম এসে কুকুর নিধন করত। তারা কুকুর প্রতি ৪০ টাকা করে নিত। এরপর একটি পরিবেশবাদী সংগঠনের উচ্চ আদালতে রিটের পরিপ্রেক্ষিতে কুকুর নিধন বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়। পরবর্তীতে জলাতঙ্ক রোগের প্রতিষেধক হিসেবে কুকুরকে ভ্যাকসিন বা টিকা দেওয়া হয়েছিল। বর্তমানে সেটিও বন্ধ রয়েছে।’

এ ব্যাপারে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সোহেল আলম খান বলেন, ‘কুকুরের টিকার বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করে (জলাতঙ্ক প্রতিষেধক) জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। আমরা শুধু টেকনিক্যাল সাপোর্ট (কারিগরি সহায়তা) দিয়ে থাকি।’ কী কারণে কুকুরকে জলাতঙ্ক প্রতিষেধক টিকা দেওয়া বন্ধ রয়েছে সে বিষয়ে কিছু বলতে পারেননি তিনি।

তিনি জানান, ‘কুকুরকে ধারালো কিছু দিয়ে আঘাত করলে সেখানে কেটে গিয়ে ক্ষতর সৃষ্টি হয়। বেওয়ারিশ কুকুরকে চিকিৎসা না করানোর ফলে ওই ক্ষত থেকে সৃষ্টি হয় পচন যা থেকে ধীরে ধীরে দুর্গন্ধ ছড়ায়। আমাদের পর্যাপ্ত জনবল না থাকায় ওই সব রোগাক্রান্ত কুকুর ধরে চিকিৎসার আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছে না।’ এ ব্যাপারে যদি কেউ তাদের সহায়তা করেন তবেই তারা ওই সব রোগাক্রান্ত কুকুরের চিকিৎসা সেবা দিতে পারবেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button